সব
স্বদেশ বিদেশ ডট কম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে যে প্রক্রিয়ায় হকার ও ভবঘুরে উচ্ছেদ করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ডাকসুর নেতারা শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালান। ডাকসুর নেতারা বলছেন, তাঁরা যাঁদের উচ্ছেদ করছেন, তাঁদের অনেকেই মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে। তাঁদের কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।
এই উচ্ছেদের প্রতিবাদে শনিবার রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন হকার ও খাবারের ছোট ছোট দোকান পরিচালনাকারীরা। তাঁরা বলছেন, ২০-৩০ বছর ধরে তাঁরা ক্যাম্পাসে দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাঁদের দোকান চালানোর কোনো ব্যবস্থা না করে হঠাৎ উচ্ছেদ করলে তাঁরা কীভাবে জীবন চালাবেন?
উচ্ছেদ নিয়ে ডাকসুর নেতাদের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করছেন বামপন্থী বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা। তাঁরা জানান, ক্যাম্পাসে এই উচ্ছেদ শুরু হয়েছিল গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর। সে সময় এক দল শিক্ষার্থী টিএসসির চায়ের দোকানগুলোসহ ভ্রাম্যমাণ বিভিন্ন দোকান উচ্ছেদ করেন। পরে ওই সব দোকান আবার বসে এবং অনেক দোকান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নিবন্ধন নেয়। এখন ক্যাম্পাস থেকে হকার-ভবঘুরে উচ্ছেদের নামে ডাকসুর নেতারা, যাঁরা ৫ আগস্টের পর উচ্ছেদ চালিয়েছিলেন, তাঁরাই আবার নেমেছেন। শনিবার রাতে দোকানপাট ভাঙচুর ও দোকানিদের মারধরও করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর নেতা ইসরাত জাহান (ইমু) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) রাতে তিনি রিকশায় করে দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসির দিকে আসার সময় দেখেন, কয়েকটি ভাঙচুর হওয়া ফুড কার্ট রাস্তায় পড়ে আছে। অভিযান পরিচালনাকারীরা ভাঙচুর হওয়া স্টিলের কার্ট ও মালপত্রগুলো নিয়ে যেতে চাইছিলেন। এটুকু যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়, সে জন্য তাঁদের হাত-পায়ে ধরছিলেন দোকানিরা, যাঁদের মধ্যে বয়স্ক ব্যক্তিরাও ছিলেন। টিএসসিতে নেমে দেখেন, ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক রাস্তায় আরেকজনকে দৌড়ে ধরে চড়থাপ্পড় মারছেন। তিনিও হাতে-পায়ে ধরে কার্টটা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছিলেন।’
এ ঘটনায় মর্মাহত হওয়ার কথা উল্লেখ করে ইসরাত জাহান বলেন, ‘একজন মানুষকে এভাবে মাঝরাস্তায় শারীরিকভাবে নির্যাতিত হতে দেখে কেউ চুপ থাকতে পারে না। তাই প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি শনিবার রাতে হকারদের বিক্ষোভে সংহতি জানান।’
শনিবার রাতে ক্যাম্পাসে যাঁরা উচ্ছেদে অংশ নেন, তাঁদের মধ্যে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক জুবায়ের বিন নেছারী ও সদস্য সর্বমিত্র চাকমাকে সামনের কাতারে দেখা যায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুবায়ের গণমাধ্যমকে বলেন, হকার উচ্ছেদ বলতে ক্যাম্পাসে অনিবন্ধিত যেসব ভ্রাম্যমাণ দোকান আছে, সেগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে। আর ভবঘুরে বলতে ক্যাম্পাসের আশপাশে যাঁরা অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন, তাঁদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
কয়েক বছর ধরে প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থায়ী-অস্থায়ী বহুসংখ্যক দোকান বসে আসছে। গত মে মাসে ওই উদ্যানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য খুন হন। এরপর সেখান থেকে অনেক দোকান উচ্ছেদ করে পুলিশ। সেখান থেকে উচ্ছেদ হওয়া দোকানিদের একটি অংশ টিএসসি এলাকায় নতুন করে ব্যবসা শুরু করেন। এখন তাঁদেরকেই উচ্ছেদ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার রাতে ফেসবুকে উচ্ছেদ অভিযানের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেন ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক জুবায়ের ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মীর আরশাদুল হক। আরশাদুল অভিযোগ করেন, তাঁকে হুমকি ও অপমান করা হয়েছে। জুবায়ের বলেন, ‘অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং সিমপ্যাথি গেইম।’
ডাকসুর সহসভাপতি আবু সাদিক কায়েম ফেসবুকে লেখেন, “ক্যাম্পাসে অবৈধভাবে জেঁকে বসা সকল চক্রকে উচ্ছেদ না করা পর্যন্ত তাঁরা ক্ষান্ত হবেন না। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা লিখেছেন, “ডাকসুর গঠনতন্ত্রটা তো কোথাও দেখি না… কোথায় লেখা আছে যে ডাকসুর নামে গুন্ডামি জায়েজ?”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সব ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। তিনি জানান, নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ, সিটি করপোরেশন ও শিক্ষার্থীদের যৌথ উদ্যোগে কাজ করছে।’