কূটনীতিকদের আচরণে সরকারে অসন্তোষ

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২৩, ১:৫০ অপরাহ্ণ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সমপ্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের তৎপরতায় সরকারের ভেতরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। যা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। শুক্রবার (২১ জুলাই) আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বিদেশিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এসময় জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অতি আগ্রহ নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কিছু ঘটনা ঘটে, কিন্তু সেরকম ঘটনা কি তাদের দেশে ঘটে না? আমাদের এখানে কী হবে সেটা নিয়ে তাদের আগ্রহ বেশি!

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিশ্বরাজনীতিতে গভীর সংকট চলছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নানা রকম মোড় নিচ্ছে বিশ্বরাজনীতি। এখন এই অবস্থায় দেখছি বিশ্বে নেতৃস্থানীয় দেশগুলোর মাথাব্যথা বাংলাদেশ।

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে বনানীর একটি কেন্দ্রে হিরো আলমের ওপর হামলার প্রসঙ্গ ধরে ওবায়দুল কাদের বলেন, বনানীর ঘটনা কে ঘটাল? আমরা কেন ঘটাব? আমরা প্রার্থীকে প্রার্থী হিসেবে দেখি। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই ব্যাপারটা নিয়ে তোলপাড়। আমি বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ হাই কমিশনারকে বললাম, তুমি এই শহরে কতদিন আছ? সে বললো তিন মাস। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কতটি বিশৃঙ্খলা দেখেছ। আসলে বিএনপি নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।

সমপ্রতি বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া বিদেশি প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে কাদের বলেন, সবার সাথে আলোচনা করলাম, তারা কেউই বলল না যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে তারা (বিএনপি) পদত্যাগ করতে বলে। তাহলে আলোচনাটা করবে কার সাথে? তখন (বিদেশিরা) আর কিছু বলেনি। একদফা ঘোষণার পর বিএনপি সারাদেশে ‘সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড শুরু করেছে বলেও মন্তব্য করেন সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের।

তিনি বলেন, আমরা সংবিধান লঙ্ঘন করতে পারি না। আমাদের নির্বাচন আমরা করব, সংবিধান অনুযায়ী করব। একদফা ঘোষণা করার পর থেকে সারাদেশে সহিংসতা শুরু হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের হাই কমিশনার সারাহ কুক সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করলে বৃহস্পতিবার তাকে পাল্টা প্রশ্ন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি জানতে চান, তার দেশে নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন কি না, হাউজ অব কমন্স ভেঙে দেয়া হয় কি না, সেখানে তত্ত্বাবধায়ক নামে কোনো সরকার দায়িত্ব নেয় কি না, কাউকে নির্বাচনে আনতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেয় কি না।

একই দিন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করায় কারও নাম উল্লেখ না করে বিদেশি কূটনীতিকদের এক হাত নিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেছেন, বিদেশিরা নিজেদের এ দেশের সম্রাট মনে করে। গণমাধ্যমে অতি প্রচারের কারণে কূটনীতিকরা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলে ‘মজা পায়’ বলেও মনে করেন মন্ত্রী। শুক্রবার সিলেট জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে সম্মাননা পদক প্রদান অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এমন মন্তব্য করেন মোমেন। তার ভাষায়, পৃথিবীর আর কোথাও রাষ্ট্রদূতরা অ্যাকটিভিস্টদের মতো দল বেঁধে মন্তব্য করে বেড়ায় না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্যকারীদের বয়কট করতে গণমাধ্যমকে ভূমিকা নেয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী।

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৪০ জন মারা গেল। একটা দেশও কথা বলেনি। আমাদের দেশে কে কী করল, সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার। এটি অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ওপর হস্তক্ষেপ, যা ভিয়েনা কনভেশনশনের ধারেকাছেও নেই। বাংলাদেশ দরিদ্র দেশ বলে তারা এটা করে।

ইউরোপে ১১টি দেশের মিশনের পক্ষ থেকে বিবৃতি আসার পর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ কূটনীতিকদের ভিয়েনা কনভেনশনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। এই বিবৃতি সেই চুক্তিবিরোধী মন্তব্য করে কনভেনশন মেনে চলতে অনুরোধও করেছেন তিনি।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...