ইজতেমায় ৫ মুসল্লির মৃত্যু, বিকেলে গণবিয়ে, রোববার আখেরি মোনাজাত

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১:২৩ অপরাহ্ণ

তুরাগ তীরের ময়দানে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে আরো এক মুসল্লরি মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় হৃদরোগে রোগে আক্রান্ত হয়ে জালাল মন্ডল (৬০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজিপাড়া থানার বড়াইখোলা গ্রামের। ময়দানে তার জানাজা নামাজ শেষে মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ নিয়ে ইজতেমা ময়দানে দ্বিতীয় পর্বে মোট পাঁচজন মুসল্লি মারা গেছেন।

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মোহাম্মদ সায়েম এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, নিহত অন্যদের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে শেরপুর সদর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মোহাম্মদ আবুল কালাম (৬৫), একই দিন বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে নেত্রকোণার কেন্দুয়া থানার কুতুবপুর গ্রামের হেলিম মিয়া (৬৫) ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার শিবনগর এলাকার জহির উদ্দিন (৭০) এবং রাত ৮টা ৫০মিনিটে জামালপুরের ইসলামপুর থানার গোয়ালের চর এলাকার নবীর উদ্দি (৬৫) মারা যান।

তিনি আরও জানান, বিশ্ব ইজতেমা মাঠে তাদের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং যাদের তথ্য ও ঠিকানা পাওয়া গেছে তাদের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার মাগরিব পর্যন্ত ৬ জন মুসল্লির মৃত্যুর তথ্য প্রদান করা হলেও বাস্তবে ময়দানে মারা গেছেন ৪ জন। তাদের মধ্যে চারজনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে। আর ঢাকার উত্তরার আব্দুল্লাহপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার ভোরে হেঁটে ইজতেমায় আসার পথে বাসের ধাক্কায় তিন মুসল্লি গুরুতর আহত হন। পরে তাদের মধ্যে লক্ষ্মীপুরের রামগতি থানার বাসিন্দা আবুল কাশেম (৬৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। যে তথ্য ইজতেমা কর্তৃপক্ষ জানতেন না।

এদিকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ফজরের নামাজের পর চলছে ধর্মীয় বয়ান। বয়ান করছেন ভারতের মাওলানা সাঈদ বিন সাদ। বাংলা তরজমা করছেন মুফতি ওসামা ইসলাম। আর আসরের নামাজের পর অনুষ্ঠিত হবে যৌতুক বিহীন গণবিয়ে।

আগামীকাল রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে শুরু হবে আখেরি মোনাজাত। আর এই আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে সাদপন্থীদের তাবলীগ জামাতের এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

ইজতেমার আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, ইজতেমা ময়দানের ৮৯টি খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন দেশবিদেশের লাখো মুসল্লি। ফজরের নামাজের পর পিনপতন নীরবতায় ধর্মীয় বয়ান শুনছেন তারা। বয়ানের পর এগুলো থেকে নেওয়া শিক্ষা নিয়ে প্রতিটি খিত্তায় দলবেঁধে নিজস্ব আমিরের (দলনেতা) নেতৃত্বে হবে আলোচনা।

সকাল সাড়ে ১০টায় তালিমে হালকা মোয়াল্লেমেরদের নিয়ে কথা বলবেন মাওলানা আব্দুল আজিম। ইজতেমায় তাবলীগ-জামাতের নানা আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াও মূল বয়ান মঞ্চের পাশে অনুষ্ঠিত হবে গণবিয়ে। বিকেলে অনুষ্ঠিত হবে যৌতুক বিহীন গণবিয়ে।

তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিরা আরবি, উর্দু ও হিন্দিতে বয়ান করলেও তাৎক্ষণিক এগুলো বাংলা, ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া যারা তাবলিগের দাওয়াতি কাজে বের হবেন খিত্তা অনুযায়ী তাদের তালিকাভুক্ত করা হবে।

আয়োজকরা জানান, ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে যোহরের নামাজের পরে বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা শরিফ, বাংলা তরজমায় মাওলানা মাহমুদুল্লাহ; আসরের পরে বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা ওসমান, বাংলা তরজমায় মাওলানা আজিম উদ্দিন। বয়ানের পরে অনুষ্ঠিত হবে যৌতুকবিহীন বিবাহ। মূল বয়ান মঞ্চের পাশে শরীয়া আইন অনুযায়ী কনের অনুপস্থিতিতে তাঁর অভিভাবক এবং বর ও তাঁর আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। মাগরিবের পরে বয়ান করবেন ভারতের মুফতি ইয়াকুব, বাংলা তরজমায় মাওলানা মনির বিন ইউসুফ।

রোববার ফজরের পরে বয়ান করবেন ভারতের মুফতি মাকসুদ, বাংলা তরজমায় মাওলানা আব্দুল্লাহ। বয়ানের পরেই হেদায়াতি বয়ান ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। মজলিশে শূরার সদস্যদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন ভারতের মাওলানা ইউসুফ বিন সাদ।

অন্যদিকে, ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ১৫ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ময়দানের ভেতরে ও বাইরে কাজ করছে। সিসিটিভি ও ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে পুরো ময়দান ও আশপাশের এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের লোকজন সমন্বিতভাবে কাজ করছেন।

আগামীকাল রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা।

 

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...