হাসিনা পরিবার সংশ্লিষ্ট ৫ স্থাপনার নাম পরিবর্তনের দাবি ডাকসুর

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭:২৫ অপরাহ্ণ

শেখ হাসিনা পরিবারের নামে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি স্থাপনার নাম বদলানোর দাবিতে উপাচার্য দপ্তরের মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ডাকসু নেতারা। রোববার (২১ ডিসেম্বর) বেলা পৌনে ৩টার দিকে চলা এ কর্মসূচিতে তাদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

‘ফ্যাসিবাদের আইকন, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ফ্যাসিবাদের ঠিকানা, এই মাটিতে হবে না’, ‘আছে যত ফ্যাসিবাদ, করতে হবে উৎখাত’, ‘দাবি মোদের পরিষ্কার, করতে হবে বহিষ্কার’, ‘ফ্যাসিজমের ঠিকানা, এই মাটিতে হবে না’, ‘জঙ্গি লীগের ঠিকানা, এ বাংলায় হবে না’, ‘বাকশালের জনক কে, শেখ মুজিব-শেখ মুজিব’ ইত্যাদি স্লোগানে প্রকম্পিত হয় উপাচার্য দপ্তর।

তারা অভ্যুত্থানে বিরোধিতাকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন।

নাম বদলানোর দাবি জানানো স্থাপনাগুলো হচ্ছে—শেখ মুজিবুর রহমান হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, শেখ রাসেল টাওয়ার, বঙ্গবন্ধু টাওয়ার ও সুলতানা কামাল হোস্টেল। হল দুটির মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান হলকে ‘শহীদ ওসমান হাদি হল’ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলকে ‘বীরপ্রতীক সিতারা বেগম হল’ নামকরণের পক্ষে মত দেন দেন বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভে শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক মিফতাহুল জান্নাত রিফাত বলেন, আমার হলের মেয়েদের অধিকাংশের আকাঙ্ক্ষা আজকে আমি এখানে বলার জন্য এসেছি। যেহেতু তারা আমাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আমার হলের মেয়েদের আকাঙ্ক্ষা ছিল, যেই মুক্তিযুদ্ধকে যেই বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসকে সবসময় পুরুষতান্ত্রিক লেন্সে দেখা হয়। সেই জায়গা থেকে একজন নারী মুক্তিযোদ্ধাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি মেয়েদের হলের নামের মধ্যে আমার হলের নামে যেন স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই জন্য আমার হলের বেশিরভাগ মেয়েদের ম্যান্ডেট বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন সিতারা বেগমের নামে আমাদের হলের নতুন নামকরণ করার পক্ষে।

ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম বলেন, আমরা আজকে দুটি দাবি নিয়ে এখানে এসেছি। আমাদের প্রথম দাবি হলো, ফ্যাসিবাদের আইকনদের নাম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ে যতগুলো স্থাপনা আছে, সকল স্থাপনার নাম অনতিবিলম্বে পরিবর্তন করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়েছি। আইকনদের নামে ক্যাম্পাসে পাঁচটি স্থাপনা আছে। শেখ মুজিব হলের নামের প্রস্তাবনা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এসেছে—আমাদের জুলাইয়ের সহযোদ্ধা আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যিনি সবসময় সংগ্রাম জারি রেখে গেছেন, শহীদ ওসমান হাদির নামে। এরপর ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের নাম প্রস্তাবনা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এসেছে বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন সিতারা বেগম হল হিসেবে। আমরা এই দুই হলের নাম পরিবর্তনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেব।

এছাড়া শেখ রাসেল টাওয়ার, বঙ্গবন্ধু টাওয়ার ও সুলতানা কামাল হোস্টেলের নাম পরিবর্তনের দাবি জানান তিনি।

জুলাই অভ্যুত্থানে বিরোধিতাকারী শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিচারের দাবি জানিয়ে সাদিক কায়েম বলেন, ফ্যাসিবাদের দোসররা এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে বসে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত করছে। আমরা আর কোনো ছাড় দেব না। আমরা ইতিমধ্যে আমাদের ভাই শহীদ ওসমান হাদিকে হারিয়েছি। এভাবে দোসররা এই বিশ্ববিদ্যালয় বসে বিভিন্ন দলের ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত করছে। রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করছে। জুলাই বিপ্লবীদেরকে হত্যাযজ্ঞ করছে। তাদেরকে আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

বিক্ষোভ শেষে পাঁচ স্থাপনার নাম বদলানো এবং ‘ফ্যাসিবাদী’ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সাইমা হক বিদিশার কাছে স্মারকলিপি দেন ডাকসু নেতারা।

এর আগে শনিবার রাতে ক্রেইন এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলের নামফলক মুছে দিয়ে ‘শহীদ ওসমান হাদি হল’ লেখেন হল সংসদের নেতারা। একইসঙ্গে সেখানে থাকা বঙ্গবন্ধুর দুটি প্রতিকৃতি মুছে দেওয়া হয়।

সেদিন ডাকসুর তরফে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলকে ‘ফেলানী খাতুন হল’ নামকরণ করতে চাইলে দ্বিমত পোষণ করেন সেই হল সংসদসহ সেখানকার শিক্ষার্থীরা।

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh