ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে অনেকগুলো পেশা আজকের আলোচ্য বিষয় ধুনারি বা ধুনখর

মতিয়ার চৌধুরী-লন্ডন,

  • প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ থেকে অনেক গুলো পেশা ক্রমান্বয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, বেঁচে থাকার কারণে এসব পেশার মানুষজন অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছে। এসব পেশার অনেকটাই ছিল বংশানুক্রমিক । বংশানুক্রমিক পেশার মানুষের নামের মধ্যেই তাদের পেশার পরিচয় ফুটে উঠতো।

আমাদের দেশে আরো অনেক পেশার মানুষ ছিল বংশানুক্রমিক না হলেও হিন্দু মুসলিম ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষজন বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্তছিল । যান্ত্রিক সভ্যতার অগ্রগতির কারণে অনেক পেশা হারিয়ে যাচ্ছে। আমার আজকের আলোচ্য বিষয় ধুনারি বা ধূনখর। সিলেট অঞ্চলে এই ধুনারিদের বলা হয় ধুনখর।

এই পেশার লোকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিমুল তোলা দিয়ে বাশিল-রাজাই তোষক ইত্যাদি তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করতো। পূরান ঢাকার নারিন্দা এলাকায় ছিল পেশাদার ধুনারিদের বসবাস। এছাড়া বাংলার সব অঞ্চলেই ধুনারিদের দেখা যেত। বিশেষ করে এরা শীত মৌসুমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিমুল তোলা কিনে আনতো। প্রত্যেক বাড়িতেই প্রচুর শিমুল গাছ ছিল,গাছের মালিকেরা নিজেদর প্রয়োজন ছাড়া অতিরিক্তটা বিক্রি করে দিত।

এখন গ্রামাঞ্চলে শিমুল গাছ তেমন একটা দেখা যায়না। বাড়ী বাড়ী গিয়ে ধুনারিদেরও আর বালিশ তোষক তৈরী করতে হয়না। ক্রমান্বয়ে এই পেশাটা হারিয়ে যাচ্ছে। যারা এখন এসব পেশার সাথে সম্পৃক্ত তাদের কারো কারো ঠাই হয়েছে শহরের বড় বড় কারখানা গুলোতে। কারখানা গুলোতেও আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় লেপ-তোষক বালিশ ইত্যাদি। ধুনারিরা তাদের পেশা ছেড়ে দিয়েছে।

এছাড়াও আমাদের দেশে রয়েছে আরো কিছু বংশানুক্রমিক পেশা। যেমন শুক্লবৈদ্য মানে ধুপা-যারা কাড়র ধোয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো, মালাকার মানে মালি-এই মালাকাররা বাগানের পরিচর্জা করে জীবকা নির্বাহ করতো। কর্মকার যারা লৌহজাত দ্রব্যাদি যেমন দা, ছরি-চাকু, কুড়াল-কুদাল ইত্যাদি তৈরী করে জীবন চালায়। শব্দকর মানে ডোকলা এরা বংশানুক্রমিক ভাবে বিভিন্ন অনুঠানে ঢোল বাজাতো সেই সাথে এরা মাটির ছিকর তৈরী করে ছিকর বিক্রি করে জীবন চালাতো।

নমসুদ্র ও পাঠনি মানে জেলে, মাছ ধরা ও বিক্রি করা ছিল এদের বংশানুকিম পেশা। কুমার যারা বংশানুক্রকিম ভাবে মাটির হারি পাতিল তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করে। চন্দ্রবুদ্ধি মানে নাপিত এসব পেশার অধিকাংশই ছিল নিম্ন বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের।

আবার উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের নামের সাথে তাদের পেশার পরিচয় পাওয়া যেত যেমন অচার্জ যাদের বংশানুক্রমিক পেশা ছিল হাত দেখে মানুষের ভাগ্য বলে দেওয়া, চক্রবর্তি ও ভট্রচার্জ এরা বংশানুক্রকিম ভাবে পূজারি ব্রাম্মণ। বৈদ্য বংশানুক্রমিক ভাবে কবিরাজ, বাইনদের পেশা ছিল বংশানুক্রমিক ভাবে বাজনা বাজানো। বর্তমান সময়ে এসব পেশার ৯০%ই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ক্রমান্বয়ে প্রতিটি পেশা ও তাদের কর্ম সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা বরব।

Print This Post Print This Post

এই সম্পর্কিত আরও খবর...