ইসির সংলাপ : প্রতিবন্ধীদের ভোট ও সরাসরি নারী প্রতিনিধিত্ব চান অধিকারকর্মীরা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২৫, ৮:১৪ পূর্বাহ্ণ

জাতীয় সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে নারী প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে সরাসরি নির্বাচন এবং প্রতিবন্ধীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ এসেছে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে।

মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন আয়োজিত সংলাপে অধিকারকর্মীরা এই সুপারিশ করার পাশাপাশি নির্বাচনের আগে-পরে নারী প্রার্থী ও ভোটারদের ওপর সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বানও জানিয়েছেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার-সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে সংলাপে অন্য চার নির্বাচন কমিশনারও উপস্থিত ছিলেন।

এসময় সিইসি ভোটার তালিকা হালনাগাদে দেশে নারী ভোটারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলে দাবি করেন। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি’ করার আকাঙ্ক্ষাও ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন যেমন, এর সঙ্গে আমি যোগ করবো একটা ‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি ইলেকশন’। আমার পক্ষ থেকে এটা যোগ করলাম।

দেশের জনসংখ্যা বিবেচনায় নারী পুরুষের অনুপাত প্রায় সমান, এ বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, আপনারা জেনে অবাক হবেন, পুরুষ ভোটারের থেকে ৩০ লাখের উপরে নারী ভোটার কম ছিল। এটা স্বাভাবিক না। আমরা বুঝেছি, নারী ভোটারদের মধ্যে কিছু একটা গোলমাল হয়েছে। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো প্রত্যন্ত এলাকায় হয়েছে। মানুষ নির্বাচন থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল, নির্বাচন ব্যবস্থার উপর আস্থাহীনতার কারণেও এটা হতে পারে। আমরা এবার যেটা করেছি, নারী ভোটারের সংখ্যা ব্যাপকহারে বেড়েছে, ৩০ লাখের পার্থক্যটা ১৮ লাখে চলে এসেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে যেয়ে।

ফেব্রুয়ারি প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সে হিসাবে তফসিল হতে পারে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে। তার আগে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষাবিদদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে ‘সংলাপ পর্ব’ শুরু করে ইসি।

এ ধারাবাহিকতায় পূজার ছুটির পর বসল সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে। আর মঙ্গলবার নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নারী সংগঠনের নেত্রীদের সঙ্গে বসল ইসি।

প্রতিবন্ধীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের সুপারিশ

বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্যা চেঞ্জ অ্যান্ড এডভোকেসি নেক্সাস-বি স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব প্রতিবন্ধী নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দলগুলোতে এবং সংসদে নারী প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার ব্যবস্থা চেয়ে সুপারিশ করেছেন।

সংসদে অন্তত ১ শতাংশ আসনে প্রতিবন্ধীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান তিনি।

দেশে ৩৬ লাখ প্রতিবন্ধী আছে, এমন তথ্য দিয়ে সালমা মাহবুব প্রতিবন্ধী ভোটারদের সংখ্যা নিরূপণ ও ক্যাটাগরি অনুযায়ী কেন্দ্রওয়ারী প্রতিবন্ধী ভোটারদের তালিকা তৈরির সুপারিশ করেন৷

২০১৮ সালে দেশে ৩৩ লাখ প্রতিবন্ধী নাগরিকের মাত্র ১০ শতাংশ ভোটকেন্দ্রে আসার তথ্য দিয়ে তিনি প্রতিবন্ধী ভোটারের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।

প্রতিবন্ধী ভোটারের জন্য বিশেষ পরিচয়পত্র ও যানবাহন ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করে সালমা মাহবুব বলেন, “যেসব প্রতিবন্ধী মানুষ একদমই ঘর থেকে বের হতে পারেন না, তাদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে।”

নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডে প্রতিবন্ধী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিত্ব রাখার সুপারিশ এসেছে উইমেন উইথ ডিসঅ্যাবিলিটিস ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশরাফুন নাহার মিষ্টির কাছ থেকে।

তার মতে, এর ফলে কোন ধরনের প্রতিবন্ধী নাগরিকের ভোটগ্রহণে কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন, সেই কৌশলগুলো প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত হবে।

অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষকদের মধ্যে প্রতিবন্ধী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করারও সুপারিশ করেন এই অধিকার কর্মী।

সংসদে সরাসরি প্রতিনিধিত্ব

‘নিজেরা করি’ এর সমন্বয়কারী খুশী কবীর বলেন, “যে পদ্ধতিই হোক না কেন নারীদের সরাসরি নির্বাচন অবশ্যই চাচ্ছি। আবার অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন যেন হয়। এই নির্বাচনে নারীরা সরাসরি নির্বাচিত হলে তারা সংসদে ভূমিকা রাখতে পারবেন।”

‘মব’ সহিংসতা নারীদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার জন্য নেতিবাচক দিক হতে পারে বলেও তুলে ধরে তিনি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভানেত্রী ফওজিয়া মোসলেম বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নারী বিদ্বেষী, সাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী এই তিনটি বিষয়ে নজর রাখতে হবে। প্রার্থীদের মানবিক গুণ থাকতে হবে। নির্বাচনের আগে-পরে মব সহিংসতা ও নারী নির্যাতন হয়, সেসব এলাকার দিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখলে নারীরা নিরাপদ বোধ করবেন। নির্বাচন ‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি’ করতে হলে যে অংশীজনরা আছেন তাদের মানসিকতাকে ‘জেন্ডার ফ্রেন্ডলি’ করতে হবে।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ও নারী পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরীন পারভীন হক বলেন, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সংসদে আসন বৃদ্ধি হয়নি। সেখানে আমরা বলেছি, ৩০০ আসনের পরিবর্তে ৬০০ আসন করতে হবে। একটি নির্বাচনি এলাকায় দুটি আসন থাকবে, যেখানে একটিতে শুধু নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। আরেকটিতে নারী পুরুষ যে কেউ করতে পারবে।

তিনি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের দাবির প্রতি সমর্থন জানান।

মহিলা পরিষদ সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতামুক্ত নির্বাচন যাতে হয়, সেটা আমরা চাই। নারী প্রার্থীরা নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হন। তাদের বিরুদ্ধে এমনভাবে প্রচার প্রচারণা করা হয়, নারী বিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণা করা হয়। এবারও আমরা এমন শঙ্কা করছি এবং নারী যারা ভোটার, তারা অনেক ধরনের হুমকির মুখে থাকেন। এ জায়গাগুলো কীভাবে বন্ধ করা যায় তা আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে বড় ধরনের প্রত্যাশা থাকবে।

সূত্র: বিডিনিউজ।

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh