সব
সিলেট ব্যুরো অফিস,
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন ও বাত ব্যথা রোগীদের নিয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে কলেজের মেডিসিন বিল্ডিংয়ের ১০ম তলায় একাডেমিক কর্নারে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ইকবাল আহমদ চৌধুরী। তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও বাত ব্যথা রোগের সঠিক ব্যবস্থাপনা, নিয়মিত জীবনধারা, খাদ্যাভ্যাস এবং ওষুধ গ্রহণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
৩টি সেশনে অনুষ্ঠিত প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে। প্রায় ৩ শতাধিক রোগীর উপস্থিতিতে বাত-ব্যথা বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা করেন ডা. ইকবাল আহমদ চৌধুরী।
আলোচনায় ডা. চৌধুরী বলেন, বাত ব্যথা এমন এক রোগ যা অনেক সময় পুরোপুরি সারানো না গেলেও নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। রোগী যদি নিয়ম মেনে চলেন, তবে স্বাভাবিক জীবন যাপন সম্ভব। বাত ব্যথা কেবল শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও রোগীকে ক্লান্ত করে তোলে। তাই ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখা ও পরিবার-সমাজের সহায়তা নেওয়া রোগমুক্তির পথে বড় ভূমিকা রাখে।
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও শরীরচর্চা জয়েন্ট সচল রাখতে সাহায্য করে উল্লেখ করে ডাক্তার চৌধুরী বলেন, অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে, কারণ বাড়তি ওজন হাঁটু ও কোমরের ওপর চাপ বাড়ায়। খাবারের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তেল, চর্বি ও ভাজা খাবার এড়িয়ে চলা, প্রচুর শাকসবজি ও ফল খাওয়া, আর যথেষ্ট পানি পান করা জরুরি।
প্রেসক্রিপশন ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপি করা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তার আলোচনায় উঠে আসে।
সকাল সাড়ে ১০টায় দ্বিতীয় সেশেনে শুরু হয় পুষ্টি বিষয়ক আলোচনা। আলোচনা করেন সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালের থেরাপিউটিক নিউট্রিশন ও ডায়েটিক্স বিষয়ের বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদ কাওসার আহমদ।
রেনাল নিউট্রিশনে (বি.এ.ডি.এন) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এই পুষ্টিবিদের মতে খাদ্যাভাস বদলে ভালো থাকার জন্য সকালের নাস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাদ না দিয়ে সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা জরুরি। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারকে প্রাধান্য দেওয়া এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া এড়িয়ে চলার বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়। এছাড়াও, শরীর কী চায় এবং কোন খাবারগুলো প্রয়োজন, জীবন যাপন পদ্ধতি বদলে কিভাবে অল্প অল্প করে নিয়ম অনুযায়ী খাবার গ্রহণ করে সুস্থ্য থাকা যায় সে বিষয়ে সচেতন কারা হয়। ডিজিটাল স্ক্রীনে স্লাইড শো প্রর্দশনের মাধ্যমে উপস্থিত রোগীদের প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কাওসার আহমদ।
শুধু ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশন রোগীদের জন্য ৩য় অর্থাৎ সমাপ্তি সেশনে উপস্থিত রোগীদের ডায়াবেটিস ও হাই প্রেসারে সুস্থ ও সুখী জীবন, ডায়াবেটিস ও হাই প্রেসারের রোগীদের চিকিৎসা ও জীবনযাপন পদ্ধতি, কিডনি রোগ, হার্টের সমস্যা ও স্ট্রোক হতে বাঁচতে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন ডা. ইকবাল আহমদ চৌধুরী। ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া স্ক্রীনে বিভিন্ন স্লাইড শোর মাধ্যমে ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস ও হাই প্রেসার না হওয়ার উপায়, ব্যায়াম করার উপকারিতা ও পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এবং ওজন কমানোর সহজ কিছু নির্দেশনার পাশাপাশি রোগীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন ইকবাল আহমদ চৌধুরী।
সিলেট এম.এ.জি. ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রশিক্ষণ কর্মশালা শেষে মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যপক ডা. ইকবাল আহমদ চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, ভুল চিকিৎসার ফলে অনেক মূল্যবান জীবন শেষ হয়ে যায়। প্রতিটি রোগীর জানার অধিকার আছে যে তার রোগের নাম কি, কি ভাবে এ রোগ হয়, কি কি ধরনের চিকিৎসা আছে, ঔষধ গ্রহন কালীন সময়ে কি কি সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এ ধরনের প্রশিক্ষণ তাদের রোগ সম্পর্কে সচেতন হতে এবং সঠিক চিকিৎসা নিতে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, রোগীকে শুধু ওষুধ নয়, নিজের জীবনধারা নিয়ন্ত্রণ করতে শেখানোই চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধ্যপক ডা. ইকবাল আহমদ চৌধুরীর লেখা শিক্ষামূলক দুটি গাইড বই বিতরণ করা হয় ।