সব
আন্তর্জাতিক ডেস্ক,

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যখন তুঙ্গে, তখন এই উত্তেজনার আবহে মুখ খুললেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও পুনরায় নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি স্পষ্ট ভাষায় হুঁশিয়ারি দিয়েছেন- যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে আক্রমণ করে, তবে তারা এমন প্রতিশোধ নেবে, যা ইতিহাসে আগে কখনও দেখা যায়নি।
গত শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল বিমান হামলা চালায় ইরানের রাজধানী তেহরানসহ বিভিন্ন পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায়। এই হামলায় ইরানের সামরিক কাঠামোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে দাবি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর। ইসরায়েলের দাবি, ইরানের হুমকি মোকাবেলাতেই এই পদক্ষেপ।
জবাবে ইরানও চুপ ছিল না। তারা ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। তেলআবিব এবং হাইফার বিভিন্ন এলাকায় বিস্ফোরণ ঘটেছে, যার কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এই টানা হামলা-পাল্টা হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। এমনকি সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও, এমন উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে।
এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প একযোগে হুঁশিয়ারি ও শান্তির বার্তা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতের সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয়। তবে যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করে, আমরা এমন প্রতিশোধ নেব, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। এমন শক্তি প্রয়োগ করা হবে, যা কল্পনাতীত।”
একই পোস্টে তিনি আরও বলেন, “চাইলেই আমরা ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সহজেই চুক্তি করাতে পারি এবং এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারি!!!”
যদিও ট্রাম্প দাবি করছেন যুক্তরাষ্ট্র এই সংঘাতে সরাসরি জড়িত নয়, তবুও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোর প্রস্তুতি জোরদার করা হয়েছে। পারস্য উপসাগর ও ভূমধ্যসাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতিও বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে ইরানও মনে করছে, ইসরায়েলের হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ মদদ রয়েছে।
ট্রাম্পের মন্তব্যে শান্তিপূর্ণ সমাধানের ইঙ্গিত থাকলেও বাস্তবতা হচ্ছে, পরিস্থিতি দিনে দিনে আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। একই সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে অন্যদিকে ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি অনেককেই ২০২০ সালের কাসেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যার ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, যার জেরে তখন তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত আন্তর্জাতিক মহলের জন্য নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারতসহ অনেক দেশ শান্তি ও সংযমের আহ্বান জানালেও বড় শক্তিগুলোর ভূমিকায় এখনও স্পষ্ট কূটনৈতিক ঐক্য চোখে পড়ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এ সংঘাত যুক্তরাষ্ট্র বা তার মিত্রদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে, তাহলে তা বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কাও জাগাতে পারে। মধ্যপ্রাচ্য এমনিতেই নানা সংকটের কেন্দ্রে, সেখানে নতুন যুদ্ধ পরিস্থিতি মানবিক বিপর্যয়ও ডেকে আনতে পারে।