ট্রাভেলারের ছদ্ম‌বে‌শে ইয়াবা পাচার

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২৩, ৮:২৫ অপরাহ্ণ

রাজধানীর গাবতলী, রমনা ও গুলশানসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চা‌লি‌য়ে ৬ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা মূ‌ল্যের ৪১ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তার অভিযুক্তরা হলেন, সাধন তনচংগ্যা (২৫), ফাতেমা (৩৫), মোছা. মমিনা বেগম (২০), মো. ইয়াকুব আলী (৪০) ও মো. নাঈম (২৪) ও অজ্ঞাত একজন।

বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পৃথক ৩টি অভিযান চা‌লি‌য়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো কার্যালয় (উত্তর)।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো কার্যালয়ে (উত্তর) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএনসির ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, গোপন তথ্য পেয়ে রাজধানীর গাবতলী এলাকায় বৃহস্পতিবার অভিযান চালিয়ে সাধন তনচংগ্যাকে নারীদের পেটিকোটের ভেতরে বিশেষভাবে তৈরি পকেটে ১১ হাজার পিস ইয়াবাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার সাধন জানান, টেকনাফ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে প্রথমে রাঙ্গামাটি নিয়ে যান। সেখান থেকে একটি পরিবহনে গাবতলী এলাকায় অবস্থানরত উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের মাদক কারবারির কাছে সরবরাহ করেন।

চাঁদপুর থেকে আসা একটি ইয়াবা চালানের বিষয়ে ম‌জিবুর রহমান পা‌টওয়ারী বলেন, চক্রটির আরেক দুই সদস্য বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে সদরঘাটে আসে। ডিএনসির অপর একটি দল অভিযান চা‌লি‌য়ে ফাতেমা ও মমিনা বেগমকে ৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, তাদের দুজনের বাড়ি টেকনাফে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি ফাঁকি দিয়ে টেকনাফ থেকে প্রথমে ইয়াবার চালান নিয়ে চাঁদপুর অবস্থান করেন এবং প‌রে লঞ্চে করে ঢাকায় আসেন। এ ক্ষেত্রে তারা বাড়তি সতর্কতা হিসেবে লাগেজের ভেতরে বিশেষ কৌশলে চেম্বার করে লুকিয়ে ইয়াবা পরিবহন করেন। একই পদ্ধতিতে তারা একাধিক ইয়াবার চালান ঢাকায় নিয়ে আসেন।

মজিবুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, আমাদের কাছে তথ্য আসে রংপুর কেন্দ্রিক কুখ্যাত মাদক কারবারি ও একাধিক মাদক মামলার আসামী ইয়াকুব আলী দীর্ঘদিন মিরপুর ও উত্তরবঙ্গের রংপুর অঞ্চলে ইয়াবা সরবরাহ করে আসছে। তার মাদক চোরাচালানের কৌশল একটু ভিন্ন। টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে তিনি সরাসরি মাদকদ্রব্য সংগ্রহ ও পরিবহন করে ঢাকায় নিয়ে আসেন। প্রথমে টেকনাফ, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অবস্থান করে স্থানীয় মাদক কারবারিদের কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে সেখানকার হোটেলে মজুত করেন।

তিনি বলেন, ইয়াবার বড় চালান বিভিন্ন কৌশলে তিনি ঢাকায় নিয়ে আসেন। এ জন্য তার রয়েছে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেল। তার সহযোগীরা প্রাইভেটকারে করে প্রথমে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা পর্যবেক্ষণ পরে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর মোটরসাইকেলে ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় আসেন।

তিনি আরও বলেন, মোটরসাইকেলে তিনি ট্রাভেলারের বেশভূষা ধারণ করেন, যাতে সহজে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়া যায়। এ পদ্ধতিতে তিনি বেশ কয়েকটি ইয়াবার চালান নিয়ে আসেন বলে আমাদের কাছে তথ্য ছিল। এসব তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে আমরা দীর্ঘদিন তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে থাকি এবং সর্বশেষ জানতে পারি কক্সবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা নিয়ে মিরপুরের কালশী এলাকায় আসবেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে রমনা ও গুলশান সার্কেলের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় কালশী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।

ডিএনসির এই কর্মকর্তা বলেন, মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে আসলে ২৫ হাজার পিস ইয়াবা ও মোটরসাইকেলসহ ইয়াকুব আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইয়াকুব কক্সবাজারে অবস্থান করে স্থানীয় মাদক কারবারিদের থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে মোটরসাইকেলে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং এ ইয়াবার চালান পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে রংপুরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ৭টি মাদক মামলা রয়েছে।

অপরদিকে, একই দিন সকালে তেজগাঁও সার্কেলের অপর একটি দল ফার্মগেট এলাকা থেকে অপর মাদক কারবারি নাঈমকে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করা হয়েছে।

 

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...