‘পার্টটাইম’ জবের অফার, গ্রাহকের কোটি টাকা লুট

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ

‘আপনি চাকুরির পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করে বাড়তি আয় করতে পারবেন’-হোয়াটসঅ্যাপে এমন মেসেজ পাঠিয়ে শুরু হয় যোগাযোগ। সরল বিশ্বাসে যারা এমন অফার গ্রহণ করেন তাদের যুক্ত করা হয় টেলিগ্রামে। আর সেখানে পরবর্তী আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে দেওয়া হয় কাজ। যার বিনিময়ে জমা হতে থাকে লাখ লাখ টাকা। আর সেই টাকা উত্তোলনের কথা বলে গ্রাহক থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে কোটি টাকা লুট করে পাচার করা হতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ দুবাইতে।

এবার সেই চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮১৪ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৪টি মোবাইলও জব্দ করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- আল ফয়সাল, আরেফা বেগম ও নিজাম উদ্দিন। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (বন্দর ও পশ্চিম) উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আলী হোসেন।

তিনি জানান, হালিশহর থানার একটি প্রতারণা মামলায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন প্রতারককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়- গ্রেপ্তার আল ফয়সালের ছোট ভাই সম্রাট দুবাই থেকে আউটসোসিংয়ের নামে নিজেদের তৈরি ওয়েবসাইট https://forttunemix.com/#/ Ges https://fortuunemix.com এর মাধ্যমে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে তার মা আরেফা বেগম, ভাই আল ফয়সাল এবং তাদের প্রতিবেশি বেলালদের কাছে জমা করতো।

প্রতারণার শিকার একাধিক ভিকটিম জানায়, মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপে প্রথমে মেসেজ আসে, আপনি চাকরির পাশাপাশি পার্টটাইম কাজ করে ঘরে বসে বাড়তি আয় করতে পারবেন। পরে তাদের কথা বিশ্বাস করে বাড়তি আয়ের জন্য তাদের কথামতো অনলাইন আউটসোর্সিং কাজে যোগ দেয়। ভিকটিমরা টেলিগ্রামে তাদের সাথে ম্যাসেজ আদান-প্রদান করতে থাকে।

প্রতারকরা তাদের পাঠানো ওয়েবসাইটে একটি একাউন্ট খুলতে বলেন এবং তাদের দেওয়া কাজগুলো করলে পেমেন্ট পাবে বলে জানায়। পেমেন্ট উত্তোলনের আগে পর্যন্ত ভিকটিমের একাউন্টে টাকা জমা হতে থাকবে। এভাবে কাজ করতে করতে অল্পতেই ভিকটিমের ওই ওয়েবসাইটের একাউন্টে এক থেকে দুই লাখ টাকা জমা হলে প্রতারক জানায়, আপনি অনলাইনে কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুল করেছেন যার কারণে আপনার কিছু পয়েন্ট কাটা গেছে।

আপনার একাউন্টের জমা হওয়া টাকা তুলতে হলে তাদের প্রি-পেমেন্ট করতে হবে। জমা হওয়া টাকা উত্তোলনের লোভে পড়ে ৬৮ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিলে আবার তাদের কাজে ভুল হয়েছে বলে ১ লাখ টাকা দিতে হবে বলে জানায়। এভাবে ধাপে ধাপে কারো কাছ থেকে ৫ লাখ, কারো কাছ থেকে ১৬ লাখ, কারো কাছ থেকে ২২ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি।

তিনি আরও জানান, চক্রটি পরিচালিত হচ্ছে দুবাই থেকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাংলাদেশিদের একাউন্ট ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র। চক্রের প্রধান হলেন হাটহাজারীর সস্রাট, আরেকজন সাতকানিয়ার মান্নান। তারা দুবাইয়ে বসে নানান নামে ছদ্মবেশ ধারণ করতো। এরপর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভুয়া আউটসোর্সিংয়ের কথা বলে অনলাইনে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়।

সেই হাতানো টাকা তার পরিচিত কারোর একাউন্টে পাঠিয়ে সেটা তার ভাই বা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আবার কোন পরিচিত হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে টাকাগুলো দুবাই নিয়ে যায়। এভাবে দেশের ডলার ক্রান্তিকালে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে।

তদন্তে এক ব্যক্তির গত দুই মাসে একটি একাউন্টে ১ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ও আরেকটি একাউন্টে ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকাসহ কারো একাউন্টে ১৮ লাখ, কারো একাউন্টে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এই প্রতারণা চক্রটি দেশব্যাপী বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন। ইংলিশ পড়তে এবং লিখতে জানে এমন ব্যক্তিদের টার্গেট করে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজের উত্তর দেওয়া থেকে শুরু হয় প্রতারণার যাত্রা।

 

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...