১২টি দেশের মানবাধিকার কর্মিদের অংশগ্রহনে লন্ডনে জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা

স্বদেশ বিদেশ ডট কম

  • প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২:৩২ অপরাহ্ণ


১৫ আগস্ট ২০২৫ বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ইষ্টলন্ডনের ইস্টহ্যামের একটি রেষ্টেুরেন্টে প্রবাসী ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের আয়োজনে বিশ্বের ১২টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার প্রতিনিধিদের অংশ গ্রহনে জাতীয় শোকদিবসের আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বার্কিং এন্ড ডাগেনহ্যাম কাউন্সিলের সাবেক মেয়র কাউন্সিলার মঈন কাদরীর সঞ্চালনায় স্থানীয় সময় সকাল দশ ঘটিকায় শোক সভায় উপস্থিত ছিলেন বিপুল সংখ্যক প্রবাসী ব্রিটিশ বাংলাদেশি এবং ১২টি দেশের মানবাধিকার কর্মী ও গবেষকরা। সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ইতিহাস, বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং বর্তমান বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট।

শোকসভায় অংশগ্রহণকারী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা হলেন লুসিয়া মোরেলি আন্দ্রেয়া ফ্রাঙ্কো-ইতালী, রিচার্ড জন ড্যানিয়েল নিকোলস ফ্রান্স, রেনাটো লোপেজ, মিশেল গার্সিয়া পর্তুগাল, সালি রিচার্ডস, জেমস উইলকো যুক্তরাজ্য, হেলেন ম্যাকডোনাল্ড, অ্যালেক্স রবি কানাডা, এমিলি ব্রাউন, জ্যাকসন ফিলিপস অষ্ট্রেলিয়া, এম. কে. পাশা, করিম জাভেদ পাকিস্তান, বালাসু ব্রামানিয়াম মার্ভিন হেনরি শ্রীলংকা, কেনি আদেবাম্বো আমিনা ইয়াকুব নাইজেরিয়া, পাস্টর সুলাইমান জোসেফা আউডা ঘানা, অ্যাঞ্জেলিনা রামিরেজ, এডওয়ার্ডো সান্তোস ব্রাজিল।

প্রবাসী ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের মধ্যে শোক দিবসের আলোচনায় অংশগ্রহনকারীরা শব্বির আহমেদ, মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুর রব মিন্টু, মোহাম্মদ কুদ্দুস আলম, আলেয়াউদ্দ ফারসি, নুরুজ্জামান খান, বালা সুব্রামানিয়াম, ময়নাত কবির, মাফলুল চৌধুরী, এস. এম. জিয়াউল কবির, জাকির হোসেন, কামাল দেওয়ান, মোহাম্মদ ওয়ালিদুল সরকার, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব কবির বিন আনোয়ার, সাংবাদিক গবেষক মতিয়ার চৌধুরী, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র সহিদ আলী, তৌসিফা আহমেদ, মুরশিদ উদ্দিন আহমেদ, শামসুল আজম, মিজানুর বারী, রিপন সাহিদ, মামুন আখন্দ, নজরুল কাজী, বিদ্যানুল আলম, রুবেল হোসেন, বিনাশ মন্ডল, কিটন মোহাম্মদ শিকদার প্রমুখ।
শোক সভায় প্রবাসী ব্রিটিশ বাংলাদেশীরা বলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের জাতির পিতা এবং বাংলাদেশের ফাউন্ডার। আমরা বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য বা সমর্থক নই। আমরা এখানে এসেছি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানাতে। বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশ হয়না। বর্তমান সরকার জাতির জনককে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলতে চাইছে। যে বাড়ী থেকে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন সেই বাড়িটি কয়েক জন উপদেষ্টার ইঙ্গিতে উগ্রবাদীরা বোল ডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে। আজও দেখেছি বঙ্গবন্ধুর বাড়ীতে ফুল নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন দেশের সাধারন মানুষ তাদের কাউকে বাড়ীতে প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। অথচ বাংলাদেশের পটপরিবর্তনের পর যখন দেখলাম জঙ্গিরা আইএস এর পতাকা হাতে উল্লাশ করে বাড়িটি ভাংছিল তখন কাছে থেকে সেনাবাহিনী নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এই বাড়িটির সাথে বাংলাদেশ জন্মের ইতিহাস জড়িত। বাড়িটি ছিল জাদুঘর। আমরা এর নিন্দা জানাই বিশ্ব সম্প্রদায় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন গুলোর দৃষ্টি কামনা করছি। শোক সভার শুরুতে একটি প্রমান্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কর্মীদের মন্তব্য তুলে ধরা হলো। ইতালিয়ান মানবাধিকার কর্মি লুসিয়া মোরেলি আন্দ্রেয়া ফ্রাঙ্কো বলেন “দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্রকে দুর্বল করার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড।”পাকিস্তানী মানবাধিকার কর্মি এম. কে. পাশা, করিম জাভেদ বলেন “বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ণ বিচার আন্তর্জাতিক মানদন্ডে নিশ্চিত করতে হবে।” শ্রীলঙ্কান মানবাধিকার কর্মি বালাসু ব্রামানিয়াম মার্ভিন হেনরি বালেন “বাংলাদেশের মতো আমাদের দেশেও সত্য উদঘাটন জরুরি।” নাইজেরিয়ান মানবাধিকার কর্মি কেনি আদেবাম্বো আমিনা ইয়াকুব বলেন “গণতন্ত্র ধ্বংসের কৌশল হিসেবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড আফ্রিকার স্বাধীনতাকামী নেতাদের হত্যার মতোই।” ঘানার মানবাধিকার কর্মি পাস্টর সুলাইমান, জোসেফা আউডা বলেন “আফ্রিকান ইউনিয়ন ও কমনওয়েলথ এর উচিত বাংলাদেশ বিষয়ে যৌথ পদক্ষেপ নেয়া।” তিনি বলেন বর্তমান বাংলাদেশের অন্তবর্তিকালীন সরকার দেশটিতে উগ্র জঙ্গিদের উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশে থেকে উগ্রবাদ সাউথ এশিয়ায় বিস্তার ঘটাবে, পাকিস্তানের মতো দেশ যেখানে জঙ্গিদের সরকার সহায়তা করে-বাংলাদেশও এখন জঙ্গি পৃষ্টপোষকায় পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হলো। ব্রাজিলিয়ান মানবাধিকার কর্শি অ্যাঞ্জেলিনা রামিরেজ, এডওয়ার্ডো সান্তোস বলেন “লাতিন আমেরিকার রাজনৈতিক হত্যার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যার অনেক সাদৃশ্য রয়েছে; একটি গ্লোবাল ট্রুথ অ্যান্ড জাস্টিস ফোরাম গঠন অপরিহার্য।”
ফ্রান্সের মানবাধিকার নেতা রিচার্ড জন ড্যানিয়েল নিকোলস বরলন “রাজনৈতিকহত্যাকান্ডকে আন্তর্জাতিক আইনে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা উচিত।” পর্তুগালের মানবাধিকর প্রতিনিধি রেনাটো লোপেজ, মিশেল গার্সিয়া বলেন “বঙ্গবন্ধু হত্যার সঠিক তথ্য বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছানো জরুরি।” যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার সংগঠক সাল রিচার্ডস জেমস উইলকো বলেন “আন্তর্জাতিক ভাবে বিচার নিশ্চিত করা মানবাধিকারের মূলধারা রক্ষা করবে।” কানাডিয়ান মানবাধিকার প্রতিনিধি হেলেন ম্যাকডোনাল্ড, অ্যালেক্স রবি বলেন “বিচারহীনতা গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় হুমকি। ” বাংলাদেশে এখন চালু হয়েছে বিচার হীনতার সংস্কৃতি সবচেয়ে অনিরাপদ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা প্রতিদিনিই দেশটিতে ঘটছে মবকিলিং এর ঘটনা । অস্ট্রেলিয়ান মানবাধিকার প্রতিনিধি এমিলি ব্রাউন, জ্যাকসন ফিলিপস বলেন “বঙ্গবন্ধু হত্যার সত্য উদঘাটন এবং ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা সকলের নৈতিক দায়।”

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিনিধরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, জোরপূর্বক গুম, সাংবাদিক দমন, রাজনৈতিক কর্মীদের হয়রানি উগ্রবাদের উত্থান নিয়ে উদবেগ প্রকাশ করেন। শোক সভায় অংশগ্রহনকারী মানবাধিকার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করার আহ্বান জানান।

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh