‘আমার বুকের ধন তুরাবকে পুলিশ কেন মারলো?’

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৬ জুলাই ২০২৪, ৭:৪৮ অপরাহ্ণ

সিলেট নগরীর অভিজাত এলাকাগুলোর একটি যতরপুর আবাসিক এলাকা। সারি সারি উঁচু ইমারত, সাজানো পরিবেশ আর ঠান্ডা বাতাস কিছুটা স্বস্তি দিলেও এর মধ্যে যেন ভেসে আসছে বেদনার সুর। এই এলাকার ১০৫ নম্বর নবপুষ্প ভবনটি থমকে আছে আট দিন ধরে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত তরুণ সাংবাদিক তুরাব পরিবার নিয়ে থাকতেন এ ভবনের তৃতীয় তলায়। ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে সেখানে বিলাপ করছেন ষাটোর্ধ মমতাজ বেগম। একটু পর পর জ্ঞান হারাচ্ছেন, আবার চেতনা ফিরলেই কেঁদে উঠছেন। তার একটাই প্রশ্ন, ‘আমার বুকের ধন তুরাবকে পুলিশ কেন মারল?’

গত ১৯ জুলাই সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে সাংবাদিক এ টি এম তুরাব নিহত হন বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। সাংবাদিক তুরাব দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি স্থানীয় দৈনিক জালালাবাদ পত্রিকায় কাজ করতেন।

তুরাবের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুল ইসলাম বলেন, তার শরীরে ৯৮টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলিতে তার লিভার ও ফুসফুস আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। মাথায় ঢিলের আঘাতও ছিল। এ কারণেই তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

তুরাবের বড় ভাই আবুল হাসান মো. আজরফ জাবু বলেন, এখন মাকে নিয়ে টানাটানি। নাওয়া-খাওয়া নেই। হাসপাতাল আর বাসায় দৌড়াদৌড়ি। শুধু তুরাবের জন্য কাঁদেন। তিনি আরও জানান, মাত্র দুমাস আগে লন্ডন প্রবাসী তানিয়া ইসলামকে বিয়ে করেন তুরাব। এর এক মাসের মাথায় লন্ডনে চলে যান তানিয়া। স্বামী হারিয়ে সেও বার বার মূর্ছা যাচ্ছে। ফোনে শুধু ভাই বলেই আর কোনো কথা বলতে পারছে না। স্বামীকে শেষবার ভিডিওকলে দেখতে চাইলেও নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট না থাকায় সেটাও সম্ভব হয়নি।

ওইদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও তুরাবের সহকর্মীরা জানান, ১৯ জুলাই বন্দরবাজার এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ চলছিল। এক পর্যায়ে পুলিশ গুলি শুরু করলে তুরাব চিৎকার করে মটিতে লুটিয়ে পড়েন।

oplus_2048

তুরাবের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শামসুল ইসলাম বলেন, তার শরীরে ৯৮টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গুলিতে তার লিভার ও ফুসফুস আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। মাথায় ঢিলের আঘাতও ছিল। এ কারণেই তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।

তুরাবের মৃত্যুর ঘটনায় গত বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত পুলিশ সদস্যদের আসামি করে মামলা করেছেন তার ভাই জাবু। মামলাটি আমলে নিলেও পুলিশের করা নাশকতার মামলার সঙ্গে সমন্বয় করে এ মামলার তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ। তিনি বলেন, মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পাশাপাশি গত ১৯ জুলাই নাশকতার ঘটনায় পুলিশ যে মামলা করে তার সঙ্গে একীভূত করে তদন্ত করা হবে। ওই মামলাটি তদন্ত করা হবে হত্যা মামলা হিসেবেই।

এদিকে সাংবাদিক তুরাব নিহতের ঘটনার তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন এসএমপি কমিশনার জাকির হোসেন খান। পুলিশ কমিশনার বলেন, কী কারণে এবং কীভাবে সাংবাদিক তুরাব নিহত হয়েছেন তার তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিবেদক : হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী, সিলেট ব্যুরো প্রধান, দৈনিক ইত্তেফাক।

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh