ইংল্যান্ডে স্ত্রী হত্যার অভিযোগে বাংলাদেশী স্বামী হাবিবুর রহমান মাসুম গ্রেফতার

মতিয়ার চৌধুরী, লন্ডন,

  • প্রকাশিত: ১২ এপ্রিল ২০২৪, ২:০২ অপরাহ্ণ

ইংল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ব্র্যাডফোর্ডে সন্তানের সমানে ছুরিকাঘাতে স্ত্রীকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত বাংলাদেশী হাবিবুর রহমান মাসুমকে গ্রেফতার করেছে ব্রিটিশ পুলিশ। গেল শনিবার ব্রাডফোর্ড সিটি সেন্টারের সামনে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষ দর্শিরা জানান ওই দিন বান্ধবী ও পাঁচ মাস বয়সী সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কেনাকাটা করতে বের হয়েছিলেন কলসুমা আক্তার। এ সময় হাবিবুর রহমান মাসুম দোকানের সামনে কলসুমার ঘাড়ে ‘চার থেকে পাঁচবার’ ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় । তবে শিশুটির কোনো ক্ষতি হয়নি। পাকিস্তানী বংশদ্বোত দোকান মালিক জিও খান (৬৯) বলেন, তিনি কুলসুমাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কুলসুমা তাঁর দোকানের নিয়মিত কাষ্টমার ছিলেন।
জিও খান আরো বলেন, আমি দোকানের ভেতরে কাজ করছিলাম। হঠাৎ চিৎকার শুনে দোকান থেকে দৌড়ে বেরিয়ে আসি। এসে দেখি ভদ্রমহিলা ফুটপাতে মুখ থুবড়ে পড়ে আছেন। পাশেই পুশ চেয়ারে তাঁর পাঁচ মাসের শিশু। তাঁর (কুলসুমার) অনেক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। আমি তাঁর পালস (নাড়ি) পরীক্ষা করেছিলাম, কিন্তু সেটি কাজ করছিল না। আমি তাঁর ঘাড়ে ছুরির ক্ষত দেখে সিপিআর করার চেষ্টা করেছি। এ সময় একজন চিকিৎসক গাড়িতে করে ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনিও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। এরপর পুলিশ ও অ্যাম্বুলেন্সের কর্মীরা কুলসুমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। পুলিশ এই ঘটনার জন্য হাবিবুর রহমান মাসুমের ভাইকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
২৭ বছর বয়সী বাংলাদেশী কুলসুমা আক্তারকে স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ঘটিকায় সিটি সেন্টারের সামনে ছুরিকাঘাত করে ঘাতক স্বামী হাবিবুর রহমান মাসুম। গেল মঙ্গলবার ভোরে ২৫বছর বয়সী ঘাতক হাবিবুর রহমান মাসুমকে বাকিংহামশায়ারেরর আইলবারি থেকে গ্রেফতার করে স্থানীয় পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই পুরো ব্রিটেন জুড়ে মাসুমকে গ্রেফতার করতে গোয়ান্দা দৃস্টি রাখা হয়। হামলার সময় মায়ের সাথে পুশচেয়ারে ছিলো তাদের ৫ মাস বয়সী শিশু সন্তান।
এই ঘটনাকে খুবই দু:খজনক বলছে ব্রিটিশ পুলিশ। পুলিশ জানায় শনিবার সাড়ে তিনটার দিকে সন্তানকে নিয়ে ব্র্যাডফোর্ড সিটি সেন্টারের যাচ্ছিলেন কলসুমা আক্তার। এসময় তিনি স্বামী কর্তৃক ছুরিকাঘাতের স্বীকার হন। ঘটনার পরপরই এ্যাম্বুলেন্স আসলেও ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ২৭ বছর বয়সী কলসুমার।এই ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের কোন ব্যর্থতা আছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখতে তদন্ত করবে পুলিশ প্রশাসনের ইন্ডিপেন্ডেট অফিস ফর পুলিশ কন্ডাক্ট।

কলসুমা ও মাসুমের মধ্যে পারিবারিক কলহের সৃস্টি হলে কলসুমাকে লাঞ্চিত করা এবং হত্যার হুমকির অভিযোগে এর আগেও মাসুম গ্রেফতার হয়, পরে গেল নভেম্বর মাসে বিশেষ শর্তে আদালত জামিন দেয় মাসুমকে। আদালতের নথিতে দেখা যায় যে মিঃ মাসুম, যিনি ওল্ডহামের বাসিন্দা, তার বিরুদ্ধে ২৪ নভেম্বর মিসেস আক্তারকে হত্যার হুমকি এবং ২৩ নভেম্বর তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। দুটি অপরাধই ম্যানচেস্টারে ঘটেছে বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে।

উল্লেখ্য দুই বছর আগে মাসুম তার স্ত্রীকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেনে আসানে। তাদের উভয়ের দেশের বাড়ী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়। কুলসুমা এ ঘটনা ভাইদের জানালে পরদিন সকালে মাসুম ছুরি নিয়ে তাঁকে আবারও মারতে যান। নিজেকে বাঁচাতে বাথরুমে আশ্রয় নেন কুলসুমা। সেখান থেকে ভাবিকে ফোন দিয়ে পরিস্থিতি জানান। তাঁর ভাবি বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানান।আকতার হোসেন আরও বলেন, পুলিশ এসে মাসুমকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। এ শহরে আর বাস করতে পারবেন না, এই শর্তে জামিনে মুক্তি পান মাসুম।এসব ঘটনার পর আবারও কুলুমার বাসার দরজায় নক করে কুলসুমাকে হত্যার চেষ্টা করে মাসুম। বিষয়টি পুলিশকে জানালে নিরাপত্তার কারণে কুলসুমাকে পার্শ্ববর্তী শহর ব্রাডফোর্ডে সরিয়ে নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু সেখানেই কুলসুমাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে মাসুম।

জানা যায়, মাসুম ব্রাডফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের ছাত্র। দুই বছর আগে উচ্চশিক্ষার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে আসেন। পরে তাঁদের এক সন্তানের জন্ম হয়। তখন তাঁরা গ্রেটার মানচেষ্টারের ওল্ডহাম শহরে বসবাস করতেন। উভয়ের বাড়ী সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...