নৈসর্গিক ও রোমাঞ্চকর খৈয়াছরা ঝরনা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২ জুলাই ২০২৪, ৪:৩০ পূর্বাহ্ণ

পাথর বেষ্টিত পাহাড়ি ঝিরি পথ ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে আছে ছোট ছোট জলপ্রপাত। পাথর বেয়ে পানি গড়িয়ে যাচ্ছে পাহাড়ি ভূমিতে নিজস্ব পথে। এতসব পথের সৌন্দর্য মাড়িয়ে সোনালি ধানখেত, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর বিস্তীর্ণ সবুজের সমারোহ পেরিয়ে দেখা মেলে কাক্সিক্ষত খৈয়াছরা ঝরনা। প্রকৃতির এক বিস্ময়ের নাম খৈয়াছরা ঝরনা। যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ ধুয়ে-মুছে সজীব নিঃশ্বাস নিতে আসা প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের কণ্ঠে যেন জীবনানন্দের কবিতা, ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ দেখিতে চাহি না আর।’

প্রকৃতি ও প্রেমের মিশ্রণে তৈরি এই চিত্রকল্পটি বাস্তব এক পটভূমি। এই গল্পের ভূমিকায় আছে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের গহীন পাহাড়ে অবস্থিত খৈয়াছরা ঝরনা। তবে বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল বেড়ে গেলে ঝরনাগুলো রূপ নেয় ভয়ংকর সৌন্দর্যে। তখন পাহাড়ি ঢল বেড়ে গেলে ঝরনা পর্যন্ত পৌঁছানো অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই প্রবল বৃষ্টিতে পর্যটকদের ঝরনায় যেতে নিরুৎসাহিত করা হয়।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পার্শ্বে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় চার কিলোমিটার পূর্বে এই ঝরনার অবস্থান। এর মধ্যে ১ কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হবে হেঁটে। ২০ টাকার টিকিট কেটে বাঁশের সাঁকো, ধানখেত, আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ, ছরা এবং চারটি পাহাড় পেরিয়ে যেতে হবে প্রকৃতির এই বিস্ময় সান্নিধ্যে।

জানা গেছে, ‘স্থানীয় ভূঁইয়া টিলা নামক স্থানে প্রায় ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রবাহিত হচ্ছে ঝরনাটি। পাহাড়ি ঝোপের কারণে মানুষ তখন খুব একটা ওই জায়গায় যেত না। গত ১০-১৫ বছর থেকে সেখানে পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।’

প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা এ ছবি দেখে মুগ্ধ ভ্রমণপিপাসু মানুষ। যারা একবার খৈয়াছরা ঝরনা দেখেছেন তাদের মনে একটিই প্রশ্ন উঁকি দেয় বারবার ‘দেশে এমন সৌন্দর্যের ঝরনা দ্বিতীয়টি আর আছে কি না।’ এখানে আসা অনেক পর্যটকের মতে, ‘দেশের মাধবকুণ্ড ও শুভলং ঝরনার থেকেও বেশি রূপ এটির।’

গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খৈয়াছরা ঝরনা এলাকায় পর্যটকের ঢল নেমেছে। তাদের অনেকেই এসেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝরনার অপরূপ দৃশ্যের ছবি ও ভিডিও দেখে। লালবাগের আলতাফ হোসেন, ঢাকার হাসিবুল ফাহাদ, চট্টগ্রামের আনোয়ারার রফিকুল ইসলাম ফেসবুকে খৈয়াছরা ঝরনার ছবি, ভিডিও চিত্র দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। তাই সবাই মিলে এসছেন এখানে।

ঝরনায় ঘুরতে আসা সাফিন রুদ্র বলেন, ‘দেশের বিখ্যাত অনেক প্রাকৃতিক ঝরনা আমি দেখেছি। খৈয়াছরা ঝরনার যে সৌন্দর্য তা দেশে দ্বিতীয়টি আর আছে কি না আমার জানা নেই।’

খৈয়াছরা ঝরনার মোট আটটি ধাপ। বেশির ভাগ পর্যটক প্রথম ধাপের সৌন্দর্য দেখেই মাতোয়ারা। পাহাড়ের উঁচুতে হওয়ায় বাকি ধাপগুলোয় যাওয়া কিছুটা কষ্টকর বলে অনেকেই ঝরনার প্রথম ধাপের সৌন্দর্য দেখেই তৃপ্তি নিয়ে ফিরে আসেন। ওই দিন ঝরনার শেষ ধাপ পর্যন্ত ঘুরে আসা পর্যটক হাসিবুল শাহী বলেন, অনেক প্রশস্ত জায়গাজুড়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে শেষ ধাপে। ঝরনার শেষ ধাপ পর্যন্ত যারা আসবেন তারা বাংলাদেশের সেরা কোনো প্রাকৃতিক ঝরনা উপভোগ করবেন নিঃসন্দেহে। তবে বৃষ্টিতে এটি খুবই বিপজ্জনক।

চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে আসা পর্যটক রফিকুল ইসলাম বলেন, অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে ঝরনায় আসতে। পাহাড় আর ঝরনার সৌন্দর্যে তারাও খুব মুগ্ধ। তবে রাস্তার অসুবিধার কারণে ঝরনায় আসা কষ্টসাধ্য বলে মন্তব্য করেন এই পর্যটক। যেহেতু টিকিট সিস্টেম চালু করেছে দাম ২০ টাকা করে সেক্ষেত্রে পর্যটকদের সুবিধার জন্য পথে যে জায়গায় পানির স্রোত বেশি একটু বিপজ্জনক সেখানে বাঁশ কিংবা রশি দিলে পর্যটকদের যাওয়ার সুবিধা হয়।

এখানে আসা পর্যটকদের খাবারের জন্য গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বিভিন্ন খাবারের দোকান। খৈয়াছরা ঝরনাকে ঘিরে স্থানীয়রা ভ্রমণ গাইড হিসেবে কাজ করছেন। পর্যটকদের ঝরনায় নিয়ে যাওয়া-আসা ও বিপজ্জনক এলাকা থেকে রক্ষায় সহায়তা করেন তারা। এজন্য পর্যটক ভেদে প্রতিবার ৫০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় হয় তাদের। এ ছাড়া স্থানীয় বেকার যুবকরা লাঠি, এংলেট বিক্রিসহ অস্থায়ী দোকানের মাধ্যমে আয়ের উৎস তৈরি করেছেন।

সূত্র : প্রতিদিনের সংবাদ

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...