রাজনৈতিক দলের হাতে জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৯:৩২ পূর্বাহ্ণ

জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়া ৩৩টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে ৪০ পৃষ্ঠার এই সনদ ওই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।

শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে তাতে স্বাক্ষর করবে দলগুলো। তবে কয়েকটি দল স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে না যাওয়ার ইংগিত দিয়েছে।

সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে নেয়া সিদ্ধান্ত যাতে পরবর্তী সরকারের সময়ও বাস্তবায়ন করা হয়, তা নিশ্চিত করতে জাতীয় জুলাই সনদ-২০২৫ পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানের তফসিলে সংযুক্ত করার বিষয়টি অঙ্গিকারনামায় রেখে চূড়ান্ত করা হয়েছে এ ‘রাজনৈতিক সমঝোতার’ দলিল।

কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ এর চূড়ান্ত ভাষ্য আপনার অবগতির জন্য পাঠানো হল।

সনদের কপি রাত পৌনে ৯টায় পেয়েছেন জানিয়ে সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এই মাত্র হাতে পেলাম, দল বা জোটের সাথে আলোচনা হয়নি। এখানে যা দেখলাম, তাতে ভূমিকায় এর আগেও আমরা বলেছিলাম, এটাতে ইতিহাস যথাযতভাবে তুলে ধরা হয়নি।

সনদ সইয়ের অনুষ্ঠানে যোগ না দেয়ার ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এই সনদে সংবিধানের চার মূল নীতিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যার বিরোধিতা আমরা শুরু থেকে করে আসছি। আমরা তখনও বলেছি, চার মূলনীতির প্রশ্নে আমরা কোনো ছাড় দেব না। কিন্তু এই সনদে আমরা দেখলাম, তারা চার মূলনীতি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

পাশাপাশি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যে অঙ্গীকার সনদে রাখা হয়েছে, তাতে ভিন্নমত রয়েছে সিপিবির।

প্রিন্স বলেন, বাস্তবায়ন পদ্ধতিতে আমরা যা দিয়েছিলাম, তা চোখে পড়ে নাই। সুতরাং এই ধরনের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাওয়া যাবে কি না সেটা দল ও জোটের সাথে আলোচনা করে দেখব। তবে এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের পক্ষে এই সনদের পক্ষে কথা বলার মত পরিবেশ নেই।

সনদের কপি পাওয়ার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, তারা সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। চূড়ান্ত সনদের বিষয়বস্তুর সঙ্গে তাদের ‘তেমন ভিন্নমত নেই’।

বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, সনদের কপি পেয়েছি, তবে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার জন্য যে অঙ্গীকারনামা দিয়েছে, সেখানে আমরা শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছি। আমরা স্বাক্ষর করে দিয়ে এলাম, আর তারা তাদের মত করে বাস্তবায়ন করবে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। সুতরাং স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাব কিনা সেটা দল ও জোটগতভাবে সিদ্ধান্ত নেব।

অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ চিঠি পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, “আজকে আমাদের কাছে দেওয়া এই চিঠির মাধ্যমে দীর্ঘ ছয় মাস ধরে ঐকমত্য কমিশেনর সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ আলোচনা শেষে সফল পরিসমাপ্তি হবে জাতীয় জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মাধ্যমে। আর এই সনদ নিয়ে সব ধরনের প্রচেষ্টার জন্য ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ কমিশনের অন্যান্য সদস্য এবং সব সংস্কার কমিশনের সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই।”

সাত দফা অঙ্গীকারনামার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদের এই খসড়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন, যাতে সই করলে রাজনৈতিক দলগুলো এই সনদ নিয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

এই সনদ বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করবে দলগুলো।

চূড়ান্ত খসড়ায় বলা হয়েছে, এই সনদ পূর্ণাঙ্গভাবে সংবিধানে ‘তফসিল হিসেবে বা যথোপযুক্তভাবে’ সংযুক্ত করা হবে এবং স্বাক্ষরকারী রাজনৈতিক দলগুলো এ সনদের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন তুলবে না।

অঙ্গীকারনামায় বলা হয়েছে, অবিলম্বে ‘বাস্তবায়নযোগ্য’ যেসব বিষয় রয়েছে তা অন্তবর্তীকালীন সরকারই বাস্তবায়ন করবে।

সনদে ১২ দলীয় জোটসহ ৩৩টি দলের জুলাই সনদে একমত হওয়ার কথা লেখা হয়েছে। কিছুক্ষেত্রে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্টসহ) মোট ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য হওয়ার কথা বলা হয়েছে চূড়ান্ত খসড়ায়।

বলা হয়েছে, মোট ৩৩টি রাজনৈতিক দল ও জোট তাদের মতামত কমিশনের কাছে প্রেরণ করে, অনেকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিশ্লেষণও প্রদান করে। মতামত গ্রহণের পাশাপাশি প্রথম পর্যায়ে চলতি বছরের ২০ মার্চ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ৩২টি দল ও জোটের সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মোট ৪৪টি বৈঠক হয়। আলোচনা ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে কিছু দলের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করে কমিশন অগ্রাধিকার ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মোট ২০টি বিষয় নিয়ে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সাথে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় মিলিত হয়।

দ্বিতীয় দফায় ২০টি বিষয়ের ওপর আলোচনায় উক্ত ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামতই কেবল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার ফলাফলস্বরূপ নিম্নলিখিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ কয়েকটি ভিন্নমতসহ সর্বসম্মতভাবে প্রণীত হয়।

তবে সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সনদে কোনো সুপারিশ রাখা হয়নি।

এ বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, সনদে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া থাকবে না, এটাই সিদ্ধান্ত ছিল। সে অনুযায়ী আমরা শুধুমাত্র সনদ অংশটা দলগুলোকে পাঠাচ্ছি। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে যেটা সেটা আলোচনা হয়েছে- সেই বিষয় গুলোতো সকলের একমত আছেই। সেটা হচ্ছে একটা গণভোট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এটা বাস্তবায়ন করার।

–বিডিনিউজ।

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh