সব
মতিয়ার চৌধুরী, লন্ডন,
“তোমাদের ইতিহাস জানো। ভুলে যেও না, এই স্বাধীনতা অনেক রক্তে কেনা। তোমাদের দায়িত্ব হলো সেই সত্যকে সযত্নে বহন করা কথায়, লেখায়, চলচ্চিত্রে, বা হৃদয়ে।” ১২ মে ২০২৫ সোমবার সকালে পূর্বলন্ডনের বার্কিং এন্ড ডেগেনহ্যাম টাউন হলের মেয়রস পার্লারে ব্রিটিশ বাংলাদেশী মেয়র মইন কাদরি আয়োজিত এক বিশেষ কফি সকালে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের উদ্দেশ্যে কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ এসব কথা বলেন। কিংবদন্তি চলচিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ ও তাঁর স্ত্রীকে স্বাগত জানাতে মেয়র পার্লারে উপস্থিত হন ব্রিটিশ বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট জনেরা। পুরো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন Soudh সংগঠনের পরিচালক মি. ফয়সাল।
গৌতম ঘোষ স্মৃতিচারন করছিলেন তখন কেবল একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা নয়, একজন ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী হয়ে কথা বলেন। তিনি গভীর আবেগে স্মরণ করেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর অভিজ্ঞতা এবং কীভাবে তাঁর শিল্প ও কর্ম এই ঐতিহাসিক সংগ্রামের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তিনি বলেন, “যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমি কাছ থেকে দেখেছি লক্ষ লক্ষ শরণার্থী কীভাবে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে এসেছে। আমি তখন ক্যামেরা হাতে সেই কষ্ট, সেই বেদনাকে ধারণ করতে চেয়েছি। আমি ডকুমেন্টারি করেছি, সাহায্য করেছি বিভিন্ন ত্রাণশিবিরে। যুদ্ধ শুধু বন্দুকের নয়, মানুষের মর্যাদা বাঁচানোর লড়াই—সেই কথাই আমি বারবার আমার ছবির মাধ্যমে বলতে চেয়েছি।”
তিনি বলেন কীভাবে তাঁর চলচ্চিত্র পদ্মা নদীর মাঝি, শঙ্খচিল, এমনকি কিছু তথ্যচিত্রের মধ্যেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা, যুদ্ধকালীন মানবিক বিপর্যয় এবং পরবর্তী পুনর্গঠনের চিত্র বারবার ফিরে এসেছে। উপস্থিত সকলে তখন নীরব হয়ে যান—হলের মধ্যে যেন এক সময়চক্র খুলে যায়। একজন মুক্তিযুদ্ধ দেখেছেন, অনুভব করেছেন, এবং পরে সেসব অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছেন তাঁর ক্যামেরা ও কলমের মাধ্যমে।
গৌতম ঘোষ আরো বলেন, “আমি দেখেছি মা তাঁর সন্তানকে হারিয়ে উন্মাদ হয়ে যাচ্ছেন, দেখেছি বাচ্চারা না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। সেই কষ্ট, সেই ত্যাগ আমাকে আমৃত্যু তাড়া করে। আর সে কারণেই, আমি কেবল গল্প বলি না, আমি সাক্ষ্য রাখি।” কফি পর্ব শেষে কাউন্সিল চেম্বার হলে, প্রশ্নোত্তর পর্বে তরুণ প্রজন্মের অনেকেই কিংবদন্তি নির্মাতার কাছে জানতে চায়—তিনি কীভাবে এই ইতিহাসকে শিল্পে রূপ দিয়েছেন এবং তাঁর বার্তা নতুন প্রজন্মের জন্য কী। তিনি জবাবে বলেন, “তোমাদের ইতিহাস জানো। ভুলে যেও না, এই স্বাধীনতা অনেক রক্তে কেনা। তোমাদের দায়িত্ব হলো সেই সত্যকে সযত্নে বহন করা—কথায়, লেখায়, চলচ্চিত্রে, বা হৃদয়ে।” আয়োজক ব্রিটিশ বাংলাদেশী মেয়র মইন কাদরী বলেন, “গৌতম ঘোষ শুধু একজন শিল্পী নন—তিনি ইতিহাসের ধারক, একজন নীরব মুক্তিযোদ্ধা। আজকের সকালটি আমাদের কমিউনিটির জন্য ছিল একটি গর্বের অধ্যায়।”
Developed by:
Helpline : +88 01712 88 65 03