শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সহিংসতার নিন্দা যুক্তরাষ্ট্রের

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২৪, ৩:০৪ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবারও নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ প্রতিক্রিয়ায় দেশটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছে।

একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আন্দোলনে সহিংসতার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখছে বলেও জানানো হয়েছে। ঢাকা এবং ওয়াশিংটন – দুই স্থান থেকেই বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনে নজর রাখার কথা জানিয়েছে দেশটি।

স্থানীয় সময় বুধবার (১৭ জুলাই) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। এদিনের ব্রিফিংয়ে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার প্রশ্নও সামনে এসেছে।

এমনকি বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হঠাৎ নীরব হয়ে যাওয়ার বিষয়েও উঠেছে প্রশ্ন। যদিও বাংলাদেশ ইস্যুতে নীরব থাকার বিষয়টি মানতে রাজি নয় যুক্তরাষ্ট্র।

এদিনের ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এবং তাদের ওপর হামলা-সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ছাত্র বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অন্তত ছয় ছাত্র নিহত হয়েছেন। ক্ষমতাসীন সরকারের দলীয় শাখা ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশেষভাবে নিষ্ঠুর আচরণ করছে, বিশেষ করে মেয়ে ও নারীদের ওপর। এবং তারা গত দেড় দশক ধরেই বারবার এটি করে আসছে। আপনারা কি ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করবেন?

জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, এই বিষয়ে (ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন বিবেচনা করা) আমি নির্দিষ্ট করে কোনও কথা বলব না। তবে আমি বলব, ঢাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভের সময় যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, তা আমরা নজরে রেখেছি।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবাদ শান্তিপূর্ণভাবে করার বিষয়েও আমরা অব্যাহত আহ্বান জানিয়েছি। একইসঙ্গে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে যেকোনও ধরনের সহিংসতার নিন্দা জানাই আমরা।

এরপর ওই সাংবাদিক কোটাবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বোরোবি) অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের তরুণ ছাত্র আবু সাঈদ তার সহপাঠীদের বাঁচাতে পুলিশের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের বাহিনী তাকে গুলি করতে দ্বিধা করেনি এবং এমনকি সে নিজেও বুঝতে পারেনি যে, বন্ধুদের উদ্ধার করার চেষ্টা করার সময় তাকে গুলি করা হয়েছে। নির্বাচনের ঠিক আগে থেকে এভাবেই ক্ষমতা ধরে রেখেছেন শেখ হাসিনা। আমি দুঃখিত– মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, সারা বিশ্ব বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে এবং এ জন্য মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু যখন জনগণের (ভোটের) অধিকার ছিনতাই করা হলো, তখনই হঠাৎ আপনারা নীরব হয়ে গেলেন। কেন এমন হলো?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে– আপনি যেটা বলেছেন তা ঠিক নয়। আপনি আমাকে এই সপ্তাহজুড়ে বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে কথা বলতে শুনেছেন – গত সোমবার বলেছি – আমার মনে হয় আমি গতকালও আবার বলেছি; আমি আজ আবারও বলছি – শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে যেকোনও সহিংসতার নিন্দা করি আমরা।

তিনি বলেন, আমরা এই বিষয়টিকে (ঢাকায়) আমাদের দূতাবাস থেকে খুব কাছ থেকে দেখছি এবং ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা বিক্ষোভের ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন। বিক্ষোভে লোক মারা যাওয়ার, নিহত হওয়ার খবরও আমরা দেখেছি।

মিলার আরও বলেন, এবং আমরা আবারও, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার বিষয়ে মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।

এরপর আরও এক সাংবাদিক বাংলাদেশ বিষয়ে পৃথক প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে গত সোমবার থেকে এই মঞ্চ থেকে আপনি বাংলাদেশে যা ঘটছে তা নিশ্চিত করেছেন এবং সেটির নিন্দাও করেছেন। ইতোমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে ছয় ছাত্রের। এবং যখন আমরা এখানে কথা বলছি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই জাতির উদ্দেশ্যে টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন এবং এই ছাত্রদের কীভাবে হত্যা করা হয়েছে তা তদন্ত করার জন্য স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিটি করার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি আরও ঘোষণা করেছেন, সরকার (নিহতদের) প্রতিটি পরিবারকে সুরক্ষার জন্য চাকরি এবং তাদের প্রয়োজনীয় আয়ের বিষয়ে খেয়াল রাখবে। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি বর্তমানে বিচারাধীন বিষয়। এবং বিরোধী বিএনপির একজন সিনিয়র নেতার অডিও ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে– সহিংস ছাত্র আন্দোলনটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশকে ব্যাহত করার জন্য বিরোধীদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছে এবং এটি শিবির, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মাধ্যমে বানচাল করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, প্রথম বিষয় হচ্ছে– আমি সেই ক্লিপটি দেখিনি, তাই আমি কোনোভাবেই এই বিষয়ে মন্তব্য করতে পারি না। আর বাদ-বাকি আপনি যেসব প্রশ্ন করেছেন সেসব বিষয়ে কোনও আপডেট আমার কাছে নেই। ১০ থেকে ১৫ মিনিট আগেই আমি ঠিক এই বিষয়েই আমার উত্তর দিয়েছি।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...