চার বছর পর মুখোমুখি: একে অপরের বিরুদ্ধে যা বললেন বাইডেন-ট্রাম

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,

  • প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে চার বছর পর প্রথমবারের মতো জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প বিতর্কে মুখোমুখি হওয়া নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে। এরই মধ্যে বিতর্কে একে অন্যকে লক্ষ্য করে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ করেছেন দুই প্রধান প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনকে সামনে রেখে একে অন্যের মুখোমুখি হলেন।

পররাষ্ট্র নীতি, অর্থনীতি, সীমান্ত ইস্যু, সামাজিক নিরাপত্তা, চাইল্ড কেয়ার, কংগ্রেস ভবনে হামলার ঘটনা এবং গর্ভপাতসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলার সময় তারা একে অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলার অভিযোগ আনেন এবং পরস্পরকে তীব্র বাক্যবাণে জর্জরিত করার চেষ্টা করেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থনীতি সামলানো, পররাষ্ট্র নীতির রেকর্ড ও ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসীর বিষয়ে বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন। অন্যদিকে আদালতে সম্প্রতি ট্রাম্পের সাজার প্রসঙ্গ তুলে ট্রাম্পকে ‘গণতন্ত্রের জন্য হুমকি’ বলে উল্লেখ করেন বাইডেন।

বিতর্কে ট্রাম্প শেষ করেছেন এই বলে যে, আমেরিকার মানুষ এখন জাহান্নামে বাস করছে। তার ভাষায়, ‘সাড়ে তিন বছর ধরে আমরা জাহান্নামে বাস করছি’। অন্যদিকে বাইডেন তার শেষ বক্তব্যে আমেরিকানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন, তিনি কর কমিয়ে আনতে চান। একই সাথে দাবি করেন, ট্রাম্প কর বাড়িয়ে দিবেন।

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ডেমোক্র্যাট দলের বাইডেন ও রিপাবলিকান ট্রাম্প পরস্পরের মুখোমুখি হলেন। বিতর্কে কথা বলার সময় বাইডেনের কণ্ঠ খসখসে শোনাচ্ছিল। এ নিয়ে তার প্রচার দল বলেছে, গত কয়েকদিন ধরে তার ঠাণ্ডা লাগার কারণে কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে।

ট্রাম্প নির্বাচনের ফল মানবেন? বিতর্ক পরিচালনাকারী সিএনএন এর সঞ্চালক ট্রাম্পের কাছে দুবার জানতে চান, নির্বাচনে যে-ই জিতুক তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনের ফল মানবেন কি-না। তিনি বারবার প্রশ্নটি উপেক্ষা করছিলেন, বরং রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে চলে যাচ্ছিলেন। এরপর আবারো তাকে প্রশ্নটি করা হয়। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘যদি এটি সুষ্ঠু, আইনগত ও ভালো নির্বাচন হয় তাহলে অবশ্যই’। একই সাথে তিনি ২০২০ সালের নির্বাচন নিয়ে তার বড় ধরনের কারচুপির অপ্রমাণিত দাবির পুনরাবৃত্তি করেন।

প্রার্থীদের বয়স প্রসঙ্গঃ বাইডেনকে তার বয়স সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তিনি যখন দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ করবেন তখন তার বয়স হবে ৮৬। তিনি হবেন সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট জবাবে বলেন, একসময় তিনি সবচেয়ে কমবয়সী আইন প্রণেতা বলে সমালোচনার শিকার হতেন এবং ট্রাম্প ‘তিন বছরের ছোট এবং অনেকটাই কম যোগ্য’। রেকর্ড দেখুন। দেখুন তিনি যে ভয়ানক পরিস্থিতি রেখে গিয়েছিলেন সেখান থেকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছি।

অন্যদিকে ট্রাম্পকে বলা হয়, তার বয়স এখন ৭৮ বছর এবং দ্বিতীয় মেয়াদ শেষে তা হবে ৮২ বছর। জবাবে ট্রাম্প বলেন, তার স্বাস্থ্য ভালো এবং তিনি এ সময় গলফ খেলার প্রসঙ্গও টেনে আনেন। ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি এটা করেন না। তিনি ৫০ গজ দূরেও বল পাঠাতে পারেন না। আমার মনে হয় আমি ২৫-৩০ বছর আগের মতোই ভালো অবস্থায় আছি। সত্যি বলতে, আমি এখন আরও উজ্জ্বল’।

শিশু যত্নের খরচ প্রসঙ্গঃ শিশু যত্নের খরচ মেটানোর সক্ষমতা নিয়ে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল খরচ কমিয়ে আনতে তিনি কী করবেন। জবাবে বলতে গিয়ে ট্রাম্প যথারীতি যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত ইস্যু টেনে এনে বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন।

জবাবে পাল্টা আক্রমণ করে বাইডেন বলেন, ট্রাম্প হলেন ‘আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট’। এরপর তিনি বলেন, শিশু যত্নের খরচ কমাতে ট্রাম্প খুব কম ব্যবস্থাই নিয়েছিলেন। পরে ট্রাম্প তিনি প্রেসিডেন্ট থাকাকালে কী করেছেন সেটি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে সবচেয়ে ভালো মনে করে এবং আমি যদি আরও চার বছর পাই তাহলে আমি আমার সেরাটাই দিবো’।

‘বীরেরা রাস্তায় বাস করছে’ ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি জো বাইডেনের মতো আর কাউকে ‘এতো মিথ্যা’ বলতে দেখেননি এবং ভেটেরান অর্থাৎ আমেরিকার সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যদের বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে সমালোচনা করেন বাইডেনের। তার দাবি, ‘তিনি (বাইডেন) যাই বলছেন সব মিথ্যে’।

এ পর্বেও ট্রাম্প সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়ার অভিযোগ করেন বাইডেনের বিরুদ্ধে এবং বলেন “লাখ লাখ মানুষ” পাবলিক পেনশন স্কিমে যোগ হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তারা ভেটেরান অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট ও আমাদের ভেটেরানদের সাথে যা করেছে তা অবিশ্বাস্য। আমাদের বীরেরা এখন রাস্তায় বাস করে। আর এইসব লোকেরা (অভিবাসী) থাকে বিলাসবহুল হোটেলে।

সূত্র: বিবিসি

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...