চলতি বছরই চালু হবে চট্টগ্রামের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৫ জুলাই ২০২৩, ২:৫৯ অপরাহ্ণ

চলতি বছরের নভেম্বরেই চালু হচ্ছে চট্টগ্রামের বহুল কাঙ্ক্ষিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রকল্পের ৮০ ভাগেরও বেশি কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এটি চালুর পর লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার পথ যাওয়া যাবে মাত্র ২০ মিনিটে। তবে প্রতিটি যানবাহনকে গুনতে হবে টোল, যা এখনও নির্ধারিত হয়নি।

৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হওয়া এ মেগাপ্রকল্প চালু হলে চট্টগ্রামের নাগরিকরা যাতায়াতে চরম ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবেন। পর্যটন, ব্যবসা বাণিজ্য ও স্থানীয় যোগাযোগে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজ ও সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, পরিকল্পিতভাবে এই প্রকল্পের সুফল আদায় করতে পারলে চট্টগ্রাম বন্দর-কাস্টমস কেন্দ্রিক যোগাযোগ সহজ হবে। বিমানবন্দর যাতায়াত সহজ হওয়া ছাড়াও কর্ণফুলী টানেলের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারগামী যানবাহন চলাচলেও গতি আসবে। এই ফ্লাইওভার ধরে কর্ণফুলী টানেল হয়ে এসব রুটে সহজে যাতায়াত করা যাবে। এতে দীর্ঘ দূরত্বের পথে তিন ঘণ্টার বেশি সময় সাশ্রয় হবে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী। কিন্তু বাণিজ্যিক রাজধানীর সুবিধাগুলো চট্টগ্রামে নেই। ঢাকার পর চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি যানজট হয়। ব্যবসায়িক কাজে ঢাকাসহ বিদেশে যেতে বিমানবন্দর যাওয়ার জন্যও পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বিদেশিরাও চট্টগ্রামে এলে একই ঝামেলায় পড়েন।

তিনি বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ শেষ হলে শাহ আমানত সেতু কিংবা কালুরঘাট এলাকা থেকেও দ্রুততম সময়ে চট্টগ্রাম বিমাবন্দরে যাওয়া যাবে। এরই মধ্যে বহদ্দারহাট-মুরাদপুর, মুরাদপুর-লালখান বাজার দুটি ফ্লাইওভার এদিকের যানজট অনেকটা কমিয়েছে।

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, নগরীর লালখান বাজার থেকে শুরু হয়ে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মিত হচ্ছে। র‌্যাম্প ও লুপ মিলে উড়াল সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য হবে ২০ কিলোমিটার। চার লেনের এই এক্সপ্রেসওয়ের ৫৪ ফুট প্রস্থ রয়েছে। ৯টি এলাকায় ২৪টি র‌্যাম্প (গাড়ি ওঠানামার পথ) থাকবে। নগরীর টাইগারপাস মোড়ে চারটি, আগ্রাবাদ মোড়ে চারটি, বারিক বিল্ডিং মোড়ে দুটি, নিমতলী মোড়ে দুটি, কাস্টমস মোড়ে দুটি, সিইপিজেড মোড়ে চারটি, কর্ণফুলী ইপিজেডের সামনে দুটি, কাঠগড়ে দুটি এবং পতেঙ্গা সৈকত এলাকায় দুটি র‌্যাম্প থাকবে।

চট্টগ্রামের মূল শহর থেকে পতেঙ্গায় অবস্থিত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, কর্ণফুলী টানেলসহ শহরের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোতে যেতে নগরীর লালখান বাজার, টাইগারপাস, দেওয়ানহাট, চৌমুহুনি, আগ্রাবাদ, বারেকবিল্ডিং, কাস্টমস মোড়, ইপিজেড মোড়, সল্টগোলা ক্রসিং পার হতে হয়। এসব পয়েন্টে যানজট নিত্যদিনের ব্যাপার। যানজটে পড়ে অনেক বিমানযাত্রী ফ্লাইট ধরতে না পারার মতো ঘটনাও ঘটে।

নাগরিকদের যানজটের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেয়া, বিমানযাত্রীদের যাতায়াত সহজ করা, পর্যটন খাতকে বিকাশিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়াসহ বেশ কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিডিএ। তিন হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে অনুমোদন পায়। পরবর্তীতে এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে চার হাজার ২৯৮ কোটি টাকা করা হয়।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, উন্নত বিশ্বের শহরগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য বিমানবন্দরের সঙ্গে শহরের সহজ যোগাযোগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার পর চট্টগ্রাম সেই বৈশিষ্ট্য অর্জন করবে। নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল ফ্লাইওভার উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পর পরই ফ্লাইওভারটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। নগরীর যানজট কমাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানান তিনি।

প্রকল্পের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, বর্তমানে প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন সড়কের কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। যেভাবে কাজ চলছে আগামী অক্টোবরের মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েটি গাড়ি চলাচল উপযোগী হবে। বাকি কাজগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। ফ্লাইওভার নির্মাণে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। বর্তমানে সব বাধা কাটিয়ে কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ফ্লাইওভারে উঠা-নামার জন্য ১৪টি র‌্যাম্প নির্মাণ করা হবে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, মূল ফ্লাইওভারের সাথে ১৪টি র‌্যাম্প থাকবে। এসব র‌্যাম্পের মাধ্যমে বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষ ফ্লাইওভারে উঠা-নামা করতে পারবে। বর্তমানে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মূল ফ্লাইওভার চালু করা। মূল ফ্লাইওভার চালু হলে আমরা র‌্যাম্প নির্মাণের কাজ করবো। মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে আমরা এখন র‌্যাম্পের কাজ করছি না।

সূত্র : বাংলাদেশ জার্নাল

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...