সব
সৈয়দ হিলাল সাইফ,
ঐতিহ্যবাহী সংগঠন সৈয়দপুর শামসিয়া সমিতির আয়োজনে লন্ডনে অনুষ্ঠিত হলো গবেষক ও লেখক সৈয়দ হাবিবুর রহমান সম্পাদিত গ্রন্থ “শিকড়ে সন্ধানে”-র বর্ণাঢ্য মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা উৎসব। পূর্বপুরুষের ইতিহাস, উত্তরাধিকার এবং সাংস্কৃতিক শেকড়ের পুনরুদ্ধারকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠেছিল এক অনন্য সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ জিল্লুল হক এবং সঞ্চালনায় ছিলেন কবি আহমদ ময়েজ।
উদ্বোধনী পর্বে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করেন শামসিয়া সমিতির উপদেষ্টা সৈয়দ শহীদুল ইসলাম। এরপর সমিতির পক্ষ থেকে লেখক সৈয়দ হাবিবুর রহমান-কে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা জানানোর পাশাপাশি উপহার তুলেদেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাহিত্যবোদ্ধা সৈয়দ আমিরুল ইসলাম আনা। তিনি বলেন, “‘শিকড়ে সন্ধানে’ কেবল একটি ইতিহাসগ্রন্থ নয়, বরং সময়ের আয়নায় গড়ে ওঠা আত্মপরিচয়ের এক বলিষ্ঠ দলিল। শেকড়ের সন্ধান মানে আত্মার সন্ধান – কারণ শিকড় হারিয়ে ফেললে অস্তিত্বও বিলীন হয়ে যায়।”
প্রবন্ধটির আলোচনায় অংশ নিয়ে সমিতির সাবেক সভাপতি আহমদ কুতুব বলেন, “এই গ্রন্থ রক্তের সাথে সম্পর্কিত। পূর্বপুরুষদের জীবনচিত্র আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথ দেখায়। আমরা যেন তাদের বিস্মৃত না হই।”
সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ বইয়ের ভূয়সী প্রশংসা করেন।বিশিষ্ট কমিউনিটি নেতা এ কে এম আবু তাহের চৌধুরী বলেন, “দীর্ঘ গবেষণার ফসল এই গ্রন্থ আমাদের অতীত জানার পাশাপাশি ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনাও দেবে। বিভিন্ন প্রজন্মের মাঝে এই বই সংযোগ সেতু রচনা করবে।”
সিনিয়র সাংবাদিক ও লন্ডনবাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা লেখকের কর্মজীবনের স্মৃতিচারণ করেন এবং সৈয়দপুরকে কেন্দ্র করে একটি লিখিত ডাটাবেজ তৈরির দাবি জানান।
অবসর প্রাপ্ত প্রিন্সিপাল সৈয়দ মুহাদ্দিস আহমদ বইয়ের ঐতিহাসিক দিক তুলে ধরে বলেন, “দ্বাদশ শতকে শাহজালাল (রহ.) এর আগমন সৈয়দপুর অঞ্চলকে শিক্ষা ও আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ করেছিল। ইসলাম আধুনিক শিক্ষার দিগন্ত খুলে দিয়েছিল এই অলিদের মাধ্যমে।”
বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালি উল্লাহ পুরস্কারপ্রাপ্ত গবেষক ও লেখক ফারুক আহমদ বলেন, “সৈয়দ হাবিবুর রহমান বইয়ের ভূমিকায় যে সাহস দেখিয়েছেন তা প্রশংসনীয়। শাহজালালের আগমন এবং কুনিয়া থেকে যাত্রার বিষয়টি নতুন আলোচনার জন্ম দেবে। বিতর্ক হোক, তর্ক হোক – সেই আলোচনার মাধ্যমে ইতিহাস আরও পরিষ্কার হবে”।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন— সৈয়দ খালিদ মিয়া অলিদ – সান্ডারল্যান্ড কমিউনিটি সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি , সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশা – প্রধান সম্পাদক সত্যবাণী পত্রিকা , গীতিকবি ও গল্পকার – সৈয়দ দুলাল, সৈয়দ রফিকুল হক ধলা – শামসিয়া সমিতির সাবেক সেক্রেটারি , লেখক আবু সুফিয়ান, আব্দুল আহাদ – ইনাত নগর স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি, কণ্ঠশিল্পী আলাউর রহমান, সৈয়দ আসাদ হক, সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম , সৈয়দ শামীম আহমদ, সৈয়দ হোসাইন আহমদ, সৈয়দ সফর আলী – সৈয়দপুর শামসিয়া সমিতির সেক্রেটারি , সৈয়দ হিলাল সাইফ – ছড়াকার মাওলানা সৈয়দ তামিম আহমদ, শেখ হাফিজ মোস্তাক আহমদ, মোহাম্মদ সিজিল মিয়া, সৈয়দ তোফায়েল আহমেদ, সৈয়দ জামিল আহমদ,সৈয়দ আসকির মিয়া ,সৈয়দ ইয়াসিন শাহিন, সৈয়দ রাহাত সিয়াম, সৈয়দ ফারহাত সাকিব, সৈয়দ আইনাক আভিক, মোহাম্মদ ইসা, মোহাম্মদ মারুফ আহমদ, প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয় যখন লিজেন্ডারি কণ্ঠশিল্পী আলাউর রহমান পরিবেশন করেন গীতিকবি সৈয়দ দুলাল রচিত গান “বাবা গানটি উপস্থিত শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যায় এবং অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে প্রশংসায় মুখর হন।
অনুষ্ঠানের শেষাংশে সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ জিল্লুল হক সকল বক্তা, অতিথি এবং উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। বিশেষভাবে তিনি বাংলা মিডিয়ার সংবাদকর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান অনুষ্ঠানটি সফলভাবে প্রচারের জন্য। পুরো অনুষ্ঠানটি মিডিয়া কাভারেজ করেন চ্যানেল এস’র সিনিয়র সাংবাদিক রেজাউল করিম মৃধা ও স্বদেশ বিদেশে পত্রিকার সম্পাদক বাতিরুল হক সরদার।
উৎসবের শেষ প্রান্তে ছিল আপ্যায়ন পর্ব, যেখানে আমন্ত্রিত সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।
শিকড়ে সন্ধানে” বইটি যেন পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এক উজ্জ্বল পথনির্দেশ। এ গ্রন্থ ইতিহাস নয়, উত্তরাধিকারের অন্বেষণ — সময়কে ধারণ করার এক অনন্য প্রয়াস।
গ্রন্থের লেখক সৈয়দ হাবিবুর রহমান অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “আপনারা যারা ব্যস্ততার মধ্যেও সময় বের করে আমাকে সম্মান জানাতে এখানে উপস্থিত হয়েছেন, আপনাদের সবার প্রতি আমার গভীর কৃতজ্ঞতা। বিশেষ করে শামসিয়া সমিতিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যারা আমাকে মূল্যায়নের যে মঞ্চটি উপহার দিয়েছেন, তার পেছনের পরিশ্রমী মানুষদের প্রতি আমি চিরঋণী। নেপথ্যে যাঁরা অক্লান্ত শ্রম ও দায়িত্ববোধ নিয়ে এই আয়োজন সফল করেছেন, তাঁদের ঋণ কোনোদিন শোধ করা সম্ভব নয়।”