শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে অধিকাংশ সরকারি স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬:৩১ অপরাহ্ণ

সরকারের তরফে হুঁশিয়ারি দেওয়া হলেও সরকারি মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণায় বেশির ভাগ স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না।

সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা ইতোমধ্যে শুরু হলেও সোমবার থেকে বর্জনের ঘোষণা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করছেন ৭২১টি সরকারি মাধ্যমিকের শিক্ষকরা। ফলে অধিকাংশ সরকারি স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে।

এদিকে প্রাথমিক স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষাও সোমবার শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রাথমিকের শিক্ষকদের একাংশ বার্ষিক পরীক্ষা বর্জন করে কর্মবিরতি কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

চার দফা দাবিতে ‘বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি-বাসমাশিসের’ ব্যানারে আন্দোলনরত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বৃহস্পতি ও রোববার রাজধানীর ‘শিক্ষা ভবন’ চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি পালনের পর সোমবার থেকে কর্মবিরতি শুরুর ঘোষণা দেন।

তাদের চারটি দাবি হল-

১/ সহকারী শিক্ষক পদ নবম গ্রেডে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত ও দ্রুত সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করে গেজেট প্রকাশ।

২/ বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্যপদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন।

৩/ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ তিন কর্মদিবসের মধ্যে দেওয়া।

৪/ ২০১৫ সালের পূর্বের মত সহকারী শিক্ষকদের ২-৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ।

রাজধানীর সবুজবাগ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সিনিয়র শিক্ষক ও বাসমাশিসের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুস সালাম।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “চার দাবিতে মাউশি চত্বরে দুই দিন অবস্থান কর্মসূচি পালনের পরও আমাদের সঙ্গে সরকার বা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কেউ আলোচনা করেননি। তাই আমরা কর্মবিরতি শুরু করেছি। স্কুলগুলোতে বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত আছে।”

শেরপুরের সরকারি ভিক্টোরিয়া একাডেমিতেও বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্কুলটির সহকারী শিক্ষক আনিস রহমান।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের স্কুল কর্তৃপক্ষ গত রাতেই পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে নোটিস জারি করেছে।

“সহকারী শিক্ষকদের বছরের পর বছর বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমাদের দাবিগুলো মেনে নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত ও দ্রুত সময়ে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করতে সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।”

চট্টগ্রামের পটিয়ার আবদুর রহমান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্কুলটি সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ মাহফুজুল আলম।

এছাড়া ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কুষ্টিয়া জিলা স্কুল, রাজধানীর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, আজিমপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রামের হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলসহ বেশ কিছু সরকারি স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষার স্থগিত রেখে শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।

এদিকে দেশব্যাপী সরকারি ও বেসরকারি নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক এবং স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বার্ষিক, নির্বাচনি ও জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২০২৫ নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর-মাউশি।

সোমবার অধিদপ্তরের মাধ্যমিক শাখার পরিচালক অধ্যাপক খান মইনুদ্দিন আল মাহমুদ সোহেল স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বার্ষিক পরীক্ষা ২০ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর, এবং নির্বাচনি পরীক্ষা ২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে মাউশির পূর্ববর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে।

পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে ও নির্বিঘ্নে আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক উপপরিচালক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এবং সব বিদ্যালয়ের প্রধানদের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়।

আদেশে আরও বলা হয়, “পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা শিক্ষক বা কর্মকর্তার যে কোনো ধরনের শৈথিল্য বা অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বিধান অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিঠিটি সব জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও পাঠানো হয়েছে।”

বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রেখে কর্মবিরতিতে প্রাথমিকের শিক্ষকদের একাংশ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের একাংশ সোমবার শুরু হতে যাওয়া বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত রেখে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন।

‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ কয়েক দিন আগে দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দাবিতে তারা আন্দোলন করে আসছেন। পরে একাদশ গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে কর্মসূচি স্থগিত করেন।

নোয়াখালী সদর উপজেলার ত্রিপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালনের তথ্য দিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক এবং ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ।

তিনি বলেন, “অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাস অনুযায়ী তিন দফা দাবির মধ্যে একাদশ গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি ও অন্যান্য দাবি বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করছি।”

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আপাতত একাদশ গ্রেডসহ তিন দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পূর্ণদিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আমরা সে কর্মবিরতিতে অটল আছি, বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত আছে।”

ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার চাঁনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও কর্মবিরতি পালন করেছেন বলে জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষক ও পরিষদের আরেক আহ্বাবায়ক মো. আবুল কাসেম।

এছাড়া সুনামগঞ্জে জামালগঞ্জ উপজেলার ২০ নং শরীফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বরগুনার আমতলী উপজেলার পূর্য চওড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী সদর উপজেলার বাজারঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝালকাঠির নলছিটি উপর যারা পূর্ব কুলকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা পরীক্ষা বর্জন করে কর্মবিরতি পালন করছেন।

তবে, গ্রেড ও পদোন্নতি নিয়ে জটিলতা নিরসনের তিন দাবি পূরণে মঙ্গলবার থেকে ‘তিন দিনের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি’ পালন করে রোববার থেকে ক্লাসে ফিরেছেন প্রাথমিকের শিক্ষকদের বারোটি সংগঠনের মোর্চা ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ অনুসারীরা; তারা বার্ষিক পরীক্ষা নিচ্ছেন।

এ মোর্চাভুক্ত সংগঠন ‘বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের’ সভাপতি শাহীনুর আল আমিন বলেন, “আমরা তিনদিন লাগাতার কর্মবিরতি পালন শেষে গতকাল ক্লাসে ফিরেছি। আজ থেকে বার্ষিক পরীক্ষা শুরু হয়েছে, আমরা বাচ্চাদের জিম্মি করে কোনো কর্মসূচি নেব না।”

ঢাকার কেরানীগঞ্জের বাঘাসুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বার্ষিক পরীক্ষা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্কুলটির এই শিক্ষক।

তিনি বলেন, “১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ করে আমরা ১১ ডিসেম্বর থেকে অনশন কর্মসূচি শুরু করব।”

এদিকে ঠিকমত বার্ষিক পরীক্ষা না নিলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

রোববার অধিদপ্তরের এক আদেশে বলা হয়েছে, “এই পরীক্ষা গ্রহণে কোনো প্রকার শৈথিল্য বা অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

‘বিনা ব্যর্থতায়’ নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পাদন করতে ওই আদেশে সবাইকে নির্দেশনা দেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

সূত্র : বিডিনিউজ

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh