সিসিক নির্বাচন : মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুলের ২১ দফা ইশতেহার ঘোষণা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২৩, ৮:১৪ অপরাহ্ণ

পরিকল্পিত নগর গড়ার পাশাপাশি সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে (সিসিক) সেবামূলক ও জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে চান সিসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ও সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুল। সিলেট সিটি কর্পোরেশনকে মেয়র নির্বাচিত হলে সিলেট নগরকে সাজাতে ইশতেহারে যে ২১ দফা অঙ্গীকার করেছেন তাতে এমন প্রত্যয়ই ব্যক্ত করেন তিনি। রোববার বিকেল তিনটায় নগরীর কুমারপাড়ায় লাঙ্গল প্রতীকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন। এসময় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্ঠা আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সিলেট জেলা শাখার সভাপতি সাইফুদ্দিন খালেদ, সিলেট মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আব্দুস শহিদ লস্কর বশির সহ জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, সুরমা নদীর ওপারে দক্ষিণ সুরমায় আমার জন্মভিটা। এই নগরীর একজন নাগরিক হিসেবে এই নগরকে ঘিরে আমার অনেক স্বপ্ন, অনেক আকাক্সক্ষা-প্রত্যাশা রয়েছে। যেভাবে এই নগরকে একটি পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তোলা যেত সেখানে ঘাটতি রয়ে গেছে। তাই আমি আমার নগরকে একটি পরিকল্পিত ও আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে মেয়র পদে নির্বাচন করছি।
ইশতেহারে নজরুল ইসলাম বাবুল অঙ্গীকার করেন নির্বাচিত হলে সিলেটকে একটি নাগরিকবান্ধব, শিল্পবান্ধব, যানজটমুক্ত, পরিবেশবান্ধব, জলাবদ্ধতামুক্ত, সুপরিকল্পিত আবাসনের নগর হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেবেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, সিসিককে সর্বজনীন এবং দায়িত্বশীল একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে করপোরেশনের সঙ্গে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। পাশাপাশি তিনি নগর ভবনকে আধুনিক ও ঐতিহ্যের মিশেলে একটি দৃষ্টিনন্দন নগর ভবনে রূপান্তরেরও প্রতিশ্রুতি দেন।
নগরের সেবামূলক খাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হবে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, এজন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেওয়া হবে। নগরবাসী কাক্সিক্ষত সুফল উপহার দিতে অন্তত সামনের শত বছর মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি। এক্ষেত্রে ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি থেকে নিরাপদ থাকার বিষয়টিও কঠোরভাবে নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্ব দেন। সিটি করপোরেশনের কর ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নজরুল ইসলাম বাবুল তার ইশতেহারে বলেন, অযৌক্তিক হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়ন করা হবে। পাশাপাশি নিম্নবিত্ত ও বস্তিবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করার প্রতিশ্রুতিও দেন নজরুল ইসলাম বাবুল। তিনি বলেন, বস্তিগুলোকেও উন্নত সুযোগ-সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়ার অঙ্গীকার উঠে আসে নজরুল ইসলাম বাবুলের ইশতেহারে। হবে। ইশতেহারে তিনি ঘোষণা দেন নির্বাচিত হলে ওয়ার্ডভিত্তিক উন্নয়ন ও সন্ত্রাসবিরোধী নাগরিক কমিটি গঠন করা হবে। যা এলাকার উন্নয়ন ও শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে এই কমিটি কাজ করবে।

ওয়ার্ডগুলো বিদ্যমান সমস্যার পাশাপাশি নতুন হওয়া ১৫টি ওয়ার্ডের পরিকল্পিত উন্নয়নে প্রকল্প নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, নগরীর বর্ধিত এলাকায় পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিদ্যমান রাস্তাঘাটের সংস্কার ও নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হবে।
বিদ্যমান পানীয় জলের সমস্যা আরও প্রকাট হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করে এই সমস্যা সমাধানে একটি কার্যকর প্রকল্প গ্রহণের প্রতিশ্রুতিও দেন লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। পাশাপাশি বর্জ্য সমস্যার সমাধানে তিনি পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বর্জ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থাগ্রহণের কথাও বলেন। নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কারে পাশাপাশি নগরের খাল ও ছড়া পুনঃখননের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সুরমা নদী খননের ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাই করে সরকার যাতে সুরমা নদী খননের উদ্যোগ নেয় তার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কর্পোরেশনের উদ্যোগে শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের ভূমিকা স্মরণ করে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য নজরুল ইসলাম বাবুল নাগরিক সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রবাসীদের অগ্রাধিকার প্রদানের নিশ্চয়তা দিয়ে বলেন, তাদের জন্য আলাদা সেল প্রতিষ্ঠা করা হবে।

নজরুল ইসলাম বাবুল শিশু ও জনবান্ধব নগর গড়ে তুলতে পর্যাপ্ত পার্ক প্রতিষ্ঠা ও দিঘী সংস্কার ও উদ্ধার, খেলার মাঠ প্রতিষ্ঠা, পাঠাগার প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তার ইশতেহারে। পরিকল্পিত বৃক্ষায়নের মাধ্যমে নগরকে সবুজ করে তুলতেও উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তিনি। পাশাপাশি নারীবান্ধব নগর গড়তে কর্মজীবী মায়েদের জন্য সন্তানদের দেখাশুনার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠা, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারীদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টারের ব্যবস্থা ও কর্মজীবী নারীদের স্বল্প খরচে থাকার সুবিধার্থে হোস্টেলের ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল। শিক্ষার ও কর্মসংস্থানের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে নজরুল ইসলাম বাবুল একাধিক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন। যেখানে গরীব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করা হবে বলেও অঙ্গীকার করেন তিন। শিক্ষার পরিবেশ ও কর্মসংষ্থান তৈরির মাধ্যমে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম বাবুল।

আধ্যাত্মিক নগরী সিলেটের ভাবমূর্তি রক্ষা করে ধর্মীয় ও সামাজিক সম্প্রীতি রক্ষায় সিটি করপোরেশন দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবে বলে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম বাবুল সিলেটের ইতিহাস ঐতিহ্য ও মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও তুলে ধরতে জাদুঘর ও আর্ট গ্যালারি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি পর্যটনে সিলেটের অপার সম্ভাবনাকে মেলে ধরতে ও সিলেটের সংস্কৃতির বিকাশে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে নজরুল ইসলাম বাবুল সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেন তার নির্বাচনী ইশতেহারে।

সিলেট নগরীকে একটি ডিজিটাল নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিটি ওয়ার্ডকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি তরুণদের জন্য আইটি ক্ষেত্রে প্রকল্প গ্রহণ করার আশ্বাস দেন নজরুল ইসলাম বাবুল। যাতে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থান হয়।
সিসিককে সত্যিকারের একটি সেবামূলক ও জনকল্যাণমুখী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠায় করপোরেশনে সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, নির্বাচিত হলে ১০০ দিনের একটি কর্মসূচি হাতে নেবো এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নগর উন্নয়নে সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, একটি পরিকল্পিত নগরের ক্যানভাস অনেক বড়। শুধু রাস্তাঘাট আর ড্রেন করলেই নগরটি পরিকল্পিত হয়ে উঠে না। সিলেট নগরের এখনও অনেক সমস্যা রয়েছে। যানজট, জলাবদ্ধতা ছাড়াও অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে সিটি করপোরেশনের আয়তন অনেক বেড়েছে। ২৭টি ওয়ার্ড থেকে হয়েছে ৪২টি ওয়ার্ড। বর্ধিত এলাকায় অনেক সমস্যা রয়েছে। অনেক পিছিয়ে রয়েছে নতুন এলাকাগুলো। সুতরাং এই নগরকে যে বা যারা ভালোভাবে জানে, বুঝে তাঁর হাতেই নগর উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। আমি এই শহরেরই সন্তান। সুরমার এপার-ওপার দুপারই আমার চেনা। এই নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে আমার পদচারণা রয়েছে। নগরবাসীর কাছে আমার আহ্বান আপনারা যেন সবকিছু বিবেচনায় রেখে লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেন। আমার বিশ্বাস নগরবাসী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবেন না।

সংবাদ সম্মেলনে নজরুল ইসলাম বাবুল অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। প্রশাসনকে ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিদিন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এমনকি নানা কূটকৌশলের ছক কষে সরকারদলীয় প্রার্থী জয়ী হতে চাইছেন। কিন্তু আমার বড় শক্তি আমার নগরবাসী ও ভোটারবৃন্দ। আপনারাই এর প্রতিবাদ করবেন আপনাদের শক্তিশালী রায়ের মাধ্যমে। সিলেটের মানুষ কোনোদিন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়নি। তিনি বলেন, আমি কথা দিচ্ছি, আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করলে সিলেটকে একটি আধুনিক মহানগর হিসেবে গড়ে তুলব। বিজ্ঞপ্তি

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...