সব
স্বদেশ বিদেশ ডট কম
দৈনিক দেশ রূপান্তরের শেরপুরের নকলা উপজেলা সংবাদদাতা শফিউজ্জামান রানা তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়ায় সাজানো অভিযোগ তুলে ইউএনও কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কারাদণ্ড দেওয়ার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়েছে ফেনীর সাংবাদিক সংগঠন ও সাংবাদিক নেতারা। তারা রানার নিঃশর্ত মুক্তি এবং এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ফেনীর সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেন, এ ঘটনার মাধ্যমে অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এ ঘটনাকে অত্যন্ত নিন্দনীয় ও লজ্জাজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের আইন অনুযায়ী তথ্য চাওয়াকে তারা (প্রশাসন) অপরাধ হিসেবে গণ্য করে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়েছেন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক ও তথ্যের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করার শামিল।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জসিম মাহমুদ বলেন, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর সাংবাদিকদের অধিকার সুরক্ষায় তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেন আর এই আইনের মাধ্যমে সাংবাদিক তার তথ্যের আদান-প্রদান করতে পারবেন। নকলার ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিন ওই সাংবাদিককে আবেদনের পরেও তথ্য না দিয়ে তাকে কারাদণ্ড দেওয়ায় তার এই ঘটনায় (জাইকার) অনিয়মের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে আমি মনে করি এবং উক্ত ইউএনও এই সাংবাদিক বান্ধব সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে কাজ করছে মনে করি। আমি তদন্তপূর্বক তার বিচার দাবি করছি।
ফেনী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি যতন মজুমদার বলেন, দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একজন গণমাধ্যমকর্মী তথ্য চেয়ে আবেদন করেও হয়রানির শিকার হয়েছেন। উপজেলা প্রশাসন তাকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজানো মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠায়। আমরা সরকারের কাছে অবিলম্বে এ জঘন্য ও ন্যক্কারজনক ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।
ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক এম এ জাফর বলেন, তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিককে জেলে পাঠানো এবং তথ্য চাওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বাসিয়ে সাংবাদিকের বিচারের ঘটনা দেশে এটাই প্রথম। ইউএনওর এমন হস্তক্ষেপ গণতন্ত্র এবং গণমাধ্যম বিকাশে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এই ইউএনওর দ্রুত অপসারণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ফেনী প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের বলেন, এভাবে সাংবাদিককে জেল হাজতে পাঠানো স্বাধীন দেশে সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধ করার সামিল। সরকারের একজন কর্মকর্তা হয়ে এ আচরণ কোনোভাবে মেনে নেওয়া হবে না। ইউএনওর দ্রুত অপসারণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানার দ্রুত নিঃশর্ত মুক্তি দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিক শফিউজ্জামান রানা ইউএনওর কাছে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাওয়ার জেরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের। গত মঙ্গলবার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শিহাবুল আরিফ পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে এ দণ্ডাদেশ দেয়। রানার স্ত্রী বন্যার দাবি, জাইকার কয়েকটি প্রকল্পের ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ের তথ্য চেয়ে তথ্য অধিকার আইনে সম্প্রতি ইউএনও কার্যালয়ে আবেদন করেন রানা। এসব প্রকল্পের তথ্য চাওয়ায় রানার ওপর ক্ষুব্ধ হন ইউএনও।
অবশ্য ইউএনও সাদিয়া উম্মুল বানিনের ভাষ্য, রানা তথ্য চেয়ে আবেদন করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তখনই তথ্য চান। তবে তথ্য দেওয়ার জন্য হাতে ২০ দিন সময় আছে বলে রানাকে জানান। তখন গোপনীয় সহকারীর (সিএ) কাছে থাকা ওই তথ্যের ফাইল টানাটানি শুরু করেন রানা। তিনি অসদাচরণ করে অফিসের পরিবেশ নষ্ট করেছেন। তাই তিনি সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে বলেছেন।
Developed by: Helpline : +88 01712 88 65 03