রোজার আগে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাব নিত্যপণ্যের ওপর পড়তে পারে

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ৮:২০ পূর্বাহ্ণ

রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্য মজুত, আমদানি, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পথে পথে চাঁদাবাজি, অযৌক্তিক শুল্ক আরোপ ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেটের কারণে ধাপে ধাপে বাড়ে নিত্যপণ্যের দাম। এসব স্তরে সরকার কঠোর হলে দাম নাগালে রাখা সম্ভব। এ সময় রোজার আগে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাব নিত্যপণ্যের ওপর পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তারা।

গতকাল বুধবার রাজধানীর মতিঝিলের আইকন ভবনে এ সভার আয়োজন করে এফবিসিসিআই। এতে নিত্যপণ্যসামগ্রী উৎপাদক, আমদানিকারক ছাড়াও পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।

শুরুতে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও ন্যায্য মুনাফা করতে হবে। পাইকারি থেকে খুচরা পর্যায়ে দাম যাতে অস্বাভাবিক না হয়, সে জন্য তদারকি জোরদার করতে হবে।

অসৎ ব্যবসায়ীর পক্ষে এফবিসিসিআই কথা বলবে না জানিয়ে তিনি বলেন, কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়ে বিভিন্ন বাজার সমিতির নেতাদের সতর্ক থাকতে হবে। কৃত্রিম সংকট ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চাঁদা চাইলে এফবিসিসিআইর হটলাইনে কল করে তথ্য দিলে তা সরকারকে জানানো হবে।

রমজানে বাজার তদারকির বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, পুলিশ দিয়ে বাজার তদারকির দরকার নেই। বাজার কমিটির নেতারা করলেই হবে। পণ্যের মূল্য তদারকি না করলে ব্যবসায়ীদের সরকারিভাবে হয়রানির শিকার হতে হবে। ফলে প্রতিটি বাজার কমিটিকে নিজে থেকেই এ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।

সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরেন মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, রমজানের পণ্যের যথেষ্ট মজুত রয়েছে, দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই। বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, রমজানে বেগুনের চাহিদা শতগুণ বেড়ে যায়। নৈতিকতা না থাকলে সেমিনার করে দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। পচনশীল হওয়ায় কাঁচামাল মজুত করা যায় না। সরবরাহ ঠিক রাখতে রোজার তিন-চার মাস আগেই প্রণোদনা দিয়ে সরকারিভাবে চাষাবাদের ব্যবস্থা করা দরকার।

কারওয়ান বাজার কাঁচামাল আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম সুজন বলেন, পণ্য বহনকারী ট্রাক থেকে কয়েক ধাপে চাঁদা নেওয়া হয়। ট্রাক থেকে পণ্য আড়তে নেওয়া, আড়ত থেকে খুচরা ব্যবসায়ীদের গন্তব্যে যাওয়া পর্যন্ত স্তরে স্তরে চাঁদা দিতে হয়। এসব কারণে দাম বেড়ে যায়।

কাপ্তানবাজার আড়ত মালিক সমিতির সহসভাপতি আবদুল মান্নান খান বলেন, বাজারে পণ্য এলে কিছু লোক দাম ঠিক করে দেন। সে দামেই বেচাকেনা হয়। দোকানিরাও মূল্যতালিকা ঝোলান না। বাজারে সিন্ডিকেট আছে, এটা স্পষ্ট। কৃষক কখনও দায়ী নন, আগে সিন্ডিকেট ধরার ব্যবস্থা করতে হবে।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ বলেন, রমজানে ডিমের চাহিদা কমে যায়। মুরগি তো ডিম দিতে থাকে। জোগান বেশি হওয়ায় ডিম নষ্ট হয়। রোজার সময় চাহিদার অতিরিক্ত ডিম হিমাগারে রাখার ব্যবস্থা করলে, পরে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে। নতুবা রোজার পরে ডিমের দর নাগালে রাখা মুশকিল হবে।

চাঁদাবাজি নিয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ সমর্থন করে এফবিসিসিআই পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, রাস্তায় পুলিশ, নেতা, মেয়র, জেলা প্রশাসক, শ্রমিক কল্যাণ সংস্থা, ট্রাকে পণ্য বোঝাই-খালাসসহ সবখানে চাঁদাবাজি হয়। এ বিষয়ে তথ্য চাইলে ব্যবসায়ীরা সরবরাহ করতে পারবেন। চাঁদাবাজি বন্ধ ছাড়া দাম কমবে না।

ফল আমদানিকারক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিলাসপণ্যের ক্যাটেগরিতে হওয়ায় খেজুর আমদানিতে এখনও উচ্চ শুল্ক বিদ্যমান। কাস্টমস ইচ্ছামতো খেজুরের আমদানি মূল্য বেশি ধরে শুল্ক ধার্য করছে। গত চার-পাঁচ মাস অনুরোধ জানানোর পর শুল্ক কমানো হয়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। এখনও ১১০ টাকার খেজুরে ১৪০ টাকা শুল্ক দিতে হচ্ছে।

সভায় রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম এরই মধ্যে ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে। এটি নিয়ে যেন কোনো তেলেসমাতি না হয়। নির্বাচনের আগে ৬৫০ টাকা কেজির গরুর মাংস হয়েছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। মসলার দামও অস্বাভাবিক। রোজার জন্য গরুর মাংস আমদানির অনুমতি ছাড়া বাজার স্বাভাবিক হবে না।

ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না অভিযোগ করে পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলার ১১০ টাকা নির্ধারণ করলেও ব্যবসায়ীদের দিতে হচ্ছে ১২০ টাকার বেশি। তিনি বলেন, একদিকে দাম কমাতে ব্যবসায়ীদের চাপ দেওয়া হচ্ছে; অন্যদিকে বলা হয় শুল্ক, কর না দিলে উন্নয়ন হবে কীভাবে? পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে আদায় করা হয়। এটি সরকারের দ্বিমুখী আচরণ। মসলায় অস্বাভাবিক কর আরোপ করা হয়েছে। চিনি আমদানিতে ৬৫ পয়সা শুল্ক কমিয়েছে। তাতে কী লাভ হয়েছে?

এস আলম গ্রুপের জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক সালাহ উদ্দিন বলেন, রমজান উপলক্ষে পণ্যের মজুত পর্যাপ্ত আছে। তবে এলসির ক্ষেত্রে ডলারের দর কারও কাছ থেকে ১২০, ১২৪ আবার কারও কাছ থেকে ১২৫ টাকা নেওয়া হয়। এ বিষয়ে তদারকি দরকার।

সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে রোজায় পণ্যের সংকট থাকবে না। দেশবন্ধু গ্রুপের প্রতিনিধি সারোয়ার জাহান বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চিনিকে নিত্যপণ্য উল্লেখ করলেও এনবিআর সেটির ওপর বিলাসপণ্যের মতো শুল্ক আরোপ করেছে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...