সশস্র সংগ্রামের প্রধান সংগঠক সিরাজুল আলম খান’র স্মরণে লন্ডনে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশের রূপকার , নিউক্লিয়াস ও বি এল এফ এর প্রতিষ্ঠাতা , সশস্র সংগ্রামের প্রধান সংগঠক, আমাদের রাজনৈতিক তাত্ত্বিক সিরাজুল আলম খান (দাদা)র স্মরণে ২২শে জুন বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ছয়টায় লন্ডনের একটি স্থানীয় হলে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এই ব্যতিক্ৰমী সভায় ছিল না কোনো সভাপতি, না ছিল কোন মঞ্চ।

সিরাজুল আলম খান তাঁর হাসপাতালের শয্যায় যে গানটি বারবার শুনতে চাইতেন সেটি হলো ‘ধন ধান্য পুষ্পে ভরা ‘ এই গান এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে সভার সূচনা করেন তাঁর একান্ত আপন ডাঃ নাজমা ঝুমা. মুখপাত্রের দায়িত্ত্ব পালন করেন যুক্তরাজ্য জে এস ডি’র’ সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আলহাজ ছমীর উদ্দীন । সিরাজুল আলম খান এবং সকল দেশ প্রেমিকের আত্মত্যাগের জন্য পবিত্র কোরান তেলাওয়াত ও দোয়া করা হয়।

সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পরেন বেতার বাংলার সিইও নাজিম চৌধুরী , অন্য প্লাটফর্মে রাজনীতি করলেও দাদার অন্যতম একজন আপনজন মোঃ মতিউর রহমান তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়ে কথা বলেন. এডভোকেট শিব্বির আহমেদ বলেন তাঁর দর্শন দিয়ে তিনি আমাদের জাতীয় জীবনে সবসময় প্রাসঙ্গিক থাকবেন. আইনজীবী নুরুল ইসলাম এমবিই দাদার রাজনৈতিক সাহিত্যের মূল্যায়ন করেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসন বলেন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দাদার ভবিষ্যৎবাণী অক্ষরে অক্ষরে প্রতিফলিত হচ্ছে. সিরাজুল আলম খান এর রাজনৈতিক জীবন ও দর্শন নিয়ে প্রাণবন্ত বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নিউক্লিয়াস এর সদস্য সৈয়দ মাবুদ , কাউন্সিলর শেরওয়ান চৌধুরী , কাউন্সিলর সাদ চৌধুরী , জাসদের বাবুল তালুকদার , রেদওয়ান খান , জনাব সোলায়মান. উপস্থিত বক্তারা তাঁর চিকিৎসা বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন. আরো উপস্থিত ছিলেন মাহমুদুর রহমান, নারী নেত্রী সৈয়দা সুলতানা শিখা, শাহনুর, নাজিয়া সুমি, মিখাইল সার্চ সহ প্রমুখ ।

সিরাজুল আলম খান দাদা বলতেন ‘I’m homely but not ordinary ‘. ফারদিয়া রাজা চৌধুরী, দেওয়ান আশরাফী জয়ন্ত ও মাহের আফরোজ নিশি দাদার সাথে কাটানো তেমনই কিছু অসাধারণ পারিবারিক মুহূর্তের স্মৃতি চারণ করেন. পৌত্রী ফাইজা ও ফাবিয়া খান বলেন – ‘রাজনীতিবিদ দাদা সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যেভাবে যোগাতেন ঠিক তেমনি ছেলেমানুষী আনন্দে তাদের দিনগুলো ভরিয়ে রাখতেন’।

সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন ডাঃ সানাউল্লাহ ( জিপি , লন্ডন ) , প্রফেসর আহমেত ওজগুল ( সাইপ্রাস), ডাঃ মেহমেত ইয়ালসানজিন (সাইপ্রাস ). তাঁরা জানান , তিনি একজন মহান ব্যক্তিত্ব , চিন্তক . তাঁর চিকিৎসার সাথে জড়িত হতে পেরে তাঁরা নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন ।

সভার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল স্থিরচিত্র প্রদর্শনী , দাদার বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ ও দেশাত্মবোধক গান. মুক্তযুদ্ধ চলাকালীন ছবি , তাঁর লন্ডনে থাকাকালীন বিভিন্ন পরিবারের সাথে কাটানো মুহূর্ত স্মরণ সভায় অন্য মাত্রা যোগ করে . ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে ‘ গানটির সাথে সাদেক আহমেদ চৌধুরীর করা দাদার একটি ভিডিও উপস্থিত সকলকেই বেদনা বিধুর করে তোলে. প্রজেকশন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আশিস মিত্র, সাদেক আহমেদ চৌধুরী ও ডাঃ নাজমা ঝুমা।

সিরাজুল আলম খানের ভ্রাতুষ্পুত্র পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন. মঞ্চ সজ্জা ও সভার সার্বিক তত্ত্বাবধানে থেকে অনুষ্ঠান সুচারু ভাবে সম্পন্ন করতে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন তোফায়েল চৌধুরী মুক্তা । সভা পরিচালনা করেছেন ডাঃ নাজমা ঝুমা।

স্মরণ সভার পরিকল্পনাতে সহযোগিতা করেছেন বাংলাদেশ থেকে এলিজা খান, অভিলাষ খান ও মোশারফ হোসাইন মন্টু, শ্যামলিমা লিপি (নিউ ইয়র্ক ), মিখাইল সার্চ (লন্ডন) এবং আপ্যায়নে ছিলেন প্রীতি রেস্টুরেন্ট এর স্বত্বাধিকারী জনাব আজমল হোসাইন ।

উপস্থিত বক্তারা সিরাজুল আলম খান দাদার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার অঙ্গীকার করেন। শেষে এক মিনিট নীরবতা ও জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনন্য এক ব্যক্তিত্ব সিরাজুল আলম খান এর শোকসভার সমাপ্তি হয়।

[১] [২] [৩]