সব
মতিয়ার চৌধুরী,
একটি আধুনিক কবিতার বই ‘যদি মেঘ আসে‘ লিখেছেন মুহাম্মদ শাহেদ রাহমান। এটি, এই বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশকাল সেপ্টেম্বর ২০২৫। গ্রন্থটির প্রথম সংস্করণ প্রকাশ পায় অক্টোবর ২০২৪। ৬৪ পৃষ্টার এই বইয়ে কবির বাছাইকৃত ৫১টি কবিতা স্থান পেয়েছে। প্রন্থের পাঁচ নাম্বার কবিতা থেকে কবি নাম দিয়েছেন ‘যদি মেঘ আসে‘। ছাব্বিশ লাইনের এই কবিতাটি কবি শুরু করেছেনঃ
যদি মেঘ আসে এই তল্লাটে
বলে দিয়ো, অকপটে-
আমার প্রিয়ার চোখের পাপড়ি
যেন ভিজিয়ে দেয় বৃষ্টির জলে।
শেষ করেছেন অপেক্ষার প্রহর শেষে যখন মেঘ আসবেনা।
তখন বলে দিয়ো ওরে জানি-আকাশের ছিদ্র নেই
তবুও এক ফোঁটা পবিত্র বৃষ্টি যেন এসে পড়ে
আকাশ ছিদ্র করে আমার প্রিয়ার রেশমি চুলে।
এই কবিতার মাধ্যমে কবি তার ভাল বাসার মানুষের উদ্দেশ্যে ইঙ্গিত করেছেন, একই সাথে এর মাধ্যমে ফুঠে উঠেছে কবির দেশপ্রেম, দেশাত্মবোধ এবং শৈশব কৈশোরের স্মৃতি।
আলোচ্য গ্রন্থের প্রথম কবিতাটির নাম ‘রক্তের সংযোগ‘। এই কবিতার মাধ্যমে কবির দেশপ্রেম ভালবাসাই ফুটে উঠেছে। সংক্ষিপ্ত ভাবে তুলে ধরেছেন বাংলার স্বাধীকারে কথা বিজয়ের কথা। এই কবিতায় কবি আরেকটি বিষয়ের ইঙ্গিত করেছেন সত্যিকারে দেশপ্রেমিক ছাড়া মাতৃভূমিকে ভালবাসা যায়না। আর মৃতৃভূমির জন্য থাকতে হবে নিখাদ ভালবাসা দেশাত্ববোধ। এই কবিতাটি কবি শুরু করেছেনঃ-
হিমোগ্লোবিন হলো একটি প্রোটিন
শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন বহন করে,
আবার টিস্যু থেকে ফুসফুসে
কার্বন ডাই অক্সাইড পরিবহন করে।
সেই প্রেটিনের মতো…………
তুমি আমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে
রক্তের হিমোগ্লোবিনে মিশে গিয়েছ
বায়ান্ন থেকে একাত্তর
ভাষা থেকে স্বাধীনতা
বিজয়ের পরিপূর্ণতা
স্বদেশ মা মাটি মানুষ
ভাল থাকলে , আমার
হৃৎস্পন্ধনও ভালো চলে
ভালো থাকে।
এই কবিতার শেষ লাইনে কবি বলেছেন
আমার পাহাড় সম দুঃখকে
দূর করে দেয় এক পলকে।
এছাড়া এই গ্রন্থে আরো যে কয়েকটি কবিতা আমি পাঠ করেছি সুখপাখি,জীবন সমুদ্রের চেয়েও বৈচিত্রময়, আমার মৃত্যুর সময় মায়াবী শব্দ শুনতে পাই, আমার গ্রাম আমার অন্তরের জানালা, আমার সোনার বাংলা, পিতা, মায়ের জন্য নিবেদন, বটবৃক্ষের নাম পিতা, টেমস নদীর হাওয়া, অসাম্প্রদাযিক, জাগো মানুষ, শেষ কবিতা কেউ মনে রাখবেনা। এই কবিতা গুলোতে কবির দেশপ্রেম, মাতৃভক্তি, পিতার প্রতি ভালবাসা,কবির অসাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনা, দেশবাসী তথা ঘুমন্ত সমাজেকে স্বচেতন করা এই বিষয়গুলো ফুটে উঠেছে। আবার তার আফসুসও রয়েছে তার প্রয়াণের পর কি কেউ কবিবে স্মরণ করবে।
এই কতিবা গুলো পড়ে আমার ‘মা-মাটি –মানুষ‘ নাটকের নাট্যকারের সেই গানটির কথা মনে পড়ে গেল। মা… আমার…. মাটি আমার… আমার মানুষ-রে……। শাহেদ রাহমানও ভাবেন মা-মাটি-মানুষের কথা একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের এমনটিই হওয়া উচিত। শাহেদ রাহমান আমার একজন প্রীয় মানুষ, আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে স্নেহের দৃষ্টিতে দেখি । তিনি বইখানি আমার হাতে দিয়ে সমালোচনার অনুরোধ জানিয়েছেন। কোন বইয়ের সমালোচনা লিখতে হলে তাঁকে হতে হয় বড় মাপের কোন সমালেচক বা লেখক আমি কিন্তু এসবের কোনটাই নই। এছাড়া আমার লেখালেখির বিষয়বস্তু ইতিহাস এবং সিলেটী ভাষা। আর কবিতার উপর লিখতে হলে তাঁকে হতে হয় কবি। আমি কবি নই আর আধুনিক কবিতার সাথে আমার পরিচয় খুবই কম।
এবিষয়ে লিখতে হলে কবি মাসুক ইবনে আনিস, দিলু নাসের, ইকবাল আহমেদ বুলবুল, আহমেদ ময়েজ, শামীম আজাদ, রব্বানী চৌধুরী, হামিদ মোহাম্মদ, আহমেদ শামীম বা ময়নুর রহমান বাবুলের মতো কোন কবি যদি এর সমালোচনা করতেন তাহলে সুন্দর হতো। সমালোচনার খাতিরে সমালোচনা বলা চলে।
শাহেদ রাহমান একজন শিক্ষক সাংবাদিক এবং কবি। চিন্তা চেতনায় অনেক আধুননিক এবং মানুষ হিসেবে অমায়িক। এই গ্রন্থটির প্রচ্ছদ করেছেন দেশের একজন খ্যাতনামা প্রচ্ছদ শিল্পি ধ্রুব এষ, সুন্দর প্রচ্ছদ ছাপা চমৎকার , উন্নতমানের কাগজ এবং বাঁধাই। প্রন্থটির মূল্য ধরা হয়েছে দশ ব্রিটিশ পাউন্ড বাংলাদেশী টাকায় দুইশত দশ টাকা, প্রকাশনায় অক্সফোর্ড বাংলা পাবলিকেশন (সংলাপ মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডে‘র একটি প্রকাশনা।) মুদ্রণে প্যারাডাইস অফসেট প্রেস জিন্দাবাজার সিলেট-৩১০০ বাংলাদেশ। পরিবেশক শতাব্দি প্রকাশ সিলেট। আমি এই কবিতা গ্রন্থের বহুল প্রচার এবং প্রসার কামনা করিছি। সেই সাথে কবির সুস্বাস্থ্য এবং দীর্ঘায়ু কামনা করি।