চিন্ময় বহিষ্কৃত, তার বক্তব্য-কার্যক্রমের দায় ইসকনের নয়: সংগঠনটির নেতারা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ৬:৫৬ অপরাহ্ণ

আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইসকন) সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেছেন, বহিষ্কৃত চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের কর্মকাণ্ড ও বক্তব্য একান্তই তার ব্যক্তিগত। এর দায় ইসকন নেবে না। তিনি বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে ঘিরে ভারতের মন্তব্য বা অবস্থানের সঙ্গে ইসকনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কোনো দেশের কোনো ব্যক্তি চিন্ময়কে নিয়ে কী উদ্যোগ নিলো বা কী বলল… সে জন্য ইসকন দায়ী নয়।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর স্বামীবাগ আশ্রমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, চট্টগ্রাম আইনজীবী হত্যায় ইসকনকে অন্যায়ভাবে জড়িয়ে মিথ্যাচার চলছে। একইসঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য ইসকন দায়ী নয়। শিশুর সঙ্গে খারাপ কাজসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য অনেক আগেই চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

চারু চন্দ্র দাস আরও বলেন, গত ৩ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে ইসকন জানিয়ে দেয় যে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ইসকন বাংলাদেশের মুখপাত্র নন। তাই তাঁর বক্তব্য সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত।

ইসকন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ‘চলমান মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা’র সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে সুনাম ক্ষুণ্নের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ধর্মীয় সহনশীলতা বজায় রাখা ও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য যেকোনো প্রকার উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকা এবং সমাজে শান্তি, সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সবাই একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান চারু চন্দ্র দাস।

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জোরালো আহ্বান জানান ইসকন বাংলাদেশের সভাপতি সত্যরঞ্জন বাড়ৈ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইসকন বাংলাদেশ একটি অরাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সংগঠন, যা সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং মানবকল্যাণে নিবেদিত।

গত ২৫ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। গত ৩১ অক্টোবর বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত) বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনো সেখানে রয়েছে। ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়।

চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেন। ওইদিন চন্দন কুমার ধরসহ ৯ জন আসামির ইন্ধনে বাকি আসামিরা নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্ট স্তম্ভ ও আশপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

মামলার পর ইসকন প্রবর্তক ধাম অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও বার্তায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা প্রসঙ্গে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি মামলাটি সনাতনীদের আট দফা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অপচেষ্টা হিসেবে আখ্যা দেন।

ওই বিবৃতিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বলেন, ৫ আগস্টের পর সনাতনীদের ওপর চালানো হামলা-নির্যাতনের প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন। এই আন্দোলন বর্তমান সরকার কিংবা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নয়।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...