সব
স্বদেশ বিদেশ ডট কম
চলতি বছরের জানুয়ারিতে পারিবারিকভাবে বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়েছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতার, পরিবারের আশা ছিল একমাত্র মেয়েকে জাকজমকপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানো। কিন্তু তা আর হলো না। মাত্র ৩০ বছর বয়সেই পরপারে পাড়ি জমালেন তিনি।
মেহেদী রঙা হাত আর নতুন জীবনের আশায় সাজানো চোখ—সবই এখন দগদগে শোকের রঙে রঙিন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস দায়িত্ব পালন করছিলেন জাকসু নির্বাচনে। প্রীতিলতা হলে পোলিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে ভোট গণনার কাজে অংশ নিতে গিয়ে হঠাৎ সিনেট ভবনের সামনে পড়ে যান।
দ্রুত এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর খবরে বিধ্বস্ত জান্নাতুলের পরিবার। তার বাবা-মা যেন দিশেহারা। একমাত্র সন্তানের এমন করুণ বিদায়ে বাকরুদ্ধ সবাই।
জান্নাতুলের বাবা রুমী খন্দকার পাবনার পরিচিত সাংবাদিক। বর্তমানে দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি। এক সময় ছিলেন পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি। মেয়ের মৃত্যুর শোক যেন তাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ঘনিষ্ঠজনেরা বলছেন, জান্নাতুল ছিলেন তার চোখের মণি—সাধনার সন্তান।
উৎপল মীর্জা মাছরাঙা টেলিভিশনের উত্তরাঞ্চলীয় ব্যুরো চিফ এবং এক সময়ের পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘রুমী ভাই একেবারে ভেঙে পড়েছেন। মেয়ে ছিল তার সমস্ত গর্ব আর ভালোবাসা। ছয় মাস আগে জান্নাতুলের বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। পরের বছর জানুয়ারিতে আয়োজন করে বিয়ের কথা ছিল। কে জানত এর আগেই জীবনের ইতি টেনে চলে যাবে মেয়েটি!’
স্বজনদের চোখে এখন শুধুই অশ্রু আর স্মৃতির মিছিল। তারা জানান, ঢাকায় গেলে জান্নাতুলের বাসায়ই উঠতেন বাবা-মা। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী, শান্ত, ভদ্র ছিল সে। একাডেমিক ফলাফল ছিল ঈর্ষণীয়। ২০০৯ সালে পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১১ সালে পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি— দুটোতেই পেয়েছিলেন গোল্ডেন এ প্লাস। ২০১২ সালে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। সেখান থেকেই অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করে ২০২১ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন নিজের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়েই।
পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষিকা রোখসানা খানম ডেইজি বলেন, ‘জান্নাতুল ছিল খুব শান্ত স্বভাবের। অসাধারণ মেধাবী। এমন মৃত্যু কল্পনাও করা যায় না। আমরা শোকস্তব্ধ।’
শুক্রবার বাদ জুমা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় তার জানাজা। এরপর রাতে তার মরদেহ আনা হয় পাবনায়। বাদ এশা কাচারিপাড়া মসজিদে জানাজা শেষে চিরবিদায় জানানো হয় তাকে।
পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলামসহ সব সাংবাদিক এবং শুভানুধ্যায়ীরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন।