মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে মায়ের ঝাঁপ, লাশের পাশে জন্মদিনের কেক

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০২৪, ১:২১ পূর্বাহ্ণ


যশোর সদর উপজেলায় ১২ বছরের মেয়েকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন এক মা। তাদের লাশের পাশে জন্মদিনের কেক, মোবাইল ফোন ও দুটি ভ্যানিটি ব্যাগ পাওয়া গেছে।

সোমবার (২৫ মার্চ) বেলা আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের পোলতাডাঙ্গা গ্রামের শ্মশানঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন ঘটনাস্থলের পাশের বড়হৈবতপুর গ্রামের মৃত মোকসেদ আলীর মেয়ে লাকি বেগম (৩৫) ও তার মেয়ে সামিয়া আক্তার মিম (১২)। ট্রেনের ধাক্কায় মা-মেয়ের শরীরের বিভিন্ন অংশ ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তারা সাতমাইল বাজারে ভাড়া বাসায় থাকতেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

সাজিয়ালী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই সেলিম হোসেন বলেন, লাকি বেগমের সঙ্গে তার স্বামীর বিচ্ছেদ হয়েছিল। কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন, তা জানা যায়নি। লাশের পাশ থেকে জন্মদিনের কেক, মোবাইল ও দুটি ভ্যানিটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। খবর পেয়ে দুজনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ।

স্বজনরা জানিয়েছেন, মৃত্যুর আগে মা-মেয়ে কেকের অংশ-বিশেষ খেয়েছেন। হয়তো একাকী থাকার যন্ত্রণা আর অভাবের তাড়না থেকে মুক্তি পেতে এই পথ বেছে নিয়েছেন লাকি বেগম।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে মেয়েকে নিয়ে রেললাইনের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ওই নারী। ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটি এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় লাকি তার মেয়েকে জোর করে টেনে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। এতে তাদের শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে দেখেন রেললাইনের পাশে লাশ পড়ে আছে। লাশের পাশে একটি প্যাকেটে অর্ধেক খাওয়া জন্মদিনের কেক, কোমলপানীয় ও তাদের দুটি ভ্যানিটি ব্যাগ পড়ে আছে। এরপর ব্যাগে থাকা মোবাইল বের করে স্বজনদের দুর্ঘটনার সংবাদ জানানো হয়। খবর পেয়ে ওই নারীর বোন ও বোনজামাই ঘটনাস্থলে আসেন।

লাকির ছোট বোন রোজিনা খাতুন বলেন, ‘লাকি সকালে ডাক্তার দেখাতে যশোর শহরে যান। দুপুরে তার মোবাইল ফোন থেকে জানানো হয়, লাকি ও তার মেয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছেন। ১৩ বছর আগে লাকির বিয়ে হয়েছিল। পরে পারিবারিক কলহের কারণে সন্তানসহ প্রথম স্বামীর কাছ থেকে নিয়ে এসে এজাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেওয়া হয়। এক বছর আগে ওই স্বামীও ডিভোর্স দেন। বিভিন্ন সময় বিয়ের আশ্বাস দিলেও আর করেননি। এই সময়টাতে অভাবের মধ্যেই চলছিল তার সংসার। একমাত্র মেয়েকে নিয়ে নিঃসঙ্গ ও অভাবের মধ্যে জীবনযাপন করছিলেন। সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাতেন। আমি মাঝেমধ্যে বাজার সদাই করে দিতাম। আপা প্রায়ই আত্মহত্যার কথা বলতেন। শেষ পর্যন্ত তাই করলেন।

রোজিনার স্বামী জুম্মান আলী বলেন, ‘খবর পেয়ে এসে দেখি তাদের নিথর দেহ পড়ে আছে। মেয়েটি কেক পছন্দ করতো। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তো। আসলে সংসারে অভাবের কারণে এই পথ বেছে নিয়েছেন।

যশোর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মনিতোষ বিশ্বাস বলেন, ‘লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তবে কেন এবং কী কারণে মেয়েকে নিয়ে ওই নারী আত্মহত্যা করলেন, তা এখনও জানা যায়নি।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শ করেছে যশোর ডিবি পুলিশ। ডিবির এসআই মফিজুল ইসলাম বলেন, এখানে এসে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, একাকিত্ব জীবন ও অভাবের তাড়না থেকে মুক্তি পেতে সন্তানসহ ওই মা আত্মহত্যা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...