বিদেশিদের হাতে টার্মিনাল ছাড়ার চক্রান্তের অভিযোগে চট্টগ্রামে সমাবেশ

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১:০৫ অপরাহ্ণ

পার্বত্য অঞ্চল ঘিরে সাম্রাজ্যবাদীদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনালগুলো বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ এসেছে এক সমাবেশ থেকে।

শনিবার(২৫ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদ মোড়ে ‘বন্দর রক্ষায় চট্টগ্রামের শ্রমিক-ছাত্র-পেশাজীবী-নাগরিকবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এই অভিযোগ করা হয়।

‘লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্তের প্রতিবাদে’ এই সমাবেশ ডাকা হয়। ‘চক্রান্ত রুখতে’ কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি আসে সমাবেশ থেকে।

গণমুক্তি ইউনিয়নের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাজা মিঞা বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর লাভজনক ও কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষম। কিন্তু এর পরও বিদেশি কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদীদের এ অঞ্চল ঘিরে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নিউমুরিং টার্মিনাল ও লালদিয়ার চর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে।

“বিনা প্রতিরোধে এ চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বন্দর এলাকায় এক মাসের জন্য সভাসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিনা টেন্ডারে ডিপি ওয়ার্ল্ডকে নিউমুরিং টার্মিনাল তুলে দেওয়ার আয়োজন সম্পন্ন করেছিল।”

অভ্যুত্থানের পরও কেন আওয়ামী লীগের চক্রান্ত বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে, তার জবাব সরকারকে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন রাজা মিঞা।

ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষায় আজ চট্টগ্রামের নাগরিক, শ্রমিক, পেশাজীবী ও ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দিয়ে দেশবিরোধী এ তৎপরতা প্রতিহত করা হবে।”

শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) যুগ্ম সমন্বয়ক রিজওয়ানুর রহমান বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দর বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার উপর লাভে আছে। তারপরও বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্দর তুলে দেওয়ার আগে তাদের মুনাফা নিশ্চিতের জন্য সরকার বন্দরের ট্যারিফ ৪১ শতাংশ বাড়িয়েছে।”

“চট্টগ্রাম বন্দরের মতো কৌশলগত জাতীয় সম্পদ বিদেশি কিংবা বেসরকারি কারো মাধ্যমে নয়, জাতীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে পরিচালনা করতে হবে।”

বাসদ (মার্কসবাদী) জেলা সমন্বয়ক শফি উদ্দিন কবির আবিদ বলেন, “একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন্দরের টার্মিনাল লিজ দেওয়ার মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার ও ন্যায্যতা নেই। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানগত কারণে এর সঙ্গে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার কৌশলগত প্রশ্নও যুক্ত।

“কিন্তু বর্তমান সরকার যেরকম তড়িঘড়ি ও কারও মতামতের তোয়াক্কা না করে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছে, তাতে প্রবল সন্দেহ ঘনীভূত হয়ে উঠেছে, সরকার কাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে?”

বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সেক্রেটারি ইব্রাহিম খোকন বলেন, “অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে একাধিক বন্দর নেই। দেশের সিংহভাগ আমদানি রপ্তানি যে বন্দর দিয়ে হয়, সেই বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে কেউ দেয় না।”

সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডক শ্রমিক দলের সেক্রেটারি আখতারউদ্দিন সেলিম, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন সেক্রেটারি জাহিদউদ্দিন শাহীন, গণঅধিকার চর্চা কেন্দ্রের মশিউর রহমান খান, বিপ্লবী তারকেশ্বর দস্তিদার পরিষদের প্রকৌশলী সিঞ্চন ভৌমিক, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সেক্রেটারি জাহেদুন্নবী কনক, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল নেতা সাইফুর রুদ্র, বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল সভাপতি হুমায়ুন কবির, আবদুল্লাহ আল মামুন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ধ্রুব বড়ুয়া ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নগর দফতর সম্পাদক লাবণী আকতার।

সমাবেশ পরিচালনা করেন গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি সত্যজিৎ বিশ্বাস।

সমাবেশে চট্টগ্রাম বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শ্রমিক সংগঠন, ছাত্র সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh