ছাত্রীদের হাঁটুতে, গালে ও চুলে হাত দিতেন মুরাদ

কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে রাজধানীর ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজের আজিমপুর শাখার গণিত বিভাগের শিক্ষক মুরাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি অধ্যক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের জন্য লিখিত অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষক মমতাজ বেগমকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। অপর দুই সদস্য হলেন—শিক্ষক ড. ফারহানা খানম ও শামসুন আরা সুলতানা। এই কমিটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ভিকারুননিসা স্কুল ও কলেজের এক ছাত্রী তদন্ত কমিটিকে বলেছে, স্যার মজা করতে করতে পাঠদান করেন। কিন্তু তার প্রাইভেটে পড়াকালীন তিনি আমার দুজন বন্ধুর সঙ্গে এবং একজন জুনিয়র ছাত্রীর সঙ্গে বাজে অঙ্গভঙ্গি করেছেন। প্রাইভেট পড়ার সময় হাতে, হাঁটুতে, গালে সহ তিনি আমাদের চুলে হাত দিতেন। মাঝে মাঝে আমাদের খাতার মধ্যে ‘ভালোবাসি’সহ অনেক ধরনের কথা লিখতেন। তাছাড়া তিনি আরেক ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করতেন। তিনি স্কুলে এত না করলেও প্রাইভেট পড়ানোর সময় এসব করতেন।

ছাত্রীদের কাছে লিখিত প্রশ্ন সরবরাহ করে এসব মন্তব্য নিয়েছে তদন্ত কমিটি। যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের কথা উল্লেখ করেছে ১৭ জন ছাত্রী। তদন্ত প্রতিবেদনে একাদশ শ্রেণির দুই জন ছাত্রীর বক্তব্যে বলা হয়, ‘তার (শিক্ষক মুরাদ) কাছে যারা কোচিংয়ে পড়ে, তাদের প্রতি তিনি অতিরিক্ত পরিমাণ স্বজনপ্রীতি প্রদর্শন করেন। তার ব্যবহারে (আচরণগত) সমস্যা আছে বলে অনেকের কাছে শুনেছি। স্যারের কোচিংয়ে এক জুনিয়রের (ছাত্রী) সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ ঘটেছে।’

অন্য একজন ছাত্রী তদন্ত কমিটিকে বলেছে, মজা করতে করতে পাঠদান করেন। কিন্তু তার প্রাইভেটে পড়াকালীন তিনি আমার দুজন বন্ধুর সঙ্গে এবং আমার একজন জুনিয়র ছাত্রীর সঙ্গে বাজে অঙ্গভঙ্গি করেছেন। প্রাইভেট পড়ার সময় হাতে, হাঁটুতে, গালে সহ তিনি আমাদের চুলে হাত দিতেন। মাঝে মাঝে আমাদের খাতার মধ্যে ‘ভালোবাসি’সহ অনেক ধরনের কথা লিখতেন। তাছাড়া তিনি আরেক ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করতেন। তিনি স্কুলে এত না করলেও প্রাইভেট পড়ানোর সময় এসব করতেন।

তদন্ত কমিটির কাছে আরেক ছাত্রী বলেছে, আমার সঙ্গে কোনও অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ হয়নি। কিন্তু আমার সঙ্গে যারা কোচিং করেছে, তারা বলেছে যে সে খারাপভাবে স্পর্শ করেছে। অপর এক ছাত্রী বলে, যারা স্যারের কোচিং করতো, তাদের সঙ্গে একটু বেশিই ইন্টিমেট ছিলেন। অন্য এক ছাত্রী কমিটিকে বলেছে, স্যার কখনও আমার সঙ্গে কোনও বাজে আচরণ করেননি। তবে আমাদের জুনিয়র কিছু ছাত্রী কমপ্লেইন করেছে। তাদের মতে, স্যার অনেক টাচি ব্যবহার করেন। আমার আপন ছোট বোনও একই কথা বলেছিল আমাকে।

স্কুল শাখার এক ছাত্রী বলেছে, আমি কখনও স্যারের কাছে কোচিং করিনি। পঞ্চম শ্রেণিতে থাকতে দশম শ্রেণির আপুদের কাছ থেকে স্যারের নামে অভিযোগ শুনেছিলাম। বেশ কয়েকজন আপু নাকি স্যারের কাছ থেকে ব্যাড (খারাপ) টাচের শিকার হয়েছেন। মাধ্যমিকের অপর এক ছাত্রী বলেছে, স্যার পড়া বোঝান ভালো, স্যারের আচরণ বেশি ভালো না। আর তিন জন ছাত্রী বলেছে, স্যার পড়ান ভালো, কিন্তু স্যারের অঙ্গভঙ্গি ভালো না। অপর এক ছাত্রী বলেছে, স্যার গণিত ভালো বোঝান, অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ করেছেন বলা যায়। স্যার কোচিংয়ে আমাদের মজা করে জড়িয়ে ধরতে চেয়েছেন, তারপর হেসে বলেছেন, না মজা করছিলাম।

অন্য এক ছাত্রী তদন্ত কমিটিকে বলেছে, মোটামুটি ভালো বোঝালেও তার আচার-আচরণ আমার কাছে ভালো লাগেনি। আরেক জন বলেছে, ‘স্যার আমার সঙ্গে একটু কেমন যেন আচরণ করেন। তিনি একবার আমাকে চোখ টিপ মেরেছিলেন।

এর আগে তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগে জানানো হয়, তিনি একটি বাসা ভাড়া নিয়ে ২০০-৩০০ ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতেন। নিজেকে নতুন শিক্ষাক্রমের জেলা মাস্টার ট্রেইনার (গণিত) ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান পরীক্ষক (গণিত ও উচ্চতর গণিত) হিসেবে পরিচয় দিতেন। তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে নম্বর কম দিতেন। ফলে ছাত্রীরা বাধ্য হতো প্রাইভেট পড়তে। আর এ সুযোগে তিনি ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করতেন।

[১] [২] [৩]