শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারে চাপে বিএনপি

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতার বাইরে থাকাবস্থায় একাধিকবার শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের কারণে চাপের মুখে পড়েছে বিএনপি। তবে বেশিরভাগ সময় নিজেদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বিপুল সংখ্যক তৃণমূলের নেতাকর্মী কারান্তরীণ হয়েছেন। কিছুদিন পর ধীরে ধীরে সবাই মুক্তিও পেয়েছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে এবার আকস্মিক চাপের মুখে পড়েছে দলটি। ইতোমধ্যে দলটির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যসহ কেন্দ্রীয় একাধিক শীর্ষ ও মধ্যম সারির নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনেও আছেন অনেকে। ফোনে যোগাযোগও করা যাচ্ছে না অনেকের সঙ্গে। গ্রেপ্তার হওয়া নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ মাসখানেক আগে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনার পর এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে বিএনপিকে। সরকার এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের আড়ালে এই সহিংসতার পেছনে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের সমর্থন থাকলেও কোটা আন্দোলনে বিএনপির অংশগ্রহণ ছিল না।

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানায় ২০১টি মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ২২০৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৮ দিনে (১৭-২৪ জুলাই) সারাদেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে চার হাজার। প্রতিদিনই গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়ছে। যাদের মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী বেশি।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) কে এন রায় নিয়তি জানিয়েছেন, সহিংসতা নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

এসব কারণে বিএনপির নেতাকর্মীদের আশঙ্কা গ্রেপ্তারের সংখ্যা আরও বাড়বে। ফলে তাদের চাপও বাড়বে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার করতে বাইরে থাকা নেতাদের বাসায় বাসায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা হানা দিচ্ছেন। আতঙ্কে অনেকে নিজেদের বাড়িঘর থেকে অন্যত্র অবস্থান করছেন। ঘনিষ্ঠদের বাইরে কারও সঙ্গে যোগাযোগও রাখছেন না অনেকে।

দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনা চলছে, নিজেদের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তারের একাধিক নজির আছে। কিন্তু অন্যদের আন্দোলনে সমর্থন দেওয়ায় এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে তা ভাবেননি খোদ দলটির নীতিনির্ধারকরা।

জানা গেছে, হঠাৎ এমন বিরূপ পরিস্থিতির কারণে নতুন করে কর্মসূচি দেওয়া নিয়েও বেকায়দায় পড়েছে বিএনপি। একদিকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ। গত ১৭ জুলাই পুলিশ কার্যালয়ে তল্লাশি করে অস্ত্র, ককটেল উদ্ধার দেখানোর পর মূল ফটকে তালা দিলেও মাঝে নেতাকর্মীরা তালা ভেঙেছিলেন। কিন্তু এখন আবার তালাবদ্ধ রয়েছে নয়াপল্টনের কার্যালয়। অন্যদিকে দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও গ্রেপ্তার হয়েছেন। ফলে এখন আর কেউ নয়াপল্টনের দিকে পা ফেলছেন না।

এদিকে গত কিছুদিন গুলশানে দলের চেয়ারপাসনের কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তারা সবাই ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নয়াপল্টনের অফিসে ভাঙচুরের অভিযোগ করা হয়েছে।

বিএনপির মধ্যম সারির একজন নেতা ঢাকা মেইলকে বলেন, শীর্ষ নেতারা হঠাৎ গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকি যারা আছেন তারাও ঘরে থাকতে পারছেন না। এখন নতুন করে কর্মসূচি কি হবে, কবে নেওয়া হবে সে সম্পর্কে কোনো আপডেট নেই।

অবশ্য কর্মসূচি না থাকলেও প্রতিনিয়ত বিএনপি মহাসচিব গণমাধ্যমে কথা বলছেন। দলের পক্ষ থেকে বিবৃতিও দিচ্ছেন।

দলের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কথা বলতে বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দুজন ভাইস চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হয়। দুজনের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। অনেকবার কল করলেও একজন ফোন ধরেননি।

এদিকে নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি বিএনপির পক্ষ থেকে। কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ থাকায় গ্রেপ্তারকৃতদের সঠিক হিসাব বের করার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন দফতর সংশ্লিষ্ট একজন বিএনপি নেতা।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান ঢাকা মেইলকে বলেন, গত শুক্রবার থেকে বুধবার পর্যন্ত সারাদেশে দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সঠিক হিসাব এখনও করা সম্ভব হয়নি।

মাস ঘুরতেই ফের কারাগারে : কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আমির খসরু সাড়ে তিন মাস জেল খাটার পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।

গত ১ মার্চ জামিনে মুক্তি পাওয়া চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপনও এবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। এবার গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল গত নভেম্বরে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখন তিনি গাজীপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুও গ্রেপ্তার হয়েছেন। এক মাসের বেশি কারাগারে থাকার পর গত ৫ জুন জামিনে মুক্তি পান তৎকালীন যুবদলের সাবেক সভাপতি টুকু। ঢাকা জেলা সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরীও এবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন নিপুণ রায়।

এবার গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু ৯ মাস কারাগারে থাকার পর গত ৪ মার্চ মুক্তি পেয়েছিলেন।

ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নিরবও এবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিভিন্ন মামলায় ১৫ মাসের বেশি সময় কারাবাসের পর গত ২১ জুন জামিনে মুক্ত হয়েছিলেন নিরব। বিএনপির আরেক নেতা ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকও গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর আগে তিন মাস ছয় দিন কারাভোগের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন সাবেক এই ফুটবলার।

গত চার মে জামিনে কারামুক্ত হন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। এবারের উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে তিনিও গ্রেপ্তার হয়েছেন।

এবার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল সাড়ে তিন মাসের বেশি সময় কারাভোগের পর গত ফেব্রুয়ারিতে জামিনে মুক্তি পান। তিনিও এবার গ্রেপ্তার হয়েছেন।

বিএনপি চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান শারীরিকভাবে অসুস্থ। দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর গত ২৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এবারও তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ রশিদুজ্জামান মিল্লাতও গ্রেপ্তার হয়েছেন।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...