ইতালি যাওয়া হলো না মোবারকের, লাশ হলেন পুরো পরিবার

রাজধানীর বেইলি রোডের সাততলা ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইতালি প্রবাসী সৈয়দ মোবারক হোসেন কাউসারসহ (৪২) একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।

সৈয়দ মোবারক হোসেনের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার শাহবাজপুরে। তিনি দীর্ঘদিন ইতালিতে ব্যবসা করতেন। মাসখানেক আগে ইতালি থেকে দেশে এসেছিলেন তিনি।

ইতালিতে স্থায়ীভাবে (গ্রিন কার্ড) থাকার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। স্ত্রী ও সন্তানদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ভিসাও হয়ে গিয়েছিল সবার। কিন্তু ইতালি আর যাওয়া হলো না তাদের। বেইলি রোডের আগুনে পুড়ে স্ত্রী-সন্তানসহ মারা গেছেন মোবারক (পরিবারের ৫ সদস্যের মৃত্যু)।

শুক্রবার (১ মার্চ) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নিহতের চাচাতো দুলাভাই সৈয়দ গাউসুল আজম। তিনি বলেন, এই ঘটনাটি একেবারে মর্মান্তিক। পরিবারটি শেষ হয়ে গেলো। কাউসার তার পরিবারসহ আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক ছিল। এরকম দুর্ঘটনা যেন আর কারো পরিবারের না হয়, সেই দোয়া করি।

মোবারকের চাচাতো ভাই ফয়সাল জানান, রাত ৮টার দিকে সৈয়দ মোবারক তার স্ত্রী স্বপ্না (৩৮), মেয়ে সৈয়দা তাশফিয়া (১৭), সৈয়দা নূর (১৫) একমাত্র ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহকে নিয়ে বাসা থেকে বের হন কাচ্চি ভাইতে খাওয়ার জন্য। তারা সেখানে পৌঁছানোর পর এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে তারা সবাই মারা যান।

এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে গ্রিন কজি কটেজ নামের সাততলা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় কাচ্চিভাই রেস্টুরেন্টে আগুনের সূত্রপাত। আগুন লাগার কিছু সময় পরই একটি গ্যাস সিলেন্ডার বিস্ফোরিত হওয়ায় আগুন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। ২ ঘণ্টার চেষ্টা চালিয়ে সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডে অবস্থিত কাচ্চিভাই রেস্টুরেন্টের নিচতলায় আগুন লাগে। গ্যাস সিলিন্ডারের লিকেজজনিত ত্রুটির কারণে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে রেস্টুরেন্টে কর্মরত কর্মচারীদের মাধ্যমে তথ্য পায় তারা। রাত ৯টা ৫৬ মিনিটের দিকে সর্বপ্রথম ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। পরে একে একে যোগ দেয় আরও ১২টি ইউনিট। কিন্তু এর আগেই ভবনজুড়ে আগুনের ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে। তখন জীবন বাঁচাতে সবাই দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। ভবনে আটকে থাকা লোকজনদের অনেকে ছাদে আশ্রয় নেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগার পর তা ওপরের তলাগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত লোকজন ওপরের দিকে উঠে যায়। এ সময় ভবন থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। তাদের মধ্যে ১২ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪৪ জন নিহত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ৪৩ জনের নিহতের তথ্য নিশ্চিত করেন। দগ্ধ হয়ে আরও অনেকে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন ৪৩ জন নিহতের কথা জানান। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ১০ জন এবং কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে ১ জন নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা অনেক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

[১] [২] [৩]