সব
স্বদেশ বিদেশ ডট কম
দৈনিক ছয় টাকার মজুরিতে সিলেটের বুরজান চা বাগানে কাজ শুরু করেছিলেন জ্যোৎসা বেগম। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে শুরু হওয়া তার কর্মজীবনে বেতন ও রেশন বৃদ্ধি পেলেও, কখনোই বেতন বন্ধ হয়নি এত দীর্ঘ সময়ের জন্য। কিন্তু বর্তমানে, ৬০ বছর বয়সী জ্যোৎসা বেগম ঈদের আগে বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি বলেন, “রোজার সময় বেতন বন্ধ থাকায় ঠিকমত ইফতারি খেতে পারি না, কচু শাক খেয়ে দিন কাটাচ্ছি, আর এখন কচু শাকও ঠিকভাবে পাচ্ছি না।”
তিনি আরও বলেন, “ঈদ আসছে, কিন্তু বেতন না পেলে বাচ্চাদের কাপড় কিনে দিতে পারব না। ঈদের পরে বেতন বা বোনাস দিয়ে কী হবে? আমরা ঈদে কাপড়ও পারতাম না। বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকানো যায় না।” কথায় কথায় ক্ষুব্ধ হয়ে জ্যোৎসা বেগম বলেন, “আজ বাধ্য হয়ে এসেছি। আমাদের একবারে মেরে ফেলুন, না খেয়ে থাকতে আর পারছি না। পানি খেয়ে আর কত দিন বাঁচব? আমাদের কষ্টের দিন চলছেই।”
বুরজান চা-কোম্পানির অধীনে তিনটি চা বাগান—বুরজান, ছড়াগাঙ, কালাগুল এবং বুরজান কারখানার শ্রমিকরা ১৪ সপ্তাহের বকেয়া বেতন ও রেশন দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। সোমবার সকালে সিলেটের লাক্কাতুরা থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে দুই ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। এ সময় শ্রমিকরা বেতনের দাবিতে স্লোগান দেন—“দুনিয়ার মজদুর, এক হও লড়াই কর,” “আমাদের বেতন দিতে হবে, দিয়ে দাও,” “বকেয়া বোনাস পরিশোধ করতে হবে” এবং “বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে হবে।”
শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, বেতন ও রেশন না পাওয়ায় তারা খাবার যোগাড় করতে পারছেন না, এবং তাদের ছেলে-মেয়েরা তিন বেলা খাবারও পাচ্ছে না। তারা বলেন, “কখন বেতন দেওয়া হবে, তা জানানো হয়নি।”
বিক্ষোভের এক পর্যায়ে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার উজ জামান উপস্থিত হয়ে শ্রমিকদের উদ্দেশে আশ্বাস দেন যে, বৃহস্পতিবার তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে এবং ঈদের পরে বকেয়া বেতন ও রেশনের সমস্যা সমাধান হবে।
বুরজান চা বাগানের ব্যবস্থাপক মো. কামরুজ্জামান জানান, সম্প্রতি চা বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে এবং কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ সহায়তা পাওয়ার চেষ্টা চলছে। তিনি আশাবাদী যে দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। তবে তিনি জানান, চা পাতার দাম না বাড়ায়, বাগানটি এখন লোকসানে চলছে এবং শুধুমাত্র শ্রমিকদের নয়, কর্মকর্তাদেরও বেতন বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, “শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আমরা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং জেলা প্রশাসক বাগান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।”
কালাগুল চা বাগানের শ্রমিক শিলা নায়েক অভিযোগ করেন, “আমরা সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করি, কিন্তু বেতন পাচ্ছি না। ১৪ সপ্তাহ ধরে রেশনও পাচ্ছি না। আমাদের শোষণ করা হচ্ছে।” তিনি বলেন, “কেউ আমাদের সাহায্য করতে আসেনি, সরকারের দৃষ্টি নেই আমাদের দিকে।”
এদিকে, বুরজান কারখানার শ্রমিকদের পঞ্চায়েত সভাপতি বিলাশ বুনাজী জানান, জেলা প্রশাসক আশ্বাস দিয়েছেন, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাগান পরিচালনা ও বেতন-ভাতা নিশ্চিত করা হবে। তিনি সতর্ক করে জানান, ঈদের পরে যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তবে সিলেটের ২২টি চা বাগান থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।