রোহিঙ্গাদের জন্য এর বেশি করার নেই বাংলাদেশের: ইউনূস

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ৫:১৬ অপরাহ্ণ

রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রিত ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য অতিরিক্ত সম্পদ সংস্থান করা সম্ভব নয়।

সোমবার কক্সবাজারে ‘স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি সংকট সমাধানে সাত দফা কর্মপরিকল্পনা প্রস্তাব করেন।

রয়টার্স লিখেছে, আশ্রিত ১৩ লাখ রোহিঙ্গার অর্ধেকই শিশু, যাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ এবং প্রশাসনের ওপর তীব্র চাপ পড়েছে বলে জানান শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস।

তিনি বলেন, “আমাদের সামনে বহু চ্যালেঞ্জ রয়েছে, এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সম্পদ জোগাড় করার আর কোনো সুযোগ দেখি না।”

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বাস্তবভিত্তিক রোডম্যাপ প্রণয়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা সংকট এবং এর টেকসই সমাধানকে বৈশ্বিক আলোচনায় সক্রিয় রাখতে হবে। কারণ বাড়ি ফেরা পর্যন্ত আমাদের সমর্থন তাদের প্রয়োজন।”

কক্সবাজারের হোটেল বে ওয়াচে অনুষ্ঠিত এ সংলাপে অংশগ্রহণ করছেন কূটনীতিক, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন দেশের শিক্ষাবিদ, বৈশ্বিক সংস্থা ও রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। রোববার থেকে শুরু হওয়া এ সংলাপ চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত।

সংলাপ থেকে আসা প্রস্তাব এবং বক্তব্যগুলো আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনে তুলে ধরার কথা বলছে সরকার। নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনে প্রায় ১৭০টি দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাসহ নিপীড়নের শিকার মিয়ানমারের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর দুর্দশা গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হবে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত যাত্রার আট বছর পূর্ণ হলো সোমবার। ২০১৭ সালের এই দিনে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেই ঢলের শুরু হয়েছিল। জাতিসংঘ সে সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এই হত্যা ও নির্যাতনকে চিহ্নিত করেছিল ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ’ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারও রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো ওই হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ হিসাবে বর্ণনা করেছে।

বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে কক্সবাজার ও উখিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাঁশ আর প্লাস্টিকের খুপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে।

সোমবার ওইসব ক্যাম্পে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। তাদের ব্যানার ও পোস্টারে লেখা ছিল— ‘আর শরণার্থী জীবন নয়’, ‘গণহত্যা বন্ধ কর’, এবং ‘প্রত্যাবাসনই চূড়ান্ত সমাধান’।

রয়টার্স লিখেছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে বাঁশের তৈরি ঘনবসতিপূর্ণ আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাস করছে। এর মধ্যে সহায়তা কমে আসছে, স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে এবং দেশে ফেরার আশাও প্রায় নেই। গত এক বছরে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সেখানে দেশটির সামরিক বাহিনী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের নিয়ে গঠিত জাতিগত মিলিশিয়া বাহিনী ‘আরাকান আর্মি’র মধ্যে সংঘর্ষ বেড়েছে।

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh