চীনের পণ্যে ১৩০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা ট্রাম্পের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক,

  • প্রকাশিত: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা আগের ৩০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মোট ১৩০ শতাংশ হবে।

এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ নভেম্বর থেকে বা তার আগেই। কয়েক মাসের শান্তিপূর্ণ বাণিজ্য বিরতির পর এটি দুই পরাশক্তির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের নতুন অধ্যায় সূচনা করল।

ট্রাম্প শুক্রবার বিকেলে তাঁর সামাজিক মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ পোস্ট করে বলেন, ‘আমেরিকা চীনের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।

পাশাপাশি, ১ নভেম্বর থেকে সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যারের ওপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণও কার্যকর করা হবে।’

বেইজিং সম্প্রতি দুর্লভ খনিজ পদার্থের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কঠোর করেছে, যা মোবাইল, কম্পিউটারসহ নানা ইলেকট্রনিক পণ্য তৈরিতে অপরিহার্য।

এর জবাবেই ট্রাম্প এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই কারণে তিনি চলতি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং-এর সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকও বাতিল করেছেন।

ট্রাম্পের ঘোষণার পর শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিটে বড় ধরনের ধস নামে। ডাউ জোন্স সূচক পড়ে যায় ৮৭৮ পয়েন্ট (১.৯%), এসঅ্যান্ডপি ৫০০ কমে ২.৭%, আর নাসডাক সূচক পড়ে ৩.৫%।

বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন, গত বসন্তের মতো এবারও মার্কিন বাজারে বড় ধাক্কা লাগতে পারে।

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন একে অপরের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। যদিও সম্প্রতি মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে চীনকে পেছনে ফেলেছে, তবুও আমেরিকা এখনো শত শত বিলিয়ন ডলারের পণ্য চীন থেকে আমদানি করে।

অন্যদিকে, চীনও আমেরিকাকে অন্যতম বড় রপ্তানি বাজার হিসেবে দেখে।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহ দিচ্ছেন। তবে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই মার্কিন কারখানায় বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঘোষণা করায়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প কিছুটা নরম অবস্থান নিয়েছিলেন।

এ বছরের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের পণ্যে সর্বনিম্ন ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিল, যা কার্যত একধরনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা ছিল। পরে ইলেকট্রনিকস পণ্যের ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে শুল্ক ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়, যাতে দেশীয় বাজারে অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।

মে মাসে দুই দেশই শুল্ক কিছুটা কমিয়ে আনে— চীন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক ১২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামায়,আর যুক্তরাষ্ট্র কমায় ১৪৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে। এর পর উভয় দেশের শেয়ারবাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, চীনের ‘বাণিজ্যিক শত্রুতামূলক আচরণ হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে।’ কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এর পেছনে দীর্ঘদিনের বিরোধই দায়ী।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর প্রযুক্তি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়, যার মধ্যে এনভিডিয়ার এআই চিপের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্যও ছিল। পরে কিছু সীমাবদ্ধতা শিথিল করা হয়।

এরপর ট্রাম্প প্রশাসন ঘোষণা দেয়, চীনা মালিকানাধীন জাহাজে পরিবহনকৃত পণ্যের ওপর ফি আরোপ করা হবে। চীন পাল্টা একই ব্যবস্থা নেয়, যা শুক্রবার থেকেই কার্যকর হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও মূল্যস্ফীতি ও ভোক্তা ব্যয়বৃদ্ধির ঝুঁকি তৈরি করবে। তাছাড়া, আগামী মাসে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে শুরু হতে যাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় ট্রাম্পের এককভাবে শুল্ক আরোপের ক্ষমতায় সীমা টানতে পারে।

অন্যদিকে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিন পিং-এর হাতে এমন কোনো বাধা নেই — ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্র: সিএনএন

এই সম্পর্কিত আরও খবর...

Developed by: Web Design & IT Company in Bangladesh