এমসিএ’র উদ্যোগে কম্যুনিটি অ্যাওয়ার্ড’স সিরিমনি ও গালা ডিনার

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২৩, ১০:৪৬ অপরাহ্ণ

ধর্মীয় সম্প্রীতির উন্নয়ন ও সংরক্ষনে এবং কমিউনিটির বন্ধনকে সুদৃঢ় করনে এ অনুষ্ঠান একটি মাইল ফলক

যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত মুসলিম সম্প্রদায়ের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন এবং সুসম্পর্ক স্থাপন করে মানবিক অধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এমন গুণি ব্যক্তিদের অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান করতে ব্রিটেনের বৃহৎ মুসলিম কমিউনিটি সংগঠন ‘মুসলিম কমিউনিটি এসোসিয়েশন (এমসিএ)’র উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য অ্যাওয়ার্ড’স সিরিমনি ও গালা ডিনার সম্পন্ন হয়েছে। ভিন্ন ধর্মের মানুষ হয়েও যারা মুসলমানসহ সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় নিজেদের অবস্থান থেকে ছিলেন সোচ্চার, তারা মূলত মানবিক অধিকার রক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় অধিকারকে উচ্চাসনে রেখে একে-অন্যের প্রতি সহমর্মী হয়ে একটি সম্প্রীতিপূর্ণ ও গতিশীল সমাজগঠনের জন্য এক অনুকরনীয় অবদান রেখেছেন।এমসিএ এমন মহান ব্যক্তিত্বদের অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তাদের হাতে অ্যাওয়ার্ড’স প্রদান করতে গত ২১ জুলাই শুক্রবার লন্ডন মুসলিম সেন্টারে আয়োজন করে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, কাউন্সিলর,সাংবাদিকসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট্যজনদের উপস্থিতিটিতে অনুষ্ঠিত অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, এমসিএ ভিন্নধর্মের গুনি ও সমাজহিতৈশী ব্যক্তিত্বদের পূরস্কৃত করে যে সম্মান প্রদর্শন করেছে সেটা ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের জন্য একটি অনুপম ও সম্মানজনক দৃষ্টান্ত। ইসলাম যে তাঁর অনুসারীদের শুধু পরধর্মের প্রতি সম্মানের শিক্ষা প্রদান করেনা, বরং সাথে সাথে ইসলাম তাঁর আলোতে আলোকিত অনুসারীদের সাম্য, সম্প্রীতি, সমাজঊন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহন এবং মানবিক মর্যাদা সংরক্ষনে ভূমিকা রাখার শিক্ষা প্রদানেও যে বড় উদাহরণ সেটাই এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানর মাধ্যমে প্রতিফলিত হল।অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তাগণ অ্যাওয়ার্ডস প্রাপ্তদের সমাজের সত্যিকারের হিরো হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তারা ভিন্ন ধর্মকে শুধু সম্মানিতই করেননি বরং মৌলিক মানবিক মূল্যবেধের উন্নয়নের মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও উন্নত সমাজ গঠনে অনন্য অবদান রেখেছেন। তারা তাদের প্রতিটি কাজে ইসলামের প্রতি ও এর অনুসারীদের সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় ছিলেন এক একজন দিকপাল। এমসিএ’র এই সম্মাননা মৌলিক মানবিাধিকার রক্ষায় সোচ্চার মানুষ গুলোকে আর বেশী মানবিক কাজে উৎসাহিত করবে।

অ্যাওয়ার্ডস ও গালা ডিনার অনুষ্ঠানে লন্ডন ছাড়াও যুক্তরাজ্যর বিভিন্ন সিটি থেকে আমন্ত্রিত প্রায় পাঁচশত বিভিন্ন পেশাজীবি ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।

অনুষ্ঠানে পাঁচটি ক্যাটাগরিতে মোট ১০টি অ্যাওয়ার্ডস প্রদান করা হয়।কমিউনিটি কোহেশন বা সামাজিক সম্প্রীতি ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন ইস্ট লন্ডন সেন্ট্রাল সিনাগগের প্রেসিডেন্ট লিওন সিলভার এবং রানার্স আপ হিসাবে নির্বাচিত হন ইন্টারন্যাশনাল ডেপোলাপম্যান্ট এজেন্সির সাবেক আন্তর্জাতিক পরিচালক ডেনিস হস, কমিউনিটি এনগেজমেন্ট ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন কমিউনিটির সেভ দ্য চিলড্রেন, চিলড্রেন সোসাইটি ও সোসাইটি অফ ফ্রেন্ডস-এবং ‘সিটিজেন ইউকে’ র প্রতিষ্ঠাতা নীল জেমসন এবং রানার্স আপ হন পপলার ও লাইমহাউস একশন ফর হাউজিং এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সিস্টার ক্রিস্টিন ফ্রস্ট এমবিই, শিক্ষা ও উন্নয়ন ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন জার্নালিস্ট পিটার ওবর্ন্ ওবিই এবং রানার্স আপ হিসেবে নির্বাচিত হন কেটর্স একাডেমির প্রিন্সিপাল জন কেটি মার্শাল, কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার বিভাগে বিজয়ী হন নরউইস সিটি কাউন্সিলের প্রাক্তন কাউন্সিলর ও নিবেদিত সমাজকর্মী ভগান থমাস এবং রানার্স আপ হিসেবে নির্বাচিত হন সেন্ট জন্স বেথনালগ্রিনের রেভারেন্ড প্রিবেন্ডারি অ্যালান গ্রিন, ন্যায়বিচার ও সামাজিক সাম্য ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হন বৃটিশ পলিটিশিয়ান, ব্যারিস্টার এন্ড হিউম্যান রাইটর্স এক্টিভিস্ট ব্যারনেস শামি চক্রবর্তী সিবিই এবং রানার্স আপ হিসেবে নির্বাচিত হন বৃটিশ পলিটিশিয়ান, ইন্টেলিজেন্স এন্ড সিকিউরিটি কমিটি অফ পার্লামেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান ও বৃটেনের সাবেক এটর্নি জেনারেল ডমিনিক গ্রিভ, কেসি, এমপি।

ইমাম আবদুর রহমান এবং ইমাম মুজ্জামিল আহমেদ-এর কণ্ঠে অর্থসহ পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক সুলতান আহমেদ।

মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মাওলানা মুসলেহ ফারাদি’র স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য রোশনারা আলী এমপি, আফসানা বেগম এমপি, টাওয়ার হ্যামলেটেস এর নির্বাহি মেয়র লুৎফুর রহমানের পক্ষে ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর মায়ূম তালুকদার, মুসলিম কাউন্সিল অফ বৃটেনের সেক্রেটারি জেনারেল জারা মোহাম্মদ (এমসিবি), সাবেক সেক্রেটারি ডা: সুজা সাফি, ইসলাম চ্যানেলের সিইও মুহাম্মদ আলী, নরউইচ কাউন্সিলের লিডার মাইক স্টোনার্ড, ইউকে ইসলামিক মিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ড: মুহাম্মদ আরিফ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড.হাসনাত হোসেন এমবিই প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

জনাব মুসলেহ ফরাদী তাঁর বক্তব্যে বলেন, “জীবনে আমরা অনেক ইভেন্টে অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু মুসলিম কমিউনিটির জন্যএই ইভেন্টটা খুবই স্পেশাল। ক্রমবর্ধমান ইসলামফোবিয়া এবং ধর্মীয় বৈষম্যের কারণে বর্তমান পরিবেশ কখনও কখনও ব্যক্তি এবং সংস্থাগুলির আন্তরিক প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে দেয়। সেসব বাধা কাটিয়ে যারা মুসলিম সম্প্রদায়ের সংহতিকে উৎসাহিত করার জন্য কাজ করেছেন এবং সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে সহায়তা করেছেন৷ মুসলিম কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ডস (এমসিএসএ) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মূলত তাদের এ গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি প্রদাণ এবং ভাল কাজের উৎসাহ প্রদানের জন্য।”

জনাব ফারাদী একটি সৌহার্দপূর্ণ সমাজ গঠনে এম সি এ’র ভূমিকা তুলে ধরে বলেন,এই তৃণমূল সংগঠনটি মুসলমানদের মাঝে পারস্পরিক হৃদ্যতা সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁর সুফল বৃহত্তর সমাজে ছডিয়ে দেয়রা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ সংগঠনটি বিভিন্ন উপায়ে সমাজিক কাজে অংশগ্রহণ ও সমাজের মানুষের ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এসব কর্মকাণ্ডকে বেগবান ও উৎসাহিত করার নিমিত্তে যারা ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্টায় সমাজে অবদান রাখছেন, এমন একটি সুন্দর পরিবেশে তাদের প্রতি সম্মান দেখানোটাকে এম সি এ খুব বেশী প্রয়োজন বলে মনে করে। কেননা তাদের সাহসি ও সময়েপযোগী উদ্যোগের মাধ্যমে এক দিকে সমাজ ইসলামোফোবিয়াসহ বহু সামাজিক ব্যাধি থেকে মুক্ত হবে, অপরদিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্য পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস এবং সম্মানের অনুভূতি তৈরি করতে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করবে।

তিনি অনুষ্ঠানে আগত সকলকে স্বাগত জানান এবং ‘মুসলিম কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য, ভলান্টিয়ার, মিডিয়া পার্টনার, ডোনার, স্পন্সরসহ সংশ্লিস্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।

স্বাগত বক্তব্যের পর এমসিএ’র কর্মকান্ডের উপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অতঃপর নির্ধারিত গুণি ব্যক্তিদের মাঝে মুসলিম কমিউনিটি সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড (এমসিএ) প্রদান করা হয়।

এওয়ার্ড প্রদানের পূর্বে চার সদসা বিশিষ্ট বিচারক প্যানেলের চেয়ার, মার্কফিল্ড ইন্সটিটিউট অফ হাইয়ার এডুকেশনের রেক্টর ড. জাহিদ পারভেজ ও তার টিমের পরিচিতির পর বিচারক প্যানেলের চেয়ার ডঃ জাহিদ পারভেজ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

অত:পর এওয়ার্ড গ্রহণকারিদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও চেক তুলে দেন অতিথিবৃন্দ এবং ইস্ট লন্ডন মসজিদ ও লন্ডন মুসলিম সেন্টারের চেয়ারম্যান আইয়ুব খান, এমসিএ’র প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হাবিবুর রহমান, দিলওয়ার হোসেন খান, আতিকুর রহমান জিলু, এমসিএ’র সাধারণ সম্পাদক হামিদ হোসাইন আজাদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক নুরুল মতিন চৌধুরী প্রমুখ।

সমাপনী বক্তব্য রাখেন এমসিএ’র কেন্দ্রীয় জেনারেল সেক্রেটারী ব্যারিস্টার হামিদ হোসাইন আজাদ।তিনি তাঁর বক্তব্যে অনুষ্টানের সফলতার জন্য ব্যবস্থাপনা কমিটি, অতিথিবৃন্দ এবং বিচারকমন্ডলীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ঐতিহাসিক অনুষ্টান ভাল কাজের স্বীকৃতি ও উৎসাহ প্রদানে এক মাইল ফলক হিসাবে কাজ করবে। তিনি এ অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা রক্ষার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “আশা করি আমরা সকলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর সমাজ উপহার দেওয়ার লক্ষ্যে আরো বেশী ভাল কাজ করার অদম্য উৎসাহ নিয়ে এ অনুষ্টান থেকে ফিরে যাব।”

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...