সব
স্বদেশ বিদেশ ডট কম
গত ১৯ জুলাই শুক্রবার দৈনিক জালালাবাদ’র স্টাফ রিপোর্টার ও দৈনিক নয়া দিগন্ত-এর সিলেট প্রতিনিধি সাংবাদিক এটিএম তুরাব কর্তব্য পালনকালে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তুরাব হত্যার প্রতিবাদে যেমন সিলেটে সাংবাদিকরা বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। তেমনি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ইউরোপেও তুরাব হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং উপযুক্ত বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
গতকাল ২৬ জুলাই লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি দৈনিক জালালাবাদ সম্পাদক মুকতাবিস উন নুর, নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাবের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মামা সাবেক কাউন্সিলর ফানু মিয়া ও বিয়ানীবাজার প্রগতি এডুকেশন ট্রাস্টের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান ময়না।
সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাংবাদিক তুরাবের বড় ভাই ফ্রান্স প্রবাসী আবুল কালাম শরীফ। স্বদেশ বিদেশের পাঠকদের জন্য বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আজ আমি ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি । আমি একজন ফ্রান্স প্রবাসী । আমি ফ্রান্স থেকে আমার ভাই পুলিশের গুলিতে নিহত সিলেট প্রেস ক্লাবের সদস্য সাংবাদিক আবু তাহের মুহাম্মদ তুরাবেব হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি । আমার ভাই এটিএম তুরাব সিলেটের নন্দিত দৈনিক জালালাবাদের স্টাফ রিপোর্টার ও জাতীয় দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
দেশে চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনে গত ১৯শে জুলাই শুক্রবার বাদ জুম্মা সিলেটের বন্দরবাজার কালেক্টর জামে মসজিদ থেকে নামাজ শেষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সিলেট একটি মিছিল বের করে। মিছিলটির পিছন থেকে পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধা অমান্য করে মিছিল নিয়ে সামনে এগুতে চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দিলে এই সময় এটিএম তুরাব রাস্তার সাইড থেকে ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারন করার সময় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ দক্ষিনের উপ -পুলিশ কমিশনার গোলাম দস্তগীরের নের্তৃত্বে একদল পুলিশ সদস্য সরাসরি তুরাবের উপর এলোপাতাড়িভাবে গুলি বর্ষন করলে ঘটনাস্থলে মারাত্মক আহত গুলিবিদ্ধ তুরাব মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তুরাব আহত গুলিবিদ্ধ অবস্হায় মাটিতে গড়াগড়ি করলেও পাশে থাকা কোনো পুলিশ চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা কিংবা তাকে হাসপাতালে প্রেরণ করেননি। ঘটনার অনেকক্ষণ পরে তাকে সাংবাদিকরা রিক্সা যোগে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন । শুক্রবার থাকায় সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার না থাকায় একজন নার্স থাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন কিন্তু তুরাবের শরীরে প্রায় ৮৯ গুলিবিদ্ধ হওয়ায় প্রচুর রক্তকরণে তার অবস্থা দ্রুত অবনতি ঘটলে সাংবাদিকরা তাকে সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করেন। সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৬:৪৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আমার ভাই সাংবাদিক তুরাব ।
সিলেট ওসমানী হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তার সামছুল ইসলামের রিপোর্ট থেকে জানা যায় ৮৯ টি গুলি তুরাবের শরীরে লেগেছে। ছবি দেখলে বুঝা যাবে আমার নিরীহ নিরাপরাধ ভাইয়ের উপর পুলিশ কিভাবে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ঝাঝরা করেছে তার বুক। কোনো বিবেকবান মানুষ এভাবে বুকে সরাসরি গুলি করতে পারেনা। আমরা মনে করি আমার ভাইকে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত ভাবে পুলিশ খুন করেছে। রাষ্টের জনগনের নিরাপত্তার নিশ্চিত করা যে পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব সেই পুলিশ কিভাবে একজন সাংবাদিকের উপর নির্মমগুলি বর্ষণ করতে পারে আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন?
সুপ্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকদের কাছ থেকে আমরা জানতে পেরেছি ঘটনার সময় তুরাব জুম্মার নামাজ শেষে পুলিশ এবং বিএনপি’র মধ্যকার ছবি এবং ভিডিও ধারণ করেছিলেন তখন তিনি নিরাপদ দূরত্বে ও তার পরনে বড়ো করে লেখা প্রেসের জ্যাকেট এবং হেলমেট ছিলো। তাই ঘটনার আলমত দেখলে বুঝা যায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ দক্ষিনের উপ পুলিশ কমিশনার গোলাম দস্তগীরের নেতৃত্বে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত ভাবে তুরাবকে হত্যা করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি । তুরাব বিগত প্রায় দুবছর থেকে সিলেটের দৈনিক জালালাবাদে একাধিক ক্রাইম রিপোর্ট করে আলোচিত হয়েছেন। সর্বশেষ দেশবাপী আলোচিত চিনিকান্ড নিয়ে তিনি অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেন যে ঘটনার সাথে সিলেটের সীমান্তের থানা গুলোর দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। তাছাড়া অভিবাসন নিয়ে তুরাবের একটি রিপোর্টের জন্য সে জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়।
পুলিশ কর্তৃক তুরাবের উপর হামলা চালিয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি দাবি করছি। এই ঘটনায় জড়িত ৮১০ পুলিশকে আসামী করে সিলেট কোতোয়ালী থানায় আমার ভাই জাবুর আহমেদ বাদী হয়ে এজহার দায়ের করলেও পুলিশ এখনোও মামলা রেকর্ড করেনি।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
পরিবারের সবার ছোট এটিএম তুবার মাত্র দুমাস আগে যুক্তরাজ্য প্রবাসী তরুণীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । স্বামী হারিয়ে অকালে বিধবা বোনটি ও আমাদের পরিবারের সবার মানসিক অবস্হা খুবই খারাপ। বৃদ্ধ মা ছেলে হারানো ঘটনায় বার বার অজ্ঞান হচ্ছেন।
মেহেদির রং শুকানোর আগেই মাত্র ৩৩ বছর বয়সে এভাবে আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করা হবে তা আমরা ভাবতে পারিনি। আমার পিতা বিয়ানীবাজার প্রেস ক্লাবের প্রতিষ্টাতা সভাপতি ছিলেন এছাড়াও তিনি বিয়ানীবাজার পিএচজি হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। পিতার আদর্শকে লালন করে এটিএম তুরাব সাংবাদিকতা পেশায় এসেছিলেন । স্বপ্ন ছিল মানুষের জন্য কাজ করার
এই ঘটনায় মামলা রেকর্ড স্বাপেক্ষে সুষ্ঠু তদন্ত শেষে জড়িত পুলিশ সদস্যদের শাস্তি দাবী করছি। পরিশেষে উপস্তিত সকল সাংবাদিককে কষ্ট করে আসার জন্যই কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ।
Developed by: Helpline : +88 01712 88 65 03