ইন্দোনেশিয়ায় অর্থমন্ত্রীর বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,

  • প্রকাশিত: ৩১ আগস্ট ২০২৫, ৬:৫১ অপরাহ্ণ

ইন্দোনেশিয়ায় চলমান বিক্ষোভ আরও সহিংস রূপ ধারণ করেছে। বিক্ষোভকারীরা অর্থমন্ত্রীসহ বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতার বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এর আগে একটি কাউন্সিল ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় অন্তত তিনজন নিহত হয়। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি প্রেসিডেন্ট প্রাবোও সুবিয়ান্তোর এক বছরেরও কম সময়ের শাসনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

দেশটিতে বিক্ষোভের সূচনা হয়েছিল আইনপ্রণেতাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির প্রতি উদাসীন থাকার অভিযোগ থেকে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন এক ডেলিভারি রাইডার পুলিশি গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন। ওই গাড়িটি মোতায়েন করা হয়েছিল আইনপ্রণেতাদের উচ্চ বেতন ও অতিরিক্ত সুবিধার বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলন ঠেকাতে। এ ঘটনার পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ইন্দোনেশিয়া জাকার্তাসহ বড় শহরগুলোতে অস্থিরতায় জর্জরিত হয়।

জাকার্তা গ্লোব জানিয়েছে, রোববার (৩১ আগস্ট) বিক্ষোভকারীরা অর্থমন্ত্রী শ্রী মূলিয়ানি ইন্দ্রাবতীর জাকার্তার বাড়িতে মোতায়েন সেনাদের পরাজিত করে ভেতরে ঢুকে পড়ে। সেখানে তারা আসবাবপত্র, চিত্রকর্মসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। নাসডেম পার্টির সংসদ সদস্য নাফা উরবাচ ও আহমদ সাহরোনির বাড়িতেও ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এছাড়া ন্যাশনাল ম্যান্ডেট পার্টির রাজনীতিবিদ ও কৌতুকশিল্পী ইকো পাত্রিওর বাসভবনেও হামলার ঘটনা ঘটে।

পুলিশ প্রধান লিস্টিও সিগিট প্রাবোও জানান, প্রেসিডেন্ট অরাজক কর্মকাণ্ড দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুর তাদের নাগরিকদের দূতাবাসের মাধ্যমে সতর্ক করে বলেছে, ভিড় এড়াতে এবং বিক্ষোভস্থল থেকে দূরে থাকতে।ছবি: সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট প্রাবোও জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ডেলিভারি রাইডারের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের নির্দেশ দেন এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি তিনি পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য আগামী সপ্তাহে চীনে পূর্বনির্ধারিত সামরিক কুচকাওয়াজ সফর বাতিল করেছেন।

মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটির এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক ভেদি হাদি মন্তব্য করেন, অর্থনীতির অবনতি, ব্যয় সংকোচন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জনগণের বিশ্বাস নেই। ফলে সংসদ জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে—এমন ধারণাই বিক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছে।

অর্থনৈতিকভাবে বিক্ষোভ ইতিমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার ইক্যুইটি বেঞ্চমার্ক সূচক ১.৫ শতাংশ পতন ঘটায়, যা দিনটির বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে খারাপ পারফর্ম করা সূচক ছিল। এর পাশাপাশি রুপিয়াহর মানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দেশটির অন্যান্য অঞ্চলেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মাকাসসারে প্রাদেশিক ও সিটি কাউন্সিল ভবনের সামনে বিক্ষোভকারীরা পাথর ও পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, ফলে ভবনগুলোতে আগুন ধরে যায়। সিটি কাউন্সিল সচিব রহমত মাপ্পাতোবা নিশ্চিত করেন, শুক্রবারের আগুনে ভবনের ভেতরে আটকা পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।

বিক্ষোভ প্রশমনে ইন্দোনেশিয়ার ডেমোক্রেটিক পার্টি অব স্ট্রাগল ও গেরিন্দ্রা আলাদা বিবৃতিতে জানায়, আইনপ্রণেতাদের জন্য বিতর্কিত মাসিক ৫০ মিলিয়ন রুপিয়াহ (৩,০৩০ মার্কিন ডলার) আবাসন ভাতা ও অন্যান্য বিশেষ সুবিধা বাতিল বা পুনর্বিবেচনা করা হবে।

শনিবার বালিতেও শত শত শিক্ষার্থী ও ‘ওজেক’ মোটরসাইকেল ট্যাক্সিচালক পুলিশ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেন। প্রতিবেশী লম্বক দ্বীপের মাতরাম শহরে বিক্ষোভকারীরা কাউন্সিল ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে টিকটক শনিবার ইন্দোনেশিয়ায় সাময়িকভাবে তাদের লাইভ ফিচার বন্ধ করে দেয়। সরকার মেটা ও টিকটকের প্রতিনিধিদের তলব করে ভুয়া তথ্য ছড়ানো রোধে কনটেন্ট মডারেশন জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে।

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh