চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় বাড়ছে জাহাজে চুরি-ডাকাতি

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৩:১৮ অপরাহ্ণ

হঠাৎ করেই চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় বাণিজ্যিক জাহাজে চুরি-দস্যুতার ঘটনা বেড়েছে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত জেটি ও বহির্নোঙরে ছয়টি জাহাজে চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে বলে বন্দরের তথ্যে বলা হয়েছে। বছর দেড়েক আগেও চট্টগ্রাম বন্দর দস্যুতা বা পাইরেসিমুক্ত ছিল। এতে বেশ স্বস্তিতে ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দর ব্যবহারকারীরা। কিন্তু চলতি বছরে সংঘটিত চুরি-ডাকাতির ঘটনা বাড়ায় হোঁচট খেল সেই সাফল্য।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২১ আগস্ট পর্যন্ত বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙরে অবস্থানরত ছয়টি জাহাজে চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বহির্নোঙ্গরে থাকা জাহাজ এমভি হানিফে, গত ২৪ মে চট্টগ্রাম বন্দরের ডলফিন জেটি-৩ নম্বরে বার্থিংয়ে থাকা ইন্ডিয়ান পতাকাবাহী জাহাজ এমটি সাকসেস এ চুরির ঘটনা ঘটে।

ঘটনার পর জাহাজের মাস্টার জানান, ছয় অপরাধী জোরপূর্বক লম্বা ছুরি নিয়ে জাহাজে উঠে। তারা জাহাজের একটি কক্ষের তালা ভেঙ্গে রুমে ঢুকে ১০ ক্যান রং চুরি করে। ঘটনার পর পর বাংলাদেশ কোস্টগার্ড জাহাজে উঠে তদন্ত শুরু করে। পরে অবশ্য কোস্ট গার্ড বন্দরের স্থল ও জল এলাকার কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে চুরি হওয়া জিনিস উদ্ধার করে।

৭ জুন বহির্নোঙ্গরে এমভি এনসিসি মেসিলা, পরদিন ৮ জুন বহির্নোঙ্গরে এমভি টিম ফোকাস, ৪ জুলাই বহির্নোঙ্গরে এমটি ওরিয়ন এক্সপ্রেস ও এমভি মেলিনা জাহাজে চুরির ঘটনা ঘটে।

এ পরিস্থিতিতে জেটি ও সাগরে অবস্থানরত জাহাজে নজরদারি আরও বাড়াতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ জন্য বন্দরের একটি সেল থেকে ওয়াচম্যান বা পাহারাদার জাহাজে নিয়োগ দেয়ার জন্য শিপিং এজেন্টদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

বন্দরের চিঠিতে চুরি–ডাকাতির তথ্য উল্লেখ করে বলা হয়, এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটলে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে। আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ জন্য বন্দরে আগত জাহাজে বন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়াচম্যান বুকিং সেল থেকে ওয়াচম্যান নিয়োগের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরের সেল থেকে ওয়াচম্যান নিয়োগ দিলে প্রতিটি জাহাজের জন্য প্রতিদিন খরচ হবে ৮৯ থেকে ১০৮ ডলার। কোনো জাহাজ যদি ১৫ দিন বা ১ মাস বহির্নোঙরে থাকে, তা হলে তার খরচ হবে দেড় থেকে তিন লাখ টাকা, যা সহজ বিষয় নয়।

তবে বন্দর যদি নিরাপত্তা জোরদার করতে চায়, তা হলে সেটা নিজস্ব কর্মী দিয়ে করুক। প্রজ্ঞাপন জারি করে মাশুল আদায় করলেও আপত্তি নেই আমাদের। কিন্তু এভাবে বন্দরের ওয়াচম্যান সেল থেকে দিয়ে জোর করে চাপিয়ে দেয়া কোনোভাবেই উচিত নয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরে জাহাজের সংখ্যা নিয়মিত বাড়ছে। নিরাপত্তার স্বার্থে জাহাজে পাহারাদার নিয়োগ দেয়া দরকার। এ জন্যই শিপিং এজেন্টদের বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে।

এদিকে, ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা কয়েক বছর চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা দস্যুতা শুন্য ছিল। তবে ২০২২ সাল থেকে আবার শুরু হয় দস্যুতার ঘটনা। ওই বছরে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় ঘটছে ৩টি ঘটনা। এছাড়া মোংলা বন্দর এলাকায় ঘটেছে ২টি ঘটনা।

সমুদ্রে বিদেশি জাহাজে সংঘটিত দস্যুতা ও চুরির ঘটনা রেকর্ড করা আন্তর্জাতিক সংগঠন রিক্যাপ বাংলাদেশ জল সীমায় ২০২২ সালে মোট ৫টি ঘটনা রেকর্ড করে। যদিও এসব ঘটনায় চুরি যাওয়া অধিকাংশ মালামাল উদ্ধার করে শিপিং এজেন্ট ও জাহাজের ক্যাপ্টেনের কাছে হস্তান্তর করেছে কোস্ট গার্ড।

এরপর চলতি বছরের প্রথম সাত মাসের মধ্যেই ঘটে গেল ৬টি চুরি/দস্যুতার ঘটনা। এতে আবারো ঝুঁকিতে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমা।

উল্লেখ্য, ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ব্যুরোর (আইএমবি) ২০০৬ সালের একটি প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বন্দরকে জলদস্যু আক্রমণের জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে ‘বিপজ্জনক বন্দর’ ঘোষণা করা হয়। ওই বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে দস্যুতার ঘটনা ঘটেছিল ৪৭টি। একের পর এক দস্যুতার ঘটনায় ওই সময়ে পৃথিবীজুড়ে চট্টগ্রাম বন্দরের নেতিবাচক ভাবমূর্তি সৃষ্টি হয়েছিল।

এর ফলে অনিরাপদ মনে করে বিদেশি জাহাজগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আসতে অস্বীকৃতি জানাত। আর যেসব জাহাজ পণ্য নিয়ে বন্দর জলসীমায় পৌঁছাত, তারাও সারচার্জ বা বাড়তি মাসুল আরোপ করত। ফলে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে খরচ বেশি লাগত। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড যৌথ প্রচেষ্টায় একটি কৌশল উদ্ভাবন এবং প্রয়োগের পরই দস্যুতামুক্ত হতে শুরু করে বন্দরের জলসীমা।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...