লন্ডনে ইংরেজী সাইনবোর্ডের পাশাপাশি বাংলা ও অন্যান্য ভাষার লিখা নিয়ে ব্রিটিশ এমপির বিরোধীতা সমর্থন ইলন মাস্কের

মতিয়ার চৌধুরী-লন্ডন,

  • প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ পূর্বাহ্ণ

বাঙ্গালী অধ্যুসিত পূর্বলন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেলে স্টেশন এবং মিডল সেক্সের সাউথ হল টিউব ষ্টেশনে  ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা  ও পাঞ্জাবী  সাইনবোর্ড দেখে ক্ষোভ জানিয়েছেন গ্রেট ইয়ারমাউথের এমপি রুপার্ট লোয়ি। তিনি বলেন  লন্ডন সহ ইংল্যান্ডের  সব স্টেশনের সাইনবোর্ডে ইংরেজীর পাশে অন্য কোনো ভাষার সাইনবোর্ড থাকা উচিত নয়।  এসব সাইন বোর্ডে শুধু ইংরেজি থাকা উচিত। তার এমন বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক।

২০২২ সাল থেকে পূর্ব লন্ডনের বাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকার এই টিউব স্টেশনে ইংরেজীর পাশাপাশি  বাংলা ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড লক্ষ্যকরা যায়। শুধু তাইন নয় আশির দশক থেকে ইষ্ট লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের বিভিন্ন রাস্তা ও শিক্ষা প্রতিষ্টনে ইংরেজীর  পাশাপাশি  বাংলা সাইবোর্ড লক্ষ্যনীয়। আর এটি চালু করতে ভূমিকা রেখেছেন বিভিন্ন সময়ে নির্বিাচিত ব্রিটিশ বাংলাদেশী কাউন্সিলার  ও কমিউনিটি নেতারা।  ইদানিং বাঙালীদের অনুকরেনে মিডলসেক্সের সাউথ হলে এই রেওয়াজ চালু করেছেন ভারতীয় বংশদ্বোত শিখ পাঞ্জাবীরা। পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেলে ষ্টেশনের মত সাউথ হল ষ্টেশনে ইংরেজীর পাশাপাশি পাঞ্জাবী ভাষার সাইন বোর্ড দেখা যায়। এর কৃতিত্বের দাবীদার শিখ কমিউনিটি নেতারা।  কিন্তু হঠাৎ করেই  এনিয়ে  ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ব্রিটিশ এমপি। তাঁকে সমর্থন করলেন মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্ক। তাদের সাথে ব্রিটিশদের অনেকেই এখন সোচ্চার।

সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে ডানপন্থি রিফর্ম ইউকের সদস্য লোয়ি এমপি  হোয়াইটচ্যাপেলে স্টেশনের ইংরেজি ও বাংলা নামের পাশাপাশি লাগানো দুটি সাইনবোর্ডের ছবি শেয়ার করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, এটা লন্ডন। এখানে স্টেশনে নাম ইংরেজিতে থাকা উচিত, কেবলই ইংরেজিতে।

তার এই পোস্ট অল্প সময়ের মধ্যেই বিতর্কের ঝড় তোলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের কেউ কেউ তাকে সমর্থন জানালেও অনেকে একাধিক ভাষায় সাইনবোর্ড রাখার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। অপরদিক সামাজিক মাধ্যম এক্স এবং টেসলার মালিক ইলন মাস্কও ‌‌‘ইয়েস’ লিখে লোয়িকে সমর্থন জানিয়েছেন।

 উল্লেখ্য ২০২২ সালে ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন অথরিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলাতেও হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের নাম লেখা হয়েছিল। ভারতে ব্রিটিশ শাসনে থাকার সময় থেকেই লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করেন বাঙালিরা।বর্তমানে এই বরোর মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষই বাঙালি। লন্ডনের  অধিকাংশ বাঙালিই থাকেন এই এলাকায়। সেখানে আগে থেকেই বহু দোকানের নাম রয়েছে বাংলা ভাষায়। দীর্ঘদিন ধরে দাবি ছিল হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনের নাম যাতে  ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলাতেও লেখা হয়।

সেই দাবি মেনে বাংলা ভাষাকে সম্মান দেওয়ার জন্য এই স্টেশনের নামে বাংলা যোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল লন্ডন প্রশাসন। এই স্টেশনের বিভিন্ন গেটের সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষায় নাম লেখার পাশাপশি স্টেশনের প্রবেশ পথেও বাংলা ভাষাতে লেখা রয়েছে, ‘হোয়াইটচ্যাপেলে স্টেশনে আপনাকে স্বাগত।’ তবে সেই বিষয়টি নিয়েই এখন বিতর্ক উসকে দিচ্ছেন এমপি রুপার্ট।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলা সাইনবোর্ডের প্রশংসা করেছেন। ২০২২ সালের মার্চে এক্সে তিনি লিখেছিলেন, গর্বের বিষয় যে লন্ডন টিউব রেল হোয়াইটচ্যাপেল স্টেশনে বাংলা ভাষাকে সাইনবোর্ডের ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি আমাদের ১ হাজার বছরের পুরনো ভাষার ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক গুরুত্ব এবং শক্তির প্রতীককে তুলে ধরে।পরে আরেক পোস্টে তিনি বলেছিলেন, এই পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে, প্রবাসীদের উচিত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বার্থে একসাথে কাজ করা উচিত। এটি আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের বিজয়। ব্রিটিশ এমপির এহেন মন্তব্য এবং মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের সর্থন নিয়ে প্রবাসী বাঙ্গালী ও অন্যান্য এথনিক সোইটিতে চলছে  আলোচনা সমালোচনা।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...