আফগানদের ৫৪৬ রানে হারিয়ে রেকর্ড জয় বাংলাদেশের

ঢাকা টেস্টে মিরপুরের হালকা ঘাসের উইকেটে চতুর্থ দিনে পেসারদের দাপটে লণ্ডভন্ড আফগানিস্তান শিবির। একদিন হাতে রেখে ৫৪৬ বিশাল ব্যবধানে জয় তুলে নিলো লিটন দাসের দল। ব্যাটারদের দারুণ নৈপুণ্য এবং বোলারদের দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের এতবড় জয়ের দেখা পেলো বাংলাদেশ দল। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এই জয় তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়ের রেকর্ড। ৬৭৫ রানে জিতে প্রথম স্থানে আছে ইংল্যান্ড। ১৯৩৪ সালের পর এই প্রথম বাংলাদেশ দল টেস্টে ক্রিকেটে ৫০০ রানের বেশি ব্যবধানে জয় পেলো।

এর আগে ২২৬ রানের জয়ই ছিল টাইগারদের সবচেয়ে বড় জয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে প্রায় দেড়যুগ আগে ২০০৫ সালে এই জয় পায় বাংলাদেশ।

শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিনে পেসারদের দাপট। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন তাসকিন আহম্মেদ, শরিফুল ইসলাম ও ইবাদাত হোসেন। এক সেশনেই আফগানদের গুঁড়িয়ে ৫৪৬ রানের রেকর্ড জয় পেয়েছে লিটন দাসের দল।

বাংলাদেশের হয়ে ৪ উইকেট শিকার করে ইনিংস সেরা বোলার তাসকিন। দুই ইনিংসে মিলিয়ে নামের পাশে ৫টি করে উইকেট যোগ করেছেন শরিফুল ইসলাম এবং এবাদত হোসেন।

প্রথম ইনিংসে উইকেট ছিল না তাসকিন আহমেদের। বিষয়টা বেমানানই। তবে দ্বিতীয় ইনিংসেই স্বরূপে ফিরেছেন। আফগান শিবিরে একাই ধস নামালেন তাসকিন। একে-একে তাসকিন তুলে নিলেন ৪ উইকেট। এতেই ৬৬২ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় ১১৫ রানে থেমেছে সফরকারীরা।

তৃতীয় দিনের ২ উইকেটে ৪৫ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেছিল আফগানিস্তান। পাহাড়সম লক্ষ্যের চাপ এদিনও তাদের ব্যাটে ফুটে ওঠেছে। আর সকাল বেলা উইকেট থেকে যেটুকু বাড়তি সুবিধা নেয়ার তার সবটাই নিয়েছেন বাংলাদেশি পেসাররা। চতুর্থ দিনে সাফল্যের দেখা পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে মাত্র ১৫ বল।

চতুর্থ দিনের প্রথম সাফল্য আসে পেসার ইবাদত হোসেনের হাত ধরে। দুর্দান্ত লাইন। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে তেমন কিছু করার ছিল না নাসির জামালের। অফ স্টাম্পে গুডলেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা বলে শুধু খোঁচাই দিতে পারলেন নাসির। দিনের ১৫তম বলে প্রথম আঘাত করলেন ইবাদত।

পরের উইকেটের জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশের। শরীফুলের বলে ফিরতে হলো আফসার জাজাইকে। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা বলটিতে এজড হয়েছেন আফসার, ক্যাচ গেছে তৃতীয় স্লিপ থেকে একটু সরে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজের কাছে। আফসার ফিরেছেন ১২ বলে ৬ রান করে, আফগানিস্তান চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে ৬৫ রানে।

চতুর্থ দিনে প্রথম সিশনে শরীফুলের দ্বিতীয় আঘাত। মিডল স্টাম্পে পিচ করা বাউন্সার লাইন ধরে রেখে বেরিয়ে যাচ্ছিল অফ স্টাম্প দিয়ে। ব্যাট এগিয়ে খোঁচা মারেন বাহির শাহ। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। বল চলে যায় তৃতীয় স্লিপে দাঁড়ানো তাইজুল ইসলামের হাতে। ১৩ বলে ৭ রান করে আউট অভিষিক্ত বাহির। শেষ দিকে জহির খান রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে মাঠ ছাড়লে জয় নিশ্চিত হয় টাইগারদের।

অন্যদিকে, একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলছিলেন ওয়ানডাউনে নামা রহমত শাহ। দলীয় ৯১ রানে তাকে তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। ৭৩ বলে ৩০ রান করেন আফগান ব্যাটার। নিজের পরের ওভারে তাসকিন পান করিম জানাতের উইকেটও। জানাত ১৮ বলে করেন ১৮ রান। খুব বেশি রান তুলতে না পারলেও আমির হামজা ও ইয়ামিন আহমাদজাই মিলে উইকেটে খানিকটা সময় কাটিয়ে দেন। আমিরকে ফিরিয়ে তাদের জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ২১ বলে ৫ রান করেন আফগান স্পিনার। তাসকিন নেন ইয়ামিনের উইকেট।

মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিন ৪ উইকেটে ৪২৫ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। তাতে ৬৬২ রানের বিশাল টার্গেট পায় সফরকারী দল। এদিন সেঞ্চুরি খরা কাটান দেশের একমাত্র টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটার মুমিনুল হক। মুমিনুলের মতো এ ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের ইনিংসে ১৪৬ রান করা ব্যাটার এ ইনিংসে করেন ১২৪ রান। লিটন কুমার দাসের ব্যাট থেকে আসে ৬৬ রান। রানআউটের শিকার হওয়া জাকির হাসান করেন ৭১ রান। আফগানদের হয়ে ২ উইকেট পান জহির খান। একটি উইকেট নেন আমির হামজা।

এর আগে প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রান করেছিল টাইগাররা। শান্তর সেঞ্চুরির পাশাপাশি ৭৬ রান করেন মাহমুদুল হাসান জয়। বাকিদের মধ্যে মেহেদী হাসান মিরাজ ৪৮, মুশফিকুর রহিম ৪৭ ও মুমিনুল ১৫ রান করেন। জবাবে প্রথম ইনিংসে ১৪৬ রানে অলআউট হয় আফগানিস্তান।

[১] [২] [৩]