কক্সবাজার পৌঁছাল লাল-সবুজ ট্রেন, উদ্বোধনের অপেক্ষা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৮ নভেম্বর ২০২৩, ৭:১৬ পূর্বাহ্ণ


আগামী ১১ নভেম্বর বহুল প্রতীক্ষিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন তিনি টিকিট কেটে ট্রেনে ভ্রমণ করবেন।

এ উপলক্ষে কোরিয়া থেকে আনা ৩০২৫ সিরিজের ইঞ্জিন নিয়ে লাল-সবুজ নামের ট্রেনটি মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) দুপুর ২টা ২০ মিনিটে হুইসেল বাজিয়ে চট্টগ্রামের বটতলী রেলস্টেশন থেকে বিশেষ নিরাপত্তায় ছেড়ে যায়। যা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ কক্সবাজারে পৌঁছায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী তাপস কুমার দাস জানান, দোহাজারী কক্সবাজার রেলপথ আগামী ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। যে ট্রেন উদ্বোধন করবেন সেটি মঙ্গলবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে গিয়ে ট্রেনটি কালুরঘাট সেতু, বোয়ালখালী, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, রামু হয়ে কক্সবাজার স্টেশন পৌঁছালাম সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। ট্রেনটি এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ টিমের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

এদিকে দৃষ্টিনন্দন লাল সবুজ রঙের ৯১ টন ওজন ও ৩ হাজার ২৫ সিরিজের ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার আগে স্টেশনে ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ১৯টি বগির প্রতিটিতে একে একে তল্লাশি করে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী। পরিদর্শন করেন রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় ম্যানেজার প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনী ট্রেনে থাকবে ১৫টি বগি। এই ১৫ বগির সঙ্গে আরও অতিরিক্ত চার বগি চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে। ইঞ্জিনসহ সব বগিই কোরিয়া থেকে আনা। সবগুলোই ব্র্যান্ড নিউ। উন্নত বিশ্বের আদলে কেবিন ও সিট বসানো। উদ্বোধনী ট্রেনের ১৫ বগিতে কোনো সমস্যা হলে অতিরিক্ত চার বগি সংযোজন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ট্রেনের চালক হতে পেরে উচ্ছ্বাসের শেষ নেই চালকদের। লোকোমাস্টার মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এটি নতুন অভিজ্ঞতা। প্রধানমন্ত্রীকে এই ট্রেনে করে নিয়ে যাবো আমরা। আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়।’

এর আগে রোববার ৯ টার দিকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রথমবারের মতো পর্যটন নগরী কক্সবাজারে উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। রেলওয়ে পরিদর্শন অধিদপ্তরের সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) রুহুল কাদের আজাদের নেতৃত্বে প্রথম ট্রেনটি কক্সবাজার পৌঁছে সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে। সফলভাবে কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছার পর ট্রেনটি কিছুক্ষণ বিরতি শেষে পুনরায় চট্টগ্রাম ফিরে আসে। এর মধ্যে দিয়ে যেন কক্সবাজারের মানুষের বহু বছরের আক্ষেপ গোছানোও হলো শুরু হয়।

২০১০ সালে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্ত ঘুমদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্প নেয়া হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল কক্সবাজারে যাতায়াত সহজ করা। পাশাপাশি মিয়ানমারসহ ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করা। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচলের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত ব্রিটিশ আমল থেকেই রেললাইন আছে।

২০১৬ সালে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে এই প্রকল্পের ব্যয় র্নিধারণ করা হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের জুলাইয়ে সরকারের অগ্রাধিকার এই প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখনও ৯ স্টেশনের মধ্যে বেশ কয়েকটির কাজ চলছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।

এদিকে কক্সবাজার আইকনিক রেলষ্টেশনের পরিদর্শন করেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজার আইকনিক রেল ষ্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তিনি। এসময় রেল স্টেশনের অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোগত অবস্থাসহ সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন করে সড়কপথে গাড়িযোগে রামু রেল জংশনে যান।

কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন থেকে রামু রেল জংশনের মধ্যকার রেলপথের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও প্রস্তুতি সম্পর্কে পর্যালোচনা করেন। পরে বেলা সাড়ে ১২টায় রামু রেল জংশন পরিদর্শন শেষে ঢাকার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরে ফেরত যান।

প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর পহেলা ডিসেম্বর ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু হবে। এ উপলক্ষ্যে রেলস্টেশনের উদ্বোধনের চূড়ান্ত কাজ পরিদর্শনে আসেন বলে জানায় আইকনিক রেলস্টেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. মফিজুর রহমান, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের প্রকল্প পরিচালক মো. সুবক্তগীনসহ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

 

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...