‘জুলাই সনদের ভিত্তিতে মৌলিক সংস্কারের পর নির্বাচন’

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৪ জুন ২০২৫, ২:৪০ পূর্বাহ্ণ

আমরা আশাকরি সরকার সকল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনা করে আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই জুলাই সনদ পাশ করে তার ভিত্তিতে মৌলিক সংস্কার কার্যক্রম শেষ করবে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

‘তারপর নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা সংশোধন করে একটি নির্ভুল ভোটার তালিকা জাতির সামনে পেশ করবেন। সেই ভোটার তালিকায় অবশ্যই প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের তালিকাভুক্ত করতে হবে। তারপরে সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি সাধন করে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবে।’

মঙ্গলবার (৩ জুন) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় জনগণ নানা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে। এ অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনের আগে আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন চাই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের সক্ষমতার বিষয়টিও জাতির সামনে পরিষ্কার হবে।

জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে আমিরে জামায়াত বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষিত নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। আগামী বছর রোজার আগে বা পরে নির্বাচন হতে পারে। তবে সময় বেঁধে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের নেই।

প্রবাসীদের ভোটার করার ব্যাপারে তিনি গুরুত্বারোপ করে বলেন, প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়ে আমরা অনেক আগে থেকেই কথা বলে আসছি। কিন্তু ইসির দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছি না, আমরা উদ্বিগ্ন। প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়টি জামায়াত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা তারা যেন তাদের চেয়ারের মর্যাদা রক্ষা করেন।

তিনি বলেন, দেশের রাজনীতি, সমাজ ও সার্বভৌমত্বের ওপর কারও আধিপত্য আমরা মেনে নেবো না। এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার।সকল দেশের সাথেই আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে।

তিনি আরো বলেন, বিগত দিনগুলোতে দফায় দফায় আমাদের উপরে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক ও অন্যায্য বোঝা চাপানো হয়েছে। আমাদের গতিপথ স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। সর্বশেষ আঘাত আসে বিগত সরকার আমলে ২০১০ সালের ২৯ জুন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত। আমাদের শীর্ষ ১১ নেতাকে বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। খাবারের টেবিল থেকে তুলে নিয়ে রাষ্ট্রদোহী মামলা দেওয়া হয়েছে। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। অসংখ্য মানুষ গুম করে আয়নাঘরে বন্দি রেখে বছরের পর বছর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে। আমাদের অফিসগুলো তালাবদ্ধ রাখা হয়েছিলো। নিজের ঘরেও আমরা শান্তিতে থাকতে পারি নাই। দেশের আলেম ও সাংবাদিক সমাজও রেহাই পায়নি। সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এখনও বেদনাদায়ক হয়ে আছে।

জামায়াত আমির বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনের সকল শর্ত মেনে জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধিত হয়েছিল। তারপরও সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অন্যায্যভাবে আদালতের ন্যায়ভ্রষ্ট রায়ের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়। আমাদের প্রতীকটিও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। আমরা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করি। গত ১ জুন সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের সর্বসম্মত রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়কে অবৈধ এবং বাতিল ঘোষণা করেন। একই সাথে ২০১৩ সালের আগে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীকের বিষয়টি যে অবস্থায় ছিলো সেই অবস্থায় ফিরে দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে তারা নির্দেশ প্রদান করেন। আমরা মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের এই পটপরিবর্তন না হলে হয়তোবা আজকেও আমরা আমাদের অধিকার ফেরত পেতাম না। এজন্য আমি বিশেষ করে জুলাই-আগস্টের বিপ্লবীদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। ফ্যাসিবাদের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে গিয়ে যারা জীবন দিয়েছেন আল্লাহ তাদের সকলকে শহীদ হিসেবে কবুল করুন। আহত এবং পঙ্গু যারা হয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা। আল্লাহ তাদেরকে ধৈর্য ধরার এবং সুস্থতার নেয়ামত দান করুন।

তিনি আরো বলেন, জামায়াতের সাবেক আমির ও ডাকসুর জিএস প্রফেসর গোলাম আযম (রাহি.) প্রণীত কেয়ারটেকার ফর্মুলায় ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়; যা দেশে বিদেশে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নিজেদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়। তারা ২০১৪ সালে বিনা ভোটে, ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করে এবং ২০২৪ সালে আমি আর ডামি নির্বাচন করে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা আশা করছি অতিদ্রুতই অফিসিয়ালি আমাদের নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরে পাবো। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা তারা যেন তাদের মর্যাদা রক্ষা করেন।

তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক, দুঃশাসন এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ হোক আমরা এ দোয়াই করি। যুব সমাজের প্রতি আমাদের কমিটমেন্ট আমরা তোমাদের এ দেশ গড়ার কারিগর হিসেবে দেখতে চাই এবং কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে চাই।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, পাকিস্তান, ভারত, সুইডেন, নরওয়ে, ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কূটনীতিকবৃন্দ।

জাতীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমাদ আলী কাসেমী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (একাংশের) আমির মাওলানা আবু জাফর কাসেমী ও মহাসচিব মুফতি ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, জাগপার সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইউসুফ।

আরো উপস্থিত ছিলেন, মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকার অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহাম্মদ ওবায়দুল হক, তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার (মিরহাজিরবাগ) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ড. খলিলুর রহমান মাদানী, উত্তর বাড্ডা ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. আনোয়ার হোসাইন মোল্লা, মেসবাহুল উলুম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. মাওলানা মহিউদ্দিন, নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু হানিফ, মুফতি নুরুজ্জামান নোমানি, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আযম মীর শাহিদুল আহমদ, দৈনিক নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবর, বার্তা সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, প্রবীণ সাংবাদিক এলাহী নেওয়াজ খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, দৈনিক সংগ্রামের চীফ রিপোর্টার শামসুল আরেফীন, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. উমার আলী, প্রখ্যাত অর্থপেডিক্স সার্জন ডা. ইকবাল হোসাইন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব হাসান নাসির, লে. কর্ণেল (অব.) হাসিনুর রহমান প্রমুখ।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাড. মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, অ্যাড. মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, অ্যাড. এহসানুল মাহবুব জুবাযের ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, আবদুর রব ও মোবারক হোসাইন, জামায়াতের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম, ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম প্রমুখ।

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh