সব
নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, লন্ডন,
একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ছিল অভূতপূর্ব সাহস, উদ্দীপনা, অনুপ্রেরণার উৎস। মুক্তিযোদ্ধা ও দেশবাসীর মনোবলকে উদ্দীপ্ত করতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দেশাত্ববোধক গান অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছিল। ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি ছিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সূচনা সংগীত। বিপুলসংখ্যক দর্শকের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সেসব কালজয়ী গান নিয়ে বিজয়ফুল এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো বিজয় কনসার্ট।
মাসব্যাপী বিজয়ফুল এর অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে ১০ই ডিসেম্বর পূর্ব লন্ডনের একটি হলে উপস্থিত রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধারা মোমবাতি প্রজ্জ্বলন এবং নতুন প্রজন্মের শিল্পী মৃদুলের পরিবেশনায় ‘ একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’ গাওয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়।
বিজয়ফুল এর সমন্বয়ক কবি মিলটন রহমানের উপস্থাপনায় বিজয়ফুল এর প্রতিষ্ঠাতা কবি শামীম আজাদ বিজয়ফুল এর ১৭ বছরের পথচলা, ইতিহাস চমৎকারভাবে তুলে ধরেন।
তারপর শুরু হয় বিশিষ্ট সংগীতশিল্পী বিজয়ফুল এর দূত গৌরী চৌধুরীর নেতৃত্বে সমবেত কন্ঠে গণজাগরণের মূল হাতিয়ার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দেশাত্ববোধক গানসমূহ। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবরে’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’, ‘শোনো একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বর’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ ‘আমার বাংলাদেশের মাটি, আমার জন্মভূমির মাটি’ ‘ধনে ধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানগুলো যখন পরিবেশন করা হচ্ছিল তখন উপস্থিত শ্রোতারা আবেগে আপ্লুত হয়ে পরেছিলেন। সমবেত কণ্ঠে, একক বা দ্বৈতভাবে শিল্পীরা যখন গান গাইতে ছিলেন তখন গানগুলো স্টেজের গন্ডি ছাড়িয়ে দর্শক সারিতে সকলের কণ্ঠে ধ্বণিত হয়েছে। মনে হচ্ছিল সকলে চলে গেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময়ে।
চায়না চৌধুরীর পরিচালনায় ‘আয় আয়রে কৃষাণ, আয় আয়রে শ্রমিক গানের সাথে নাচও ছিল খুব উপভোগ্য।
গান ও নাচের মাঝখানে ছিল বিলেতের স্বনামধন্য বাচিক শিল্পীদের আবৃত্তি। একইসাথে এক পাশে একটি বড় টেবিলে চলছিল ছেলেমেয়েদের বিজয়ফুল বানানো। নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যখন বিজয়ফুল বানাচ্ছিল তাদের পাশে বসে বিজয়ফুল এর স্বপ্নদ্রষ্টা শামীম আজাদ বিজয়ফুল এর পাঁচটি সবুজ পাঁপড়ি, মাঝখানের লাল বৃত্তের বর্ণনা দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনিয়েছেন। ছেলেমেয়েরা মুগ্ধ হয়ে সেসব গল্প শুনেছে। বিজয়ফুলকে যারা আগামীতে এগিয়ে নিয়ে যাবে সেসব খুদে সদস্য যারা গান গেয়েছে, বিজয়ফুল বানিয়েছে তারা হলো মৃদুল, শ্রেয়সী দাস, অয়ন্তী, আনন্দরূপ, ইশাল, সামির, সাহির, তানিশা ও ঈশা।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লোকমান হোসেন, ফয়জুর রহমান খান, আবু মুসা হাসান, মেফতাউল ইসলাম। আরো উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুলতান মাহমুদ শরীফ, হাবিব রহমান। বিজয়ফুল এর আন্তর্জাতিক দূত ডক্টর সেলিম জাহান, বিজয়ফুল এর কেন্দ্রীয় কমিটির দূত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ঊর্মি মাজহার, বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সামাদুল হক।
অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন, গৌরী চৌধুরী, সাদিয়া আফরোজ চৌধুরী, রূপি আমিন, শম্পা কুন্ড, জান্নাত এ কাউসার লীনা, ইমদাদুল ভূঁইয়া সুমন ও সাদি ।
কবিতা আবৃত্তি করেন শহীদুল ইসলাম সাগর, মুজিবুল হক মণি ও স্মৃতি আজাদ। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের চরমপত্র থেকে পাঠ করেন ফিরোজ আহমদ বিপুল। অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্ব পরিচালনা করেন বিজয়ফুলের উজ্জীবক অপু ইসলাম ও সেলিনা হায়দার।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী লুসী রহমান, মাহবুব মোর্শেদ, দেওয়ান মাহমুদুল হোক, বিজয়ফুল এর উজ্জীবক সাংবাদিক নিলুফা ইয়াসমীন হাসান, নিকেল, উপদেষ্টা মুজাহিদ চৌধুরী, সতব্রত দাস স্বপন, সাহেব আহমেদ বাচ্চু, মোস্তফা কামাল, সিসিলী কামাল, সৈয়দ হামিদুল হক, সালেহা চৌধুরী, জামাল খান, নাজু, শিরিনউল্লাহ, আরফুম্যান, লিপি ফেরদৌসী ও আরো অনেকে।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে বিজয়ফুল এর কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাসব্যাপী কর্মসূচী উদ্বোধন করা হয়েছে। সেই থেকে প্রতি বছরের ন্যায় বিজয়ফুল এর কর্মসূচী বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন সমাপনি বক্তব্যে বিজয়ফুল এর মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার অঙ্গীকার করে উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
সব শেষে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।
Developed by: Helpline : +88 01712 88 65 03