বইমেলা শুরু বৃহস্পতিবার; মেট্রোরেল ঘিরে বড় আশা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:১৩ পূর্বাহ্ণ

বছর ঘুরে অমর একুশে গ্রন্থমেলার শুরু হচ্ছে বৃহস্পতিবার (১ ফ্রেব্রুয়ারি)। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে তৈরি বইয়ের স্টলগুলো বাহারি রঙের ছোঁয়া ও সজ্জায় বর্ণিল হয়ে উঠেছে। কাল থেকে প্রচ্ছদে রঙিন হয়ে উঠবে বইয়ের তাকগুলো।

১৯৫২’র ভাষাশহীদদের স্মরণে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলা এবারও পয়লা ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে। অধিবর্ষ হিসেবে ২০২৪ সালের বইমেলা হবে ২৯ দিন। এবার মেলার প্রতিপাদ্য, ‘পড়ো বন্ধু গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।’

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, ১ ফেরুয়ারি বিকেল ৩টায় মাসব্যাপী বইমেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, স্বাগত বক্তব্য দেবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। এই মঞ্চ থেকেই বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ তুলে দেওয়া হবে।

২০২৪ সালের অমর একুশে বইমেলার এর সার্বিক প্রস্তুতি বিষয়ে মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাংলা একাডেমি। এতে বইমেলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

একাডেমির মহাপরিচালক জানান, উদ্বোধনের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলা ঘুরে দেখতে যাওয়ার পথের দুপাশে ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলনের’ নানা স্মৃতি সাজানো হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি পুরস্কার ফেরত দিয়ে বাংলা একাডেমি নিয়ে কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদারের তোলা নানা প্রসঙ্গ আমলে নিয়ে বিভিন্ন বিষয় সংস্কার করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।

এ দিকে বইমেলার আগেই রাজধানীতে শুরু হয়েছে মেট্রোরেল সার্ভিস। ফলে যানজটের ভয়ে উত্তরা, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকার যেসব পাঠক-ক্রেতা বইমেলায় আসতে চাইতেন না, তারাও আসবেন আশা করা হচ্ছে। মেট্রোরেলের টিএসসি স্টেশনে নামলেই বইমেলা। তাই মেট্রোরেল চলাচলের সময়সীমা রাত ৯টা পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে বাংলা একাডেমি।

এছাড়া বইমেলা প্রাণোবন্ত করতে এ বছরই প্রথম ঢাকার ২৫টি স্কুলের প্রশাসনের কাছে তাদের শিক্ষার্থীদের বইমেলায় আনার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে বাংলা একাডেমি।

মঙ্গলবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, স্টলের তুলনায় প্যাভিলিয়নগুলো নির্মাণ ও সজ্জা দিক দিয়ে এগিয়ে আছে। তবে স্টল সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, মেলা উদ্বোধনের আগেই সাজসজ্জার কাজ শেষ হয়ে যাবে।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ৪টি চত্বরে সাজানো হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকছে সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা ও লিটলম্যাগ চত্বর।

একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে স্টল থাকছে ৪৫৯টি। উদ্যানের শিশু চত্বরে স্টল বরাদ্দ পেয়েছে ৬৭টি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছর ২০টি নতুন প্রকাশনা সংস্থাকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবার লিটল ম্যাগ চত্বর সরিয়ে উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে নিয়ে আসা হয়েছে। টিএসসির দিকের গেট দিয়ে মেলায় প্রবেশ করলে হাতের ডানে পড়বে এই চত্বরটি। একইভাবে উদ্যানের মন্দিরের গেটের পাশেই থাকছে শিশু চত্বর। উদ্যানের অংশে থাকছে ‘লেখক বলছি’ মঞ্চ। সেখানে নতুন বই নিয়ে হবে লেখক-পাঠক মতবিনিময়।

এদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নজরুল মঞ্চের পাশেই থাকছে মেলার মূল মঞ্চ। মেলা উপলক্ষে মূল মঞ্চে থাকবে মাসব্যাপী সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন, সংগীত ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হবে।

মেলার তথ্যকেন্দ্রে নতুন বইয়ের খবর পাওয়া যাবে। থাকছে ডিজিটাল দিকনির্দেশনা। বইমেলার পরিধি ও বিন্যাস অপরিবর্তিত থাকছে। স্টল বিন্যাসের ক্ষেত্রে ফাঁকা জায়গা কম রেখে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাছাকাছি রাখা হয়েছে।

মেলায় প্রথমবারের মতো স্টল দিচ্ছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বেঙ্গলবুকস। লেকচার পাবলিকেশন লিমিটেডের এই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পপ্রধান আজহার বিন ফরহাদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, অমর একুশে বইমেলায় প্রথমবার স্টল পাওয়া চ্যালেঞ্জিং। এজন্য বাংলা একাডেমির দেওয়া নিয়মনীতি অনুসরণ করতে হয়েছে।’

শিল্পী আজহার ফরহাদ আরো বলেন, ‘বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় বলব, এবারের বইমেলা নতুন প্রকাশকদের জন্য আশাপ্রদ একটি মেলা। যেখানে আগে স্টল হতো না, সেখানে স্টল দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রকাশকের জন্য অনেক সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে মেলা শুরুর পর এর বাস্তবতা বোঝা যাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে মেলার প্রস্তুতি বিষয়ে অবহিত করেন বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব এবং বাংলা একাডেমির মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, শুধু মেলার পূর্বপ্রস্তুতি ও পর্যবেক্ষণের জন্য এবার ৭টা কোর কমিটি কাজ করছে। গতবারের মেলায় ওঠা অভিযোগ এবার সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। মেলার সুন্দর করতে গত বছর বইমেলা শেষ হওয়ার পর থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হয়। বিগত সময়ে কিছু ঘটনার কারণে এবারও মেলার নিরাপত্তায় নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। সিসি ক্যামেরাসহ কয়েক স্তরের সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকছে মেলা এলাকায়।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...