এখনো আটকে আছে রাজধানীর অনেক এলাকার পানি

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬:৪২ অপরাহ্ণ

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত টানা ৬ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবল ঢাকা। এতে গতরাতে জলাবদ্ধতা ও যানজটে অচল হয়ে পড়ে গোটা শহর। ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যানবাহনের চালক-যাত্রীরা। শুক্রবারও দুর্ভোগ কমেনি। নিউমার্কেটসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা এখনও পানিতে থই থই। বিভিন্ন জায়গায় জমে থাকা পানিতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ছে; কোথাও কোথাও আগুন লেগেছে-এমন খবরও পাওয়া যায়। মিরপুরে কমার্স কলেজের পাশে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারাও গেছেন চারজন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর কোথাও কোথাও এখনও কোমর সমান পানি। নিউমার্কেটের ভেতর ও সামনের সড়ক পুরোটাই পানির নিচে ডুবে আছে। নীলক্ষেতের সামনের সড়কে পানি জমে থাকার কারণে তেমন কোনো গাড়ি চলাচল করছে না। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন ফুটপাত ও নিউমার্কেটের ভেতরে থাকা হকারেরা। তাদের অনেকের জিনিসপত্র সব ভিজে গেছে। বর্তমানে সেসব অন্যত্র সরিয়ে নেয়ারও কোনো উপায় নেই।

এছাড়া পানির নিচে এখনো পুরান ঢাকার বংশালের প্রধান সড়ক। অলিগলির কোথাও কোথাও জমে ছিল হাঁটুসমান পানি। ফলে দুর্ভোগে পড়েছে এখানকার বাসিন্দারা। স্থানীয়দের নোংরা পানি মাড়িয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এছাড়া ধানমণ্ডি, মিরপুর কাঁঠাল বাগানেও পানি জমে থাকতে দেখা যায়।

এদিকে, ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিতে পানি জমে চরম দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে ঢাকা কলেজের আবাসিক এলাকায়। পানিবন্দী অবস্থায় আটকে আছেন আটটি ছাত্রাবাসের পাঁচ হাজারেরও বেশি আবাসিক শিক্ষার্থী। এছাড়া রিজার্ভ পানির ট্যাংকও ডুবে গেছে ময়লা পানিতে। ফলে নিরাপদ খাবার পানির সংকটও দেখা দিয়েছে।

দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী মুনজুরুল ইসলাম জয় বলেন, পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত জায়গা না থাকা এবং দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার কারণে পুকুর উপচে দুটি খেলার মাঠ, সড়ক এবং ছাত্রাবাসের করিডোর পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে। পানির জন্য কেউ ছাত্রাবাস থেকে বের হতে পারছেন না। যারাও জরুরি প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তাদের ময়লা পানি মাড়িয়ে মূল সড়কে যেতে হচ্ছে। একই সঙ্গে পানির কারণে ভেতরের দোকানগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ না থাকায় সকাল থেকে না খেয়ে আছেন অনেক।

 

জাহিদ হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, রাতে বৃষ্টির কারণে আমরা যারা নিচতলায় থাকি আমাদের রুমে পানি ঢুকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। হলের সামনে এখনো হাঁটু পানি। কোথাও বের হতে পারছি না। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিক না হওয়ায় এখনো পানি নামেনি।

তবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়েছেন কলেজের কোয়ার্টারে থাকা কর্মচারীরা। কোয়ার্টার অপেক্ষাকৃত নিচুস্থানে হওয়ার কারণে অধিকাংশ ঘরেই প্রবেশ করেছে পানি।

অন্যদিকে, টানা ভারী বর্ষণের কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কুয়েত মৈত্রী হলেও। নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় এখনও নামেনি পানি। এর ফলে গোসল ও খাওয়ার পানিরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে হলটিতে।

 

ওয়াজিহা জাহান জুঁই নামক এক শিক্ষার্থী ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কুয়েত মৈত্রী হলে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে নিচতলা ডুবে গেছে। পানি সিঁড়ির নিচ পর্যন্ত চলে এসেছে। গণরুমে পানি ঢুকে গেছে। হলের মুদি দোকানের ফ্রিজে পানি ঢুকে ব্লাস্ট হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এসময় তিনি গণরুমের শিক্ষার্থীদের তার নিজের রুমে আসার অনুরোধ করেন।

আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী লিমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এমন জরুরি অবস্থাকে মাথায় রেখে কোনও পূর্ব প্রস্তুতি কেন নেয়নি প্রশাসন? এ রাতে মেয়েগুলো তাদের জিনিসপত্রসহ কোথায় যাবে? সন্ধ্যা থেকে যখন পানি বাড়তে শুরু করে তখনও কোনও উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

তবে পানি নামানোর জন্য কাজ করছে ওয়াসার তিন টিম বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টির এই দাপট থাকতে পারে আরও দুদিন।

 

আবহাওয়া অফিস আরও জানায়, আজ ও আগামীকাল (শুক্র-শনিবার) সারাদেশে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। তবে দেশের উত্তরাঞ্চল রংপুর এবং রাজশাহী ও ময়মনসিংহে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া ঢাকা বিভাগেরও ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

 

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...