ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিরতির দাবিতে লন্ডনে স্বরণকালের সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ সমাবেশ

মো: জাহেদী ক্যারল,

  • প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২৩, ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিরতির দাবিতে লন্ডনে স্বরণকালের সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করা হয়। এটিকে ঐতিহাসিক মিছিল বলেও অভিহিত করেছেন আয়োজকরা। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে প্রায় ৮লাখ মানুষ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ গ্রহণ করেছেন। শনিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে মধ্য পশ্চিম লন্ডনের হাইড পার্ক থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেখান থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে টেমস নদীর দক্ষিণ তীরে ভক্সহলের নাইন এলমসের কাছে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে গিয়ে বিক্ষোভ শেষ হয় বিকেল ৪টায়। বিক্ষোভকারি সবাই গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন।

ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে এক মাস ধরে প্রতি শনিবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করে আসছেন ব্রিটেনের ফিলিস্তিনপন্থিরা এবং আজকের এই আয়োজন স্বরণকালের সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ সমাবেশ। প্যালেষ্টাইন স‌লিডা‌রি‌টি ক্যাম্পেইন, ফ্রেন্ডস অব আল-আকসা, মুস‌লিম এ‌সো‌সি‌য়েশন অব ব্রিটেন, স্টপ দি ওয়ার কোয়া‌লিশন, প্যালেস্টাইন ফোরাম ইন ব্রিটেন সহ বেশ ক‌য়েক‌টি সংগঠনের আহব্বা‌নে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। লেবার দলের সাবেক প্রধান জেরমী করবিন সমাবেশে একাত্মতা ঘোষণা করেন এবং বক্তব্য রাখেন, সমাবেশের লোকজন তাকে জনগণের প্রধানমন্ত্রী ( পিপলস প্রাইম মিনিস্টার) বলে সম্বোধন করেন। ব্রিটিশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি আপসানা বেগমসহ অনেক প্রতিবাদী বক্তারা সমাবেশে বক্তব্য রাখেন৷

ফিলিস্তিনপন্থি এ মিছিলে ঝামেলা করতে চেয়েছিল যুক্তরাজ্যের উগ্রডানপন্থি কিছু দলের সমর্থকরা। ঝামেলা এড়াতে উগ্রপন্থিদের ৮২ জনকে আটক করেছে মেট্রোপলিটন পুলিশ। মেট্রোপলিটন পুলিশ সার্ভিস বলেছে, শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিতে প্রায় দুই হাজার অফিসার মধ্য লন্ডনে মোতায়েন করা ছিল। এটি স্বাভাবিক সংখ্যার দ্বিগুণ। কারণ, বিক্ষোভটি আর্মিস্টিস ডের সঙ্গে মিলে গেছে।

আয়োজক সংগঠন স্টপ দ্য ওয়ার কোয়ালিশন জানায়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস ভাড়া করে মিছিলে অংশ নিয়েছে মানুষ। বাস কোম্পানিগুলো তাদের জানিয়েছে, বাসের সব টিকিট কাটা শেষ হয়ে গেছে।

বিক্ষোভকারীরা যাত্রা শুরু করার সময় “মুক্ত ফিলিস্তিন” এবং “এখনই যুদ্ধবিরতি” স্লোগান দিয়ে মুখরিত করেন প্রায় আট লক্ষ মানুষ। লন্ডনে এ যাবতকালের সর্ববৃহৎ বিক্ষোভ মিছিল আয়োজনের পরিকল্পনাকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সহ কনজারভেটিব দলের সিনিয়র মন্ত্রীরা “অসম্মানজনক” হিসাবে বর্ণনা করে আসছিলেন। এটি নিষিদ্ধ করার হুমকি ধামকি দিচ্ছিলেন।
কিন্তু মেট্রোপলিটান পুলিশ মিছিল করার নাগরিক অধিকারে পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার পর সরকারের হুমকি-ধামকি কমে আসে। শেষ চেষ্টা হিসেবে বুধবার রিশি সুনাক মেট পুলিশের প্রধানের সাথে বৈঠক করার পর পিছু হটেন। বলেন যে, যারা রাস্তায় নামতে চায় তাদের “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার” রয়েছে।
মেট কমিশনার মার্ক রাউলি, মঙ্গলবার ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক চাপকে অস্বীকার করে পরিকল্পিত মার্চ নিষিদ্ধ করবেন না। পুলিশ প্রধানের সাথে তার বৈঠকের পর বুধবার সন্ধ্যায় টেন ডাউনিং স্ট্রিট থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে, রিশি সুনাক ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি মেনে নিয়েছেন যে মেট পুলিশকে এটি বাতিল করার আহ্বান সত্ত্বেও প্রতিবাদ কর্মসূচিটি পালন হবে।

শ‌নিবার সকাল থে‌কেই লন্ডনের অ‌নেক ট্রেন ও টিউব চলাচল বন্ধ ছিল। তারপরও ষ্টেশন ও রাস্তায় সকাল থে‌কেই ছিল উপ‌চে পড়া মানু‌ষের ভীড়। নৌপথে অনেক বি‌ক্ষোভকারীরা যাতায়াত করেছেন। লন্ড‌নের বাই‌রের বি‌ভি‌ন্ন শহর থে‌কেও বাস, কার ও ট্যাক্সি নি‌য়েও মানুষ সেন্ট্রাল লন্ড‌নের দি‌কে জ‌ড়ো হ‌তে থা‌কে সকাল থে‌কেই বি‌ক্ষোভকারীরা ব্রিটে‌নের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সু‌য়েলা ব্রেভারম্যানের পদত্যাগের দাবি‌তে বি‌ভিন্ন শ্লোগান দেন। তারা বলেন, গাজা প‌রি‌স্থি‌তি‌কে উত্তপ্ত করার জন্য তার কিছু মন্তব্য দায়ী।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...