মন্তব্য প্রতিবেদন : শান্তির কোন বিকল্প নেই মনিপুর ভ্রমণ শেষে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি

ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী গেল শুক্রবার দাঙ্গাকবলিত মনিপুর রাজ্যেরে কয়েকটি আশ্রয় শিবির পরিদর্শন শেষে বলেছেন যে মণিপুরে শান্তি দরকার এবং ত্রাণ শিবিরগুলিতে ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, এই সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকারকে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে হবে। ইম্ফল থেকে বার্তা সংস্থা আইএএনএস জানিয়েছে তিনি কয়েকটি আশ্রয় শিবির পরিদর্শন করেন এবং আশ্রীতদের সাথে কথা বলেন সম্প্রতি মনিপুরে জাতিগত দাঙ্গার কারনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। হাজার হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে প্রাণ রক্ষার্থে শিবির গুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। রাজ্যে অচলাবস্থা বিরাজ করেছে।

মণিপুরে সহিংসতার জন্য দুই দিনের সফরে থাকা কংগ্রেস নেতা শুক্রবার রাজভবনে রাজ্যপাল অনুসুইয়া উইকির সাথেও দেখা করেছেন। এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে.সি. ভেনুগোপাল এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যের এআইসিসি ইনচার্জ অজয় কুমার। রাজ্যপালের সাথে দেখা করে রাহুল গান্ধী বলেছেন তিনি এবং তাঁর দল রাজ্যে শান্তি ও স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। “আমি প্রথমে শান্তি ফিরিয়ে আনতে চাই। আমি কয়েকটি ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেছি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করেছি। এই ত্রাণ শিবিরগুলিতে ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ঘাটতি রয়েছে প্রচুর , সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, ” রাহুলগান্ধী রাজভবনের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। তিনি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে দেখা করেছেন। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতিও বলেছেন সহিংসতায় কোনও ফল হবে না৷ রাহুল গান্ধি বলেন “আমি সকল মতের মানুষ , সব সম্প্রদায় এবং নেতাদের কাছে মণিপুরে শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ করেছি। “

পরিদর্শন শেষে এক টুইট বার্তায় রাহুল গান্ধি বলেন “আমি মণিপুরের মানুষের বেদনা ভাগ করে নিতে চাই । এটি একটি ভয়াবহ ট্রাজেডি। এটি মণিপুরের সকল জনগণ এবং ভারতের জনগণের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক। আমি ক্যাম্পে গিয়েছি এবং সব সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে দেখা করেছি। আমি সরকারকে একটি কথা বলব যে ক্যাম্পে মৌলিক সুযোগ-সুবিধাগুলি উন্নত করা দরকার। খাদ্য উন্নত করা প্রয়োজন। ওষুধ সরবরাহ করতে হবে। শিবির গুলো থেকে এমন অভিযোগ এসেছে। তারা খাদ্য এবং ওষুধ পাচ্ছেনা।
“আমি মণিপুরের সকলের কাছে আবেদন করব যে আমাদের শান্তি দরকার। সকলের কাছে আমার জোরালো আবেদন হিংসা বিদ্ধেশ কিছুই দিতে পারেনা। একমাত্র উপায় হচ্ছে শান্তি এবং প্রত্যেকেরই এখন শান্তির কথা বলা উচিত এবং শান্তির পথে অগ্রসর হওয়া উচিত।

আমি এখানে আছি এবং এই রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যে কোনো উপায়ে সাহায্য করব। আমি মণিপুরের সমস্ত মানুষকে ভালবাসি, আবারও যেন আমরা একটি ভয়ানক ট্র্যাজেডির দিকে অগ্রসর না হয়। এবং আমাদের এখানে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।” আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে অবশ্যই শান্তি ফিরে আসবে। মণিপুর পুলিশের একটি দল তার সফরে বাধা দেওয়ার একদিন পর, কংগ্রেস নেতা শুক্রবার বিষ্ণুপুর জেলার মইরাং-এ ত্রাণ শিবির পরিদর্শন করেন , সেখানে তিনি জাতিগত সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সাথে দেখা করেন।মণিপুর রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি কেশম মেঘচন্দ্র সিং জানিয়েছেন যে রাহুল গান্ধি হেলিকপ্টারে করে মইরাং গিয়েছিলেন এবং ইম্ফল ফিরে আসার পর, তিনি ১০জন সমমনা দলের নেতা এবং সুশীল সমাজের সদস্যদের সাথে দেখা করবেন।তিনি ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিলের (ইউএনসি), প্রভাবশালী মহিলা সংস্থা, বিশিষ্ট নাগরিক এবং বুদ্ধিজীবীদের সাথেও আলোচনা করেন।

বৃহস্পতিবার তার আগমনের পরে, কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা চুরাচাঁদপুর এবং ইম্ফল পশ্চিম জেলার ত্রাণ শিবিরগুলি পরিদর্শন করেছেন, যেখানে বাস্তুচ্যুত লোকেরা সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে আশ্রয় নিয়েছে দাঙ্গায় ১২০ জন মারা গেছে, সহিংসতায় ৪০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে । সেখানে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ভয়াবহ। ৩মে বিস্ফোরণের পর থেকে বিপুল দোকানপাট, বাড়ি, যানবাহন এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ও লুটপাটের ঘটনা চলতে থাকে ।
“উভয় জেলাতেই, রাহুল গান্ধী ধৈর্য সহকারে দুস্থ মানুষের কষ্টের কথা শুনেছেন,” সিং মিডিয়াকে বলেছেন, কংগ্রেস নেতা ইম্ফলের ত্রাণ শিবিরে ডিনার করেছেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার যখন রাহুল গান্ধী সড়কপথে বিষ্ণুপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন, তখন আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা উল্লেখ করে বিষ্ণুপুরের এসপি হেইসনাম বলরাম সিংয়ের নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশাল দল ইম্ফল থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে তার কনভয়কে থামিয়ে দেয়।

নারী-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বিষ্ণুপুর থানার সামনে মনিপুর পুলিশ টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে বেশ কয়েকজন আহত হন , রাহুল গান্ধীকে সহিংসতায়-আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাথে দেখা করতে দেওয়ার জন্য স্লোগান দিচ্ছিল স্থানীয়রা। রাহুল গান্ধী এক টুইট বার্তায় বলেন: “আমি মণিপুরের আমার সমস্ত ভাই ও বোনদের কথা শুনতে এসেছি। সব সম্প্রদায়ের মানুষ আমাকে স্বাগত জানিয়েছে এবং তারা সকলেই আমাকে ভাল বাসে । এটা খুবই দুঃখজনক যে সরকার আমাকে এখানে আসতে এবং আক্রান্তদের সাথে কথা বলতে এবং দেখা করতে বাধা দিচ্ছে। মণিপুরের নিরাময় প্রয়োজন। শান্তি আমাদের একমাত্র অগ্রাধিকার হতে হবে।”
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা মণিপুর পুলিশের পদক্ষেপের নিন্দা করেছেন। কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী এন. বীরেন সিংয়ের নির্দেশে মণিপুর পুলিশ রাহুল গান্ধীকে বিষ্ণুপুর জেলায় যেতে বাধা দেয়।

[১] [২] [৩]