এক শ্রেণি রাষ্ট্রের কোষাগারকে নিজেদের সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করছে

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ৮:৩৯ অপরাহ্ণ


জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) মানব উন্নয়ন রিপোর্ট অফিসের সাবেক পরিচালক এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান মন্তব্য করেছেন, দেশে অবকাঠামোগত অগ্রগতি হলেও সামগ্রিক কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন এখনও অধরা। সমাজে আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্য অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা তৈরি করছে, যেখানে একটি বিশেষ শ্রেণি রাষ্ট্রের সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে ব্যবহার করছে।

রোববার সকালে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক (ইউএপি)-এ আয়োজিত “বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা: অর্জন, চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের পাশাপাশি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন ধরনের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে শুরু হওয়া শুল্ক যুদ্ধ, বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট ডেকে আনতে পারে।”

ড. জাহান সতর্ক করে বলেন, “এই শুল্ক যুদ্ধ ইউক্রেন যুদ্ধের মতোই ক্ষতিকর হতে পারে, যদিও ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। যুক্তরাষ্ট্র যখন শুল্ক আরোপ করে, তখন আমাদের কৌশলগত প্রস্তুতি থাকতে হবে। শুধু আমদানি বাড়িয়ে বা মার্কিন বাজারে রপ্তানি করে তাদের খুশি করা সম্ভব নয়, কারণ যুক্তির জায়গা সেখানে খুবই দুর্বল।”

তিনি বলেন, “আঞ্চলিকভাবে একত্রিত হয়ে বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। বিকল্প বাজার খুঁজে বের করে বৈচিত্র্যময় রপ্তানি কাঠামো গড়তে হবে। অন্য দেশের পণ্যের উপর আমাদের আরোপিত শুল্ক কমিয়ে দিলে পারস্পরিক বাণিজ্যের নতুন দরজা খুলে যেতে পারে।”

এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রসঙ্গে ড. জাহান বলেন, “উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে গেলে কিছু বিশেষ সুবিধা হারাতে হবে—যেমন, শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা বা সহজ শর্তে বৈদেশিক ঋণ। আমাদের অর্থনীতি কি এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত? এ নিয়ে গভীর চিন্তা দরকার।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি কঠিন সময় পার করছে। প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছে, তবে সংখ্যার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো—এই প্রবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনমান কতটা পরিবর্তন করছে। মূল্যস্ফীতি মানুষের জীবনে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করছে, যা রমজানে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণে এলেও আবার বেড়েছে।”

অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য অবিলম্বে কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে তাৎক্ষণিক, স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার অপরিহার্য। বিশেষ করে যখন মানুষের জীবন সংকটে পড়ে, তখন তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের মাধ্যমে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।”

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএপির ট্রাস্টি ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, কাইয়ুম রেজা চৌধুরী, স্কুল অব বিজনেসের ডিন অধ্যাপক ড. এম. এ. বাকি খালিলি, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রধান সারওয়ার আর. চৌধুরীসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানের সূচনায় ডিস্টিংগুইশড লেকচার সিরিজের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. নাজমা বেগম স্বাগত বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক উন্নয়নে এমন আয়োজনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh